দেশের কথা, দশের কথা ভেবে শরীর হিম হয়ে যায়

দেশের কথা, দশের কথা ভেবে শরীর হিম হয়ে যায়

এবিএম জাকিরুল হক টিটন

যারা ভাবছেন ইউরোপ, আমেরিকার মতো ভয়াবহ অবস্থা আমাদের দেশে তথা এশিয়াই কখনো হবে না। কিছু দিনের মধ্যেই দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। অফিস, আদালত, মার্কেট, দোকান, স্কুল-কলেজ, ইউনির্ভাসিটি সব কিছু খুলে যাবে। আবার আমরা হেসে খেলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে।

আমিও তাই চাই। কিন্তু বাস্তবতা একটু অন্যরকম। আমি যখনি দেখছি সারা দুনিয়ার বাস্তবতা, তখনি আপনারা আমাদের দেশে তেমন কিছু হবে না'র পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন। বলছেন - আমাদের দেশে তাপমাত্রা বেশি।

আমরা সারা বছর ফরমালিন যুক্ত ফলমূল খাই। আমরা ফার্মের মুরগীর মাংশ ও ডিমের সাথে পৃথিবীর সবচেয়ে হায়ার এ্যান্টিবাইটিক খাই। আমরা সাক-সবজির সাথে প্রতিদিন কীট নাশক খাই। আরো কত কী। অতএব, আমাদের বডি এন্টিবডি। এ বডিতে করোনা কিছুই করতে পারবে না।

গতকাল বৃষ্টি দেখে কিছু লোক বলার চেষ্টা করলেন আজ বৃষ্টিতে করোনা সব ভেসে যাবে। আপনাদের সব কথা, সব যুক্তি সত্যি হোক। আপনাদের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক। এই দেশটি রক্ষা পাক করোনা থেকে। কিন্তু আমি যখন যারা বিশ্বের করোনার আপডেট দেখি তখন আর আপনাদের সাথে কণ্ঠ মেলাতে পারি না। তখন দেশের কথা, দশের কথা ভেবে আমার শরীর হিম হয়ে যায়। তখনি আপনাদের করজোড়ে অনুরোধ করি ঘরে থাকুন। মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় যাবার দরকার নেই। আগে সবাই বেঁচে নেই। তারপর সব হবে। বেড়ানো হবে, আড্ডা হবে, প্রার্থনা হবে, অফিস হবে, পড়া হবে, পরীক্ষা হবে। মোট কথা সব হবে। কিন্তু তার আগে দেখতে হবে বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে। আর কতদিন আমাদের ঘর বন্দী থেকে করোনাকে বিদায় দিতে হবে। আপনিই নিচের তালিকার পরিসংখ্যান দেখে সিদ্ধান্ত নিন।

* যুক্তরাষ্ট্র

১লা জানুয়ারি - ১জন করোনা শনাক্ত।

১লা ফেব্রুয়ারি- ৭ জন শনাক্ত।

১লা মার্চ - ১,৯০,০০০ জন শনাক্ত।
*ইতালি

৩১ শে জানুয়ারি-২ জন করোনা শনাক্ত।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি - ১১০০জন শনাক্ত।

৩১শে মার্চ - ১,০৫,৮০০জন শনাক্ত।
*স্পেন

১লা ফেব্রুয়ারি - ১ জন করোনা শনাক্ত।

১লা মার্চ - ৮৪ জন শনাক্ত।

১লা এপ্রিল - ৯৬,০০০ জন শনাক্ত।
* যুক্তরাজ্য

১লা ফেব্রুয়ারি - ২ জন করোনা শনাক্ত।

১ লা মার্চ - ৩৬ জন শনাক্ত।

১লা এপ্রিল - ২৫,৫০০ জন শনাক্ত।
* জার্মানি

২৭শে জানুয়ারি - ১ জন করোনা শনাক্ত।

২৭শে ফেব্রুয়ারি- ৪৬ জন শনাক্ত।

২৭ শে মার্চ - ৫১,০০০ জন শনাক্ত।

৩১ শ মার্চ - ৭১,৮০০ জন শনাক্ত।
*ফ্রান্স

২৪ শে জানুয়ারি - ২ জন করোনা শনাক্ত।

২৪শে ফেব্রুয়ারি -১২ জন শনাক্ত।

২৪ শে মার্চ -২২,৬০০ জন শনাক্ত।
*ইন্ডিয়া

৩০ শে জানুয়ারি - ১ জন করোনা শনাক্ত।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি - ৩ জন শনাক্ত।

৩১ শে মার্চ - ১৪০০ জন শনাক্ত।
*পকিস্থান

২৬ শে ফেব্রুয়ারি - ২ জন করোনা শনাক্ত।

২৬ শে মার্চ - ১২০০ জন শনাক্ত।

৩১ শে মার্চ - ১৯০০ জন শনাক্ত।

আর বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। আজ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত বা আক্রান্তের সংখ্যা মোট ৬১ জন। এখন পর্যন্ত এক মাসও হয়নি। উপরে লক্ষ্য করুন বেশিভাগ দেশেই প্রথম একমাসে এত সংখ্যা হয়নি। কিন্তু উপরে লক্ষ্য করলে দেখবেন তৃতীয় মাসে বৃদ্ধির পরিমাণ কত ভয়াবহ। প্রায় সব দেশেই ২য় মাসের পর থেকে সকল দেশেই করোনা মহামারি আকারে বিস্তার লাভ করেছে।

তাই বলছি, দুই মাস পরে আমাদের কী অবস্থা দাঁড়াবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। এবং করোনা আমাদের এই প্রিয় স্বদেশে মহামারি আকারে বিস্তার করলে কি অবস্থা দাঁড়াবে তা আপনারা সকলেই অনুমান করতে পারেন। অমাদের একটু উদাসীনতা ও নিয়ম ভঙ্গের কারণে যদি দেশে করোনা মহামারি আকারে দেখা দেয় তখন ঘরে থেকে নিয়ম করেও লাভ হবে না। কারণ সময়ে এক ফোঁড়, অসময়ে দশ ফোঁড়।

তাই সময় থাকতে আরও একটু কষ্ট ও সংযম করে ঘরে থাকি। নিয়ম মেনে চলি। নিজে বাঁচি। পরিবার কে বাঁচায় তথা দেশ কে বাঁচায়। যেহেতু করোনা নিজে চলতে পারে না। সেহেতু আপনি যদি করোনাকে পরিবহন বা চলতে সহয়তা না করেন, তাহলে করোনা নির্মূল হতে বাধ্য। অতএব, ঘরে থাকাই করোনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর