তিনশ' বেড চলে এসেছে। প্রতিদিনই আসছে। প্রতিটি বেডের সঙ্গে গ্যাস ট্রলি, নেবুলাইজার মেশিন চালানোর জন্য লাগানো হচ্ছে পাওয়ার সকেট। পাশাপাশি চলছে ফ্লোরে পিভিসি কার্পেট বসানোর কাজ।
এসি লাগানোর কাজ আগেই শেষ। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বসানো হচ্ছে আড়াই হাজার কেভিএ'র সাবস্টেশন। তারও মালামাল চলে এসেছে। বাকি শুধু স্থাপন করে সংযোগ দেওয়া।আজ রবিবার আইসিসিবির এক্সপো ট্রেড সেন্টারে নির্মাণাধীন হাসপাতাল প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, অনেক কাজ দ্রুত শেষ হওয়ায় ১৫ দিন হয়তো লাগবেও না। ২৩ এপ্রিলের মধ্যেই আমরা হাসপাতালটি তৈরি করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি। তিনশ'র মতো বেড চলে এসেছে। প্রতিদিন দুইশ' করে বেড আসতে থাকবে। ফ্লোরের উপরে পিভিসি কার্পেট বসানোর পর ডক্টর চেম্বার, নার্স চেম্বার এগুলো লে-আউট করে ফার্নিচার বসানো শুরু করব। ২৩ তারিখের মধ্যে আমরা সব কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। সর্বোচ্চ দুই-একদিন বেশি লাগতে পারে। তবে আমরা পারব বলে আশাবাদী। সব ধরণের কাজ একসঙ্গে চলছে। ইলেক্ট্রিক্যাল লেইংয়ের কাজ চলছে। গ্যাস ট্রলি, নেবুলাইজার মেশিন চালানোর জন্য প্রতিটা বেডের সঙ্গে পাওয়ার সকেট, টু-পিন সকেট লাগানো হচ্ছে। সব মালামাল আমাদের সাইটে চলে এসেছে, এখন ফিটিং করতে যতটুকু সময় লাগে। আমাদের তো দিবা-রাত্রি কাজ চলছে।
তিনি বলেন, উহান দ্রুত বড় হাসপাতাল করেছে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতার কথা শুনছি। এখন আমরা নিজেরাই এটা করছি। এ নিয়ে জাতি হিসেবে আমরা অনেক গর্বিত যে, আমরাও পারি। তারা বানিয়েছে দুই হাজার বেড। আমরা ১০-১২ দিনে বানাচ্ছি সাড়ে তিন হাজার বেড। আইসিসিবিতে দুই হাজার বেড, একইসঙ্গে আরেকটি প্রকল্পে হচ্ছে দেড় হাজার বেড। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহে এখানে আড়াই হাজার কেভিএ নতুন সাবস্টেশন স্থাপন করতে হচ্ছে। এরইমধ্যে সাবস্টেশনের জেনারেটর, ট্রান্সফরমার সব সাইটে এসে গেছে। একহাজার কেভিএ'র জেনারেটর আছে। এখন শুধু ফিটিং আর কানেকশন হবে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ। এর মধ্যে মালামাল সংগ্রহ করা, কাজ করানোর জন্য জনবল সংগ্রহ করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যেমন রাত-দিন এখানে থেকে কাজ তদারকি করছি, আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক কাজের খোঁজ রাখছেন।
তিনি জানান, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এ ছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে হবে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)।
দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ের আগেই হাসপাতালটি দৃশ্যমান করতে চলছে নিরলস পরিশ্রম। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত নির্মাণকাজ তদারকি করছেন অধিদফতরের একাধিক প্রকৌশলী। সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করছেন বসুন্ধরার প্রকৌশলীরা।
উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।