দুর্যোগের সময় মনুষ্যত্বের পরিচয় দিলেন ড. যশোদা জীবন দেবনাথ

দুর্যোগের সময় মনুষ্যত্বের পরিচয় দিলেন ড. যশোদা জীবন দেবনাথ

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে যখন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত-মৃত্যু সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছিল।  তখনই এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সারা দেশে গণপরিবহন দোকানপাট সহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে দেয় সরকার। এতে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম দুর্যোগের মধ্যে পড়ে।

এই দুর্যোগে মোকাবেলায় এগিয়ে এসেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ড. যাশোদা জীবন দেবনাথ।

তিনি তার এলাকা ফরিদপুরের কর্মহীন অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন। পরে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ফরিদপুরে ডাক্তারদের জন্য পিপিই-মাস্কও পাঠিয়েছেন তিনি। ঢাকায়ও তিনি নিম্নআয়ের মানুষের সেবা দিতে বিভিন্ন সংগঠনে অনুদান করে যাচ্ছেন। এই দুর্যোগের সময় পাশে থাকায় তার এলাকার মানুষ তাকে উপাধি দিয়েছে  মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে।
মনুষ্যত্বের এই উজ্জল নক্ষত্র এখনও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

তার জন্মস্থান ফরিদপুরের চাঁদপুর ইউনিয়নে ইতোমধ্যে আগামী এক মাসের চাল মজুদ করে দিয়েছেন। ঘোষণা দিয়েছেন, সেখান থেকে ১০ টাকা মূল্যে সবাই চাল কিনতে পারেন। এমনকি হতদরিদ্র মানুষেরা বিনামূল্যে চাল সংগ্রহ করতে পারবেন। পাশাপাশি নিত্যকার তরিতরকারি কিনতে যা লাগবে সেই টাকাটিও তিনি বহন করছেন। একইভাবে তিনি কম্পিউটার সমিতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকার পথে পথে দরিদ্রদের জন্য খাবার যোগান দিচ্ছেন। কম্পিউটার সমিতির সদস্য হিসেবে তিনি করোনার কিট আবিষ্কারে কিভাবে ভূমিকা রাখবে এদেশিয় বৈজ্ঞানিকরা তারও উপায় বাতলানোর চেষ্টায় আছেন।

যশোদা জীবন ফাউন্ডেশন ইতোমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এক হাজার পিপিই দিয়েছেন। ফরিদপুরে ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আরও পিপিই বানানোর কাজ চলছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার ও সেবিকাদের জন্য এক হাজার পোষাক বিতরণ করেছেন। মাস্ক সরবরাহ করেছেন বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে। ঢাকায় কর্মজীবীদের মাস্ক সরবরাহ করেছেন আরও আগে। এসব কাজ এখনো চলমান-জানান ড.যশোদা জীবন ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী অমিত কুমার দাস।

টেলিভিশনে টক শো, সেলিব্রিটি শো আর মাইক্রোইকোনমির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনার কারণে সাম্প্রতিক বিশেষ আলোচনায় ড. যশোদা জীবন দেবনাথ। তিনি বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালক। এর চেয়েও তিনি অধিক পরিচিত টেকনোমিডিয়া লিমিটেড, মানি প্লান্ট লিঙ্ক ও প্রোটেকশন ওয়ান প্রাইভেট লিমিটেডের কারণে। আমরা যে এটিএম মেশিন (বুথ) ব্যবহার করি তার সিংহভাগ সরবরাহ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, করোনার এই দুর্যোগে ব্যাংকের টাকা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নিরাপদে নিয়ে যাবার জন্য তাঁর প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সুবিদিত।

এক সপ্তাহ আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনয় করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন, রাজেন্দ্রপুরে তাঁর একটি ইকো রিসোর্ট রয়েছে। যেটি দৃষ্টিনন্দন এবং পরিচ্ছন্ন। রোগীবান্ধব এই রিসোর্টটি তিনি কোয়ারেনটাইনের জন্য দান করতে চান। তিনি লিখেছিলেন-‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- গাজীপুর আমাদের "রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট লিঃ নামে একটি রিসোর্ট আছে। সেখানে ১০০ টির উপরে সুসজ্জিত রুম আছে। সরকার যদি ইচ্ছেপোষণ করেন বিনামূল্যে কোয়ারান্টাইন সেন্টারের জন্য রিসোর্ট দিতে প্রস্তত। ’

তিনি আরও লিখেছেন-‘ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমার বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি দান করেছিলাম একটি সরকারি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য। পাশাপাশি ফরিদপুরের গণমানুষের শ্রদ্ধেয় নেতা এমপি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এর নির্দেশক্রমে একটি পুলিশ ফাঁড়ি করেছিলাম। যা এখন খালি পরে আছে এবং আমার গ্রামে একটি বাড়ি রয়েছে। যার সবটাই ফরিদপুরবাসীর এই ক্রান্তিকালে কোয়ারেনটাইনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করতে চাই। ’

নিজের ইউনিয়ন ফরিদপুরের চাঁদপুর খুলেছেন সততা স্টোর। সেখানে প্রতিকেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। এ ব্যাপারে তিনি স্ট্যাটাস দিয়েছেন-‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে আজ আমি ফরিদপুর জেলার "চাঁদপুর ইউনিয়নে" (আমার নিজ গ্রাম) সততা_স্টোর নামে একটি চালের দোকান চালু করলাম। যেখানে শুধুমাত্র "চাঁদপুর ইউনিয়ন" বাসীর জন্য নামমাত্র ১০ টাকা মূল্যে পার কেজি চাল বিক্রি করা হবে।  

আমাদের সমাজে নিম্ন মধ্যবিত্তরাও চক্ষু লজ্জায় অনেক সময় মানুষের কাছে সহযোগিতা পেতে অসহায় বোধ করেন। অথচ তাদেরও সমস্যা রয়েছে! তাই নামমাত্র মূল্য পরিশোধে সকল শ্রেণীর লোক এই সহযোগিতা নিতে পারবে। আমি হয়তো অনেক পারবো না। অন্তত বাংলাদেশের একটি ইউনিয়নের মানুষের মুখে হাসি দেখতে চাই। আমি ধন্যবাদ দিতে চাই ছাত্রলীগের ছেলেরা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে সঠিক দায়িত্ব পালন করার জন্য। এখনই দুখী মানুষের পাশে থাকার শ্রেষ্ঠ সময়।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ড. যশোদা জীবন দেবনাথ সিআইপি লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মচারীর বেতন বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন। আমাদের জাতীয় ক্রিকেট টিম ৫০ শতাংশ বেতন ছেড়ে দিয়েছে। সরকার একা বা জাতীয় ক্রিকেট টিমের সহযোগিতাই শেষ নয়। আমাদের শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ভাইদের এই ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে আশার পালা। ’

ড. যশোদার এসব আর্তি আর চাওয়া ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। একটির পর একটি তিনি স্ট্যাটাস দিয়ে জনগণকে পাশে থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরাও চাই, যশোর জীবনের চাওয়াটুকু পূরণ হোক। এই ক্রান্তিকালে একে অপরের পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ুক।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল