দায়িত্বশীল ও মানবপ্রেমিক সরকার তো এমনি হতে হয়!

দায়িত্বশীল ও মানবপ্রেমিক সরকার তো এমনি হতে হয়!

শওগাত আলী সাগর

স্যুটকেস ভর্তি ডলার নিয়ে বিশ্বের নানা দেশের প্রতিনিধিরা চীনের ফ্যাক্টরিগুলোর দরোজায় দরোজায় ঘুরছে- এই তথ্যটা কূটনৈতিক চ্যানেলেই অটোয়ায় পৌঁছে গিয়েছিলো। নানা দেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত রিপোর্টগুলোকেও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেয় অটোয়া।

করোনা পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিচ্ছে তাতে চিকিৎসকদের সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে একটা সংকট তৈরি হবে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কানাডার রাজনৈতিক নেতৃত্বের।

ট্রুডোর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন- এই সংকট থেকে কানাডার স্বাস্থ্যকর্মীদের বাঁচাতে হবে।

নিজদেশে ‘মেইড ইন কানাডা’ চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রী নিশ্চিৎ করার পাশাপাশি উদ্যোগ নেন ‘মেইড ফর কানাডা’ চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রীর।

চীনের সঙ্গে নানা বিষয়ে কানাডার টানাপড়েন আছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া হয় চীনে। ডমিনিক বার্টন কূটনীতির অঙ্গনে নতুন।

কিন্তু অটোয়া বিবেচনায় নেয় তার ব্যাকগ্রাউন্ড, চীনের অর্থনীতির উপর তার পড়াশোনা। ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্মের পরিচালক হিসেবে চীনের ব্যবসায়ীদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আর সম্পর্কটাকে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়।

সাংহাইয়ে বিশাল একটি ওয়ারহাউজ ভাড়া করা হয়- যতোটা সম্ভব চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহ করে সেখানে জমা করার জন্য। রাষ্ট্রদূত ডমিনিকের দায়িত্ব হচ্ছে ফ্যাক্টরি থেকে সামগ্রীগুলো ওয়ারহাউজে আনা নিশ্চিত করা। পুরো দূতাবাসকে নিয়োগ করা হয় চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহে দেনদরবার করার জন্য।

কেবল দূতাবাসের উপর দায়িত্ব দিয়েই বসে থাকলো না অটোয়া প্রশাসন। চীনের চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবসা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান এবং যোগাযোগ আছে- এমন একটি বেসরকারি কনসাল্টিং ফার্মকেও নিয়োগ দিলো ট্রুডো সরকার। তাদের একটাই লক্ষ্য যে কোনো উপায়ে হউক চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

গত শনিবার কার্গোজেট বোঝাই চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে হ্যামিল্টনে নেমেছে। এটি আসলে কানাডার তৃতীয় সাপলাই। এর আগে এই মাসেই আরো দুই দফা সাপ্লাই এসেছে চীন থেকে। ট্রুডোর সরকার এখন আরো কয়েকটি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কার্গো চার্টারের চুক্তি করতে যাচ্ছে।

জাস্টিন ট্রুডোর ‘মেইড ইন কানাডা’ প্রজেক্টের আওতায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনও শুরু হয়েছে। ‘মেইড ফর কানাডা’ প্রজেক্টের আওতায় চীন থেকে আসছে মিলিয়ন মিলিয়ন চিকিৎসা সামগ্রী। কানাডার চীফ পাবলিক হেলথ অফিসার ড. থেরেসা ট্যাম বলেছিলেন- আমরা হয়তো প্রত্যেকটি মৃত্যু ঠেকাতে পারব না। কিন্তু প্রতিটি মৃত্যু ঠেকানোর চেষ্টায় আমাদের যেনো গাফিলতি না থাকে। ড. ট্যামের সেই সতর্কতা কিংবা বাণীকে বিবেচনায় নিয়েই জাস্টিন ট্রুডো ঘোষণা করেন তার ‘মেইড ইন কানাডা’ আর ‘মেইড ফর কানাডা’ প্রকল্প। যা এখন বাস্তবের মুখ দেখতে শুরু করেছে।

সত্যিকার অর্থে জনগণের যে সরকার, দায়িত্বশীল মানবপ্রেমিক যে সরকার, তাকে তো এমনি হতে হয়!

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুন দেশ ডটকম।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) 

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর