আমি ঠিক তিন দিন আগে পত্রিকায় লিখেছিলেম কারফিউ জারি করুন। বাংলাদেশে এ ছাড়া আর কোন ভাবে'ই সম্ভব না।
আজ আমি অবান্তর কিছু লিখবো। এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হয়ত নেই।
এরপরও লিখতে বসেছি।
আমার এখানকার ইউনিভার্সিটি অনেক আগে'ই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা ক্লাস নিচ্ছি বাসায় বসে। ভেবেছিলাম দেশে চলে যাবো।
দেশে থেকেও ক্লাস নেয়া সম্ভব। এরপর মনে হয়েছে, দেশে গেলে আমি হয়ত আমার পরিবার ও দেশের মানুষের মাঝে ভাইরাস'টি ছড়িয়ে দেব। শেষমেশ এই নিয়েও একটি লেখা লিখেছিলাম- যাতে ইউরোপ থেকে কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া না হয়।
আপনারা শুনেছেন ঠিক'ই, কিন্তু দেরি করে।
আমি যেদিন পত্রিকায় লিখলাম- কারফিউ জারি করুন; সেদিন অনেকে'ই আমাকে প্রশ্ন করেছে
-বাংলাদেশে অনেক মানুষ দিন আনে, দিন খায়। তারা বাঁচবে কি করে?
এইবার না হয় আমার অবান্তর ভাবনা টুকু আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করি।
মাস তিনেক আগে'ই আমি দেশে গিয়েছিলাম। এবার দেশে গিয়ে আমার যা মনে হয়েছে, সেটা বরং ব্যাখ্যা করে নেই।
পাড়ার মোড়ে ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছ থেকে ৫ টাকার ঝালমুড়ি কিনে খেয়েছি। খুব ভালো লেগেছে। এরপর আরও ৫ টাকার কিনে খেয়েছি। খাবার পর মনে হলো-আমার পেট পুরোপুরি ভরে গিয়েছে। সেই রাতে আমি ভাত খাইনি; এমনকি আর কিছু'ই খাইনি! অর্থাৎ ১০ টাকার ঝালমুড়ি খেয়ে'ই আমার পেট ভরে গিয়েছিল।
এবার আসি, আপনারা যারা বলছেন ১৫ দিন কারফিউ দিলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
আপনারা আসলে কি খেতে চাইছেন?
মাছ-মাংস, পোলাউ-কোর্মা?
ভাইরে পুরো পৃথিবী জুড়ে জরুরী অবস্থা চলছে। কারফিউর সময় দুই বেলা ১০ টাকার ঝালমুড়ি কিংবা শুধু মুড়ি খেয়ে থাকেন না, সমস্যা কোথায়? কিংবা এই টাইপ কিছু খেয়ে থাকুন। স্রেফ ১৫ দিনের কথা'ই তো বলা হচ্ছে।
এই টাকা তো এমনকি রাস্তার একজন ভিক্ষুকের পক্ষেও জোগাড় করা সম্ভব কিংবা আছেও। প্রতিদিন যদি ৩০ টাকা খরচ হয়, তাহলে সপ্তাহে কয় টাকা লাগছে?
মাত্র ২১০ টাকা। অর্থাৎ দুই সপ্তাহে ৪২০ টাকা। এখন আপনি'ই বলুন- বাংলাদেশে এমন মানুষ কয়জন আছে- যার কাছে এই পরিমাণ টাকা নেই?
এরপরও ধরে নিলাম অনেকের কাছে নেই। এখন তাদের আশপাশে নিশ্চয় এমন মানুষ আছে, যারা এই পরিমাণ টাকা অন্তত দিতে পারবে। কারন এটি তেমন কোন টাকা'ই নয়। একজন ভিক্ষুকও এর চাইতে বেশি টাকা আজকাল আয় করে।
অথচ আপনারা এসে প্রশ্ন করছেন
-এরা খাবে কি?
এই আপনারা'ই কি করছেন জানেন?
এইবার বলি আমার পরিচিত এক পরিবারের কথা। এরা বাংলাদেশে'ই থাকে। এই পরিবারের কর্তা, করোনা আতংকে বাজারে গিয়ে ৬০ কেজি চাল, ৩০ কেজি ডাল, ২০ কেজি পেঁয়াজ ইত্যাদি ইত্যাদি কিনে স্টক করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করলাম
-এতো কিছু কেন কিনেছেন?
-সতর্ক থাকা ভালো। 'করোনা' বলে কথা!
তো এই কর্তা মানুষ'টিকে আজ জিজ্ঞেস করলাম
-জুম্মা'র নামাজে গিয়েছেন আজ?
-হ্যাঁ গিয়েছি।
-আজ না গেলেই কি হতো না? যদি সেখানে কারো করোনা থেকে থাকে?
এইবার তিনি উত্তরে বলেছেন
-আরে যা হবার হবে। ব্যাপার নাহ!
আমি বললাম
-এটা অবশ্য'ই আপনার ব্যাপার। কিন্তু আপনি না গতকাল'ই বললেন আপনি অনেক সতর্ক করোনা নিয়ে?
এইবার আর তিনি কিছু বলছেন না।
এই হচ্ছে আমাদের সতর্কতা'র নমুনা। বাংলাদেশিদের দেখে মনে হচ্ছে- এরা করোনা নিয়ে পার্টি মুডে আছে। বাজার থেকে জিনিস পত্র কিনে বাসায় এরা পোলাউ-কোর্মা'র পার্টি করছে!
এরা'ই আবার এসে বলবে
-কারফিউ দিলে গরীব মানুষ খাবে কি?
অথচ এরা'ই বাজারের দাম'টা দিয়েছে বাড়িয়ে!
আমরা বাংলাদেশি'রা নিজেরা'ই জানি না কোন বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত আর কোন বিষয়ে না।
এখনও সময় আছে জরুরী অবস্থা জারি করে এইসব বাঙালিদের ঘরে ঢুকান। নইলে এইসব বাঙালি অমানুষ'ই থেকে যাবে।
মনে রাখবেন- মাত্র দেড় মাস আগে একজন মাত্র করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিলো ইতালি'তে। ইতালি'র লোকজন ভেবেছিল- এটা কিছু না। এরপর আরও কয়েকজন ধরা পড়ে। তখনও তারা ভেবেছে- এ আর এমনকি! বাদ বাকী ইতিহাস এখন সবার'ই জানা। দেশটি'তে এখন মৃত্যু'র মিছিল চলছে। স্পেনের অবস্থাও ঠিক এক'ই। স্পেনের অবস্থা এখন ইতালির মতো'ই কিংবা ইতালির চাইতেও খারাপ। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও তারা ভেবেছি- এটা ইতালি'র সমস্যা। ফান্সেও ঠিক তাই।
এখনও সময় আছে কারফিউ জারি করে মানুষ গুলো'কে ঘরে ঢুকান। নইলে একটা সময় পর- মৃত দেহ কবর দেয়ার মানুষ খুঁজে পাবেন না। রাস্তায় মৃত দেহ পড়ে থাকবে; কেউ সামনেও যাবে না। কারন- এতে তারাও আক্রান্ত হতে পারে।
এই রোগের কোন চিকিৎসা নেই; নেই কোন ভ্যাক্সিন। এক মাত্র উপায় হচ্ছে- রোগ'টা যাতে ছড়িয়ে না যায়। এই জন্য পৃথিবীর সব চাইতে উন্নত দেশ গুলো সব কিছু বন্ধ করে বসে আছে। ছড়িয়ে যাবার পর কিছু করে লাভ হবে না। পৃথিবীর সব চাইতে উন্নত এবং ধনী রাষ্ট্র ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স পারছে না; আপনারা পারবেন কি করে?
কাল থেকে'ই জরুরী অবস্থা জারি করুন। নইলে ভয়াবহ পরিণতি'র জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন!
(ফেসবুক থেকে)
লেখক: প্রবাসী শিক্ষক