'এই কঠিন সময়ে নতুন বিপদ তৈরি করবেন না'

'এই কঠিন সময়ে নতুন বিপদ তৈরি করবেন না'

শওগাত আলী সাগর

শুরু থেকেই আশঙ্কা করছিলাম। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে যাবে ভাবিনি। পত্রিকায় পড়লাম, বরিশালে একজন গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। প্রবাসী সন্দেহে তাকে পিটানো হয়েছে।

কেউ প্রবাসী হলেই কি তাকে পিটানো যায়? শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা যায়? সে প্রশ্ন অবান্তর।

আশীষ মন্ডল নামের এই ব্যক্তি শরিয়তপুর থেকে উজিরপুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কেবল মাত্র প্রবাসী সন্দেহে কিছু লোক তাকে ধরে পিটিয়েছে।

প্রবাসীদের ভিলেন বানানোর একটা প্রবণতা বেশ কদিন ধরেই চলছে।

ফেসবুকে প্রবাসীদের ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। প্রশাসন প্রবাসীদের বাড়ীতে স্টিকার লাগিয়ে, লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়ে তাদের চিহ্নিত করে দিচ্ছে। ভাবটা এমন যে এরা ভয়াবহ অপরাধী।

আমি অনেকবারই বলেছি, এই তৎপরতা প্রবাসীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। তার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এই প্রবণতা আস্তে আস্তে বাড়বে। প্রবাসীরা আরও আক্রান্ত হবে, বাংলাদেশে প্রবাসীদের জীবন আরো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেলো।

সাদুল্লাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একটি নির্দেশ ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি একজন প্রবাসীর তার বাবার নাম ধাম ঠিকানা উল্লেখ করে ওই এলাকায় লক ডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি একজন প্রবাসীর ‘করোনা ভাইরাসের লক্ষণ আছে’ ঘোষণা দিয়ে তার জন্য লকডাউন করা হলো বলে ঘোষণা কীভাবে দেন? আর এই ঘোষনায় ওই লোক, তার পরিবারের জন্য কতোটা নিরাপত্তাহীনতা, কতোটা ঝুঁকি তৈরি করলো সেটি কি তিনি একবারও ভাবেননি? বরিশালের ঘটনা যে সাদুল্লাপুরে ঘটবে না- তার নিশ্চয়তা কি?

যে সচিব আমেরিকা থেকে ফিরেই অফিস করতে শুরু করেছেন, বালিতে ট্যুর শেষ করে চিকিৎসকদের যে দলটি একদিনও ঘরে না থেকে হাসপাতালে, ক্লিনিকে চলে গেছেন, যে ব্যবসায়ীটি, রাজনীতিক বিদেশ থেকে ফিরে একদিনও কোয়ারেন্টিনে থাকেননি, বিজনেস ক্লাসে দেশে আসা এলিট প্রবাসীদের ব্যাপারে কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না।

আপনাদের অনুরোধ করি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের এই কঠিন সময়ে নতুন বিপদ তৈরি করবেন না। দোহাই লাগে, বাংলাদেশের প্রবাসীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবেন না।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, নতুন দেশ ডটকম

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল