করোনা: জায়গা নেই ফিউনারেলে, নিউইয়র্কে গণকবর

নিউইয়র্কে বেওয়ারিশ লাশের গণকবরের দৃশ্য-

খবর ঠিকানার

করোনা: জায়গা নেই ফিউনারেলে, নিউইয়র্কে গণকবর

অনলাইন ডেস্ক

নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ভয়াবহ থাবায় বিপর্যস্ত পুরো বিশ্বে। দুর্বিসহ অবস্থা আমেরিকায়। আমেরিকার ৫০টি স্টেটেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরেও থামানো যাচ্ছে না করোনা ভাইরাসের ভয়ঙ্কর থাবা।

প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যু সংখ্যা বাড়েই চলছে। বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটি এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। চারিদিকে লাশের গন্ধ এবং অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। কোথাও যেন লাশ রাখার জায়গা নেই।
হাসপাতালগুলো থেকে ফোজেন ট্রাকে লাশ তোলা হচ্ছে। আবার ট্রাকে ট্রাকে লাশ গণকবরে নেয়া হচ্ছে এবং সারি সারি লাশ রেখে তা কবর দেয়া হচ্ছে। এমন দৃশ্য বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে।  

অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, আমেরিকার মত দেশে এমন দৃশ্য কল্পনাই করা যায় না। যুদ্ধ হলে একটি কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ ছাড়াই গণকবর! নিউইয়র্ক সিটির গভর্নর এন্ড্রু কুমোর তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত নিউইয়র্ক সিটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১০ হাজারের অধিক মানুষ। প্রতিদিন গড়ে ৭ শতাধিক মানুষ মারা যাচ্ছেন। গত ৭ এপ্রিল মারা গিয়েছে ৭৭৯ জন, ৮ এপ্রিল মারা গিয়েছে ৭৯৯ জন, ৯ এপ্রিল মারা গিয়েছে ৭৭৭ জন, ১০ এপ্রিল মারা গিয়েছে ৭৮৩ জন, ১১ এপ্রিল ৫৫৮ জন এবং ১২ এপ্রিল ৬৭১ জন। নিউইয়র্কে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, লাশ নেয়ার মানুষও পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে অনেকেই লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা প্রমাণ করেছে কেউ কারো জন্য নয়, সবাই যেন যার যার জন্য। সবাই নিজের জীবন বাঁচাতেই ব্যস্ত। তা নাহলে লাশ নেয়ার মানুষ থাকবে না কেন? আমেরিকায় বা নিউইয়র্কে যারা হোমলেস তাদের হয়ত আত্মীয়- স্বজন নাও পাওয়া যেতে পারে কিন্তু অন্যরা! তারা তো বাসা থেকেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। যারা বাসা থেকে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাদের আত্মীয়-স্বজন কোথায়? -এমন প্রশ্ন রেখেছেন অনেকেই। তারা বলেন, প্রাণের ভয়ে কেউ লাশের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না- যে কারণে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা বাড়ছে। আর এই সব বেওয়ারিশ লাশ গণকবরে সমাধিস্থ করা হচ্ছে।

আরেকটি সূত্রে জানা যায়, নিউইয়র্কের ফিউনারেল হোমগুলোতে লাশ রাখার জায়গা নেই। মুসলিম ফিউনারেলগুলোরও একই অবস্থা। লাশ ফিউনারেল হোমে নেয়ার জন্য এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরি সদস্য আজাদ বাকির মারা গিয়েছিলেন ৬ এপ্রিল কিন্তু তার দাফন হবে আগামী ১৪ এপ্রিল। ফিউনারেলেও যেন লাশের ট্রাফিক জ্যাম! জানাজার অবস্থা আরও করুণ। প্রথমে জানাজা পড়ানোর জন্য লোক পাওয়া যেত না। অবশ্য বাংলাদেশী ইমাম মুফতি ইসমাইল প্রথম থেকেই জানাজার ব্যাপারে সক্রিয় ছিলেন। তিনি দায়িত্ব নিয়েই সব কিছু করতেন। কিন্তু জানাজায় লোক সমাগম বলতে একবারেই নেই। পরিবারের লোক ছাড়া কেউ জানাজাতেও যেতে চায় না- এটাই বাস্তবতা।

নিউইয়র্কের বেওয়ারিশ লাশগুলোকে গণকবর দেয়া হচ্ছে লংআইল্যান্ডের হার্ট আইল্যান্ড। হার্ট আইল্যান্ডে থেকে গণকবর দেয়ার ছবি ড্রোনে ধারণ করা হয়েছে এবং সেই ছবি বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এই আইল্যান্ডে গত ১৫০ বছর ধরে শেষকৃত্য আয়োজনে অমদের মরদেহ সমাহিত করা হতো। গণকবরে সমাহিত অনেকেই করোনা ভাইরাসে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত এই কবর স্থানে সপ্তাহে একদিন সমাহিত করা হলেও করোনা মহামারি শুরুর পর সপ্তাহে পাঁচ দিনই এখানে সমাহিত করা হচ্ছে।

সাধারণত সেখানকার একটি কারাগারের কয়েদিরা সমাহিতের কাজ করলেও মহামারির সময়ে কাজের চাপ বাড়ায় চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের আনা হয়েছে।

সূত্র: ঠিকানা 

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল