ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবী একেকটা ভাইরাস

ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবী একেকটা ভাইরাস

আমিনুল ইসলাম

সৌদি প্রবাসী এক লোকের বাসা গ্রামবাসী ভেঙে দিয়েছে মনের আনন্দে! ঘটনাটি ঘটেছে নারায়ণগঞ্জের এক গ্রামে।

এদিকে সুনামগঞ্জের এক চেয়ারম্যান করোনায় গরীব মানুষদের জন্য দেওয়া সরকারি রিলিফের সামগ্রী নিজেই মেরে দিয়েছেন!

মেরে দিয়েছেন ভালো কথা; সেই খবর ছাপানোর অপরাধে স্থানীয় সাংবাদিককে উল্টো নাজেহাল করেছেন এই চেয়ারম্যান!

ভাবখানা এমন- রিলিফের মাল তো আমারই! আমি মারব না তো কে মারবে? এইটা নিয়ে এতো বাড়াবাড়ির কী আছে!

এদিকে খোদ ঢাকাতে এক পরিবারের বয়স্ক একজন মানুষ মারা গিয়েছে। ওই ভদ্রলোক এমনি এমনি মোরে গেলেন নাকি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেল, সেটা তো অনেক পরের কথা। মৃত্যুর পর তার আপনজনরা তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কবর দিয়ে বেঁচে গিয়েছে!

কেন, করোনা ভাইরাস হয়ে কেউ যদি মোরেও যায়; তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কবর দিতে হবে কেন?

তার অপরাধটা কী ছিল? কিংবা তার পরিবারের অপরাধটাই বা কী?

এই হচ্ছে আমাদের সমাজ এবং রাষ্ট্রের অবস্থা।

এদিকে পর্তুগালের মতো ইউরোপের দেশে অবৈধভাবে থাকা সকল অভিবাসীর দেশটির সরকার বৈধ করে নিচ্ছে। শয়ে শয়ে বাংলাদেশিও আছে এর মাঝে।

কেন নিয়েছে জানেন?

কারণ কোনো রকম কাগজপত্র না থাকলে এই মানুষগুলো চিকিৎসা সেবা পাবে না। এরা যাতে করোনা ভাইরাসের এই কঠিন সময়ে সবাই চিকিৎসা পায়, এই জন্য পর্তুগালের সরকার এদের সবাইকে বৈধ করে নেবার ঘোষণা দিয়েছে।

আর আমরা?

কেউ সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে, তার চিকিৎসাই দিচ্ছি না। উল্টো সে মোরে গেলে, তাকে লুকিয়ে কবর দিতে হচ্ছে! কবর দিতেও হাজারো ঝামেলা হচ্ছে।

ও হ্যাঁ! এরা কিন্তু কেউ অবৈধ নাগরিক না! এরা এই দেশেরই নাগরিক!

আজ জানতে পারলাম অস্ট্রেলিয়ার ফোর এবং ফাইভ স্টার হোটেলগুলো, সেই দেশটিতে থাকা হোমলেস মানুষ, অর্থাৎ যাদের ঘর-বাড়ি নেই; তাদেরকে এই করোনার সময় সেখানে থাকার জায়গা দেবে।

আর আমাদের বাংলাদেশে?

থাকতে জায়গা দেওয়া তো অনেক পরের ব্যাপার, রিলিফের খাদ্য পর্যন্ত স্থানীয় চেয়ারম্যান মেরে দিচ্ছে!

এদিকে এক বিজ্ঞ ডাক্তারকে বলতে শুনলাম- গরমের জন্য বাংলাদেশ করোনা ছড়িয়ে যেতে পারবে না!

আচ্ছা, কেউ কী আমাকে বলবেন থাইল্যান্ডের এই মুহূর্তের তাপমাত্রা কতো? কিংবা মালোয়েশিয়া-ফিলিপাইনে? অথবা দক্ষিণ আমেরিকার দেশ গুলোতে?

ওইসব দেশগুলোর তাপমাত্রা তো ৩০ ডিগ্রীর উপরেই আছে বলে মনে হচ্ছে! তাহলে সেখানে যদি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে খুব দ্রুত গতিতে; এমনকি সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব-আমিরাতেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে! তাহলে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস এসে তাপমাত্রার জন্য দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কেন? এই দেশে কেন একজন করোনা ভাইরাসের রোগীও পাওয়া যাচ্ছে না?

আচ্ছা, সৌদি প্রবাসী কেউ যদি ভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশে এসেও থাকে; সে ওই গরমের দেশ থেকে কি করে ভাইরাস নিয়ে আসল?

ও এইবার বুঝতে পেরেছি ব্যাপারটা!

করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে হাজির হয়ে নিজেই বুঝতে পেরেছে- এই দেশে মানুষ মারার জন্য ভাইরাসের নিজের কোনো কষ্ট করার দরকার নেই!

এই দেশের সাধারণ মানুষ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, চেয়ারম্যান, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এরা সবাই আসলে একেকটা ভাইরাস! সবাই মিলে সিস্টেমটাই এমন বানিয়ে রেখেছে- এখানে মানুষ বেঘোরে মারা যাবে এটাই স্বাভাবিক! কষ্ট করে করোনা ভাইরাসকে আর মানুষের শরীরে ঢুকে যমদূতের ভূমিকা পালন করতে হবে না।

কারণ আস্ত দেশটাই আসলে শয়ে -শয়ে, হাজারে-হাজারে, লাখ-লাখ ভাইরাসে সমৃদ্ধ একটা মৃত্যুপুরী!


(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর