আমাদের আছে বিশ্বের সেরা ডাক্তার!

আমাদের আছে বিশ্বের সেরা ডাক্তার!

রাবেয়া বশরা

ইতালিতে করোনা ভাইরাস দুর্যোগ মোকাবেলায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে কিউবান ডাক্তারদের একটি দল গিয়েছে, সাথে পর্যাপ্ত ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে। দলটির নেতা একজন সিনিয়র ডাক্তার ইতালিতে নেমেই টিভিতে বলছিলেন, দেখুন আমরা কোনো সুপারহিরো না, তবে এটুকু বলতে পারি আমরা বিশ্বের সেরা ডাক্তারদের মধ্যে কয়েকজন। বলার সময় ডাক্তারটির চোখেমুখে আত্মবিশ্বাস দেখে আমি রীতিমত চমকে যাই। এতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে কীভাবে বলছেন উনি- তারা বিশ্বের সেরা ডাক্তারদের মধ্যে কয়েজন।

শুরু করলাম কিউবা নিয়ে ঘাটাঘাটি। যা জানলাম তাজ্জব হয়ে যাওয়ার মতো। বিশ্বের মধ্যে মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি ডাক্তার কিউবাতে!! মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে কিউবান ডাক্তার কার্লোস ফিনলের দেওয়া দিক নির্দেশনা মেনেই এখনো চিকিৎসা করছে বিশ্ব। বলে রাখা ভালো, যুদ্ধের চেয়েও পৃথিবীতে বেশি মানুষ মারা যায় মশা বাহিত রোগে।

আশ্চর্য ব্যাপার কি জানেন? কিউবা নিয়ে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি দেখলাম, কোথাও কোন ডকুমেন্টারিতে বিএমডাব্লিউ, মার্সিডিজ চোখে পড়েনি। তেমন কোনো পাঁচ তারকা হোটেলও নেই!! অথচ আছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডাক্তার। আছে পর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ। ৭০ শতাংশ এর উপরে শিক্ষার হার।

এই চিকিৎসা আর শিক্ষার খরচ নিয়ে ভাবতে হয় না তাদের নাগরিকদের। কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল নেই, ফলে ডাক্তারদের কসাই বলে গালাগালিরও সুযোগ নেই। আমার মনে হয় কি জানেন? এই করোনা ভাইরাস আমাদের প্রয়োজনীয়তা আর বিলাসিতার মাঝে একটা সীমারেখা টেনে দিয়েছে।

কেউ বলছে না আমাদের পর্যাপ্ত পারমাণবিক বোমা আছে, শক্তিশালী মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম আছে। চিন্তা করবেন না আমরা করোনা ঠেকিয়ে দেব। সবার এখন একটাই কথা, আমাদের পর্যপ্ত PPE নাই, হাসপাতালে বেড নাই, ডাক্তার সংকট। ওষুধ লাগবে, আরও ভ্যান্টিলেশন সিস্টেম, আরও আইসিইউ ফ্যাসিলিটি লাগবে।

সবাই বলছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে চিন্তার কিছু নাই। কেউ বলছে না পর্যাপ্ত আইফোন মজুদ আছে, যথেষ্ট মেকআপ বক্স হাতে আছে চিন্তা করবেন না।

মানে কী দাঁড়াল? আইফোন, মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউ আসলে এসব আমাদের প্রয়োজন নয় বিলাসিতা। দিনশেষে খাবারের জন্য আমাদেরকে ওই কৃষকের কাছে ফিরতে হয়।

জ্বর সর্দি কাশির জন্য ডাক্তাদের কাছে, আর পিঠের ছাল তুলে অমানুষ থেকে মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষকের কাছে। মৌলিক এসব বিষয়গুলোর দিকে নজর না দিয়ে যতই উন্নত হই না কেন, দিনশেষে ইতালির মতো উন্নত দেশও হাত পাততে হবে কিউবার মতো মধ্যমসারির দেশের কাছে।

যারা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে পড়ে ধুঁকছে বছরের পর বছর ধরে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও বঙ্গবন্ধু কিউবার কাছে পাট বিক্রি করেছিলেন বলে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেয় আমেরিকা। ফলে বাংলাদেশকে পড়তে হয়েছিল দুর্ভিক্ষের কবলে। এমন তীব্র নিষেধাজ্ঞার মুখেও দেশটি নিশ্চিত করেছে নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা।

তাঁরা হয়তো বলতে পারে না আমাদের জিডিপি হু হু করে বাড়ছে, আমাদের দেশে মার্সিডিজ, বিএমডাব্লিউ বাড়ছে। কিন্তু এই দুর্যোগকালীন সময়েও গর্ব করে বলতে পারে, আমাদের আছে বিশ্বের সেরা ডাক্তার!

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর