পরিস্থিতি মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘টাকা ছেপে নাগরিকদের দিচ্ছে’!

পরিস্থিতি মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘টাকা ছেপে নাগরিকদের দিচ্ছে’!

শওগাত আলী সাগর

জাস্টিন ট্রুডোর কথাটাই মনে পড়লো। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুর দিকে তিনি নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন ‘আমরা বৃষ্টির দিনে ব্যয় করার জন্য দিনের পর দিন সঞ্চয় করেছি, উদ্ধৃত্ত অর্থ রেখেছি। আজ দেশে বৃষ্টি হচ্ছে, আমরা সেই সঞ্চয়, সেউ উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যয় করব। ’ তিনি তাই করছেন।

করোনা ভাইরাসের ফলে অর্থনীতির চাকা বন্ধ হয়ে যাবার পর তিনি সকল পেশার, সকল শেণির মানুষের হাতে যাতে প্রয়োজনীয় অর্থ থাকে সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন।

ঢাকার পত্রিকায় অর্থনীতিবিদ অভিজিত বিনায়ক বন্দোপধ্যায়ের একটা বক্তব্য পড়ে ট্রুডোর কথাটা নতুন করে মনে পড়ল। অর্থনীতিবিদ অভিজিত বলেছেন, ’টাকা ছাপাতে হবে, দরিদ্র মানুষের হাতে দিতে হবে। ’ তিনি এও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন টাকা ছাপছে।


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘টাকা ছেপে নাগরিকদের দিচ্ছে’ বা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে এই তথ্যটা এই প্রথম শুনলাম। এর আগে কোথাও এই তথ্য প্রকাশ পেয়ে থাকলে তা হয়তোবা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টাকা কোথায় পাচ্ছে’- এমন আলোচনায় ‘টাকা ছাপানোর’ তথ্যটা পাইনি।

কিন্তু টাকা ছাপিয়ে জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেয়াটা কি অর্থনীতির কোনো ভালো চর্চ্যা? অভিজিত নোবলে বিজয়ী। তার বক্তব্যের পাল্টা কোনো কথা বলার স্পর্ধা আমার নেই। কিন্তু অর্থনীতি ঠিক মতো পারফর্ম না করলে, গতি না থাকলে, কাগুজে নোট ছাপিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দিলে তাতে কি অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠে! গরিব মানুষ সচ্ছল হয়ে উঠে! উৎপাদন, সরবরাহ, যোগান- এইসব বিষয়গুলো আমরা বিবেচনায় নেবো না!

সাধারণভাবে আমরা জানি, সরকার যখন সংকটে পড়ে, ঋণ শোধ করতে পারে না, তখন তারা টাকা ছাপায়। অর্থনীতির গতি না বাড়িয়ে মানুষের হাতে টাকা ছেড়ে দিলে সেই টাকার মানও তো কমে যায়। এগুলো ’লে ম্যান’ আলোচনা। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদের নিশ্চয়ই আলাদা কোনো যুক্তি আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে অর্থনীতির ছাত্ররা আলোচনা করতে পারেন।

সারা বিশ্বেই করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিকে স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তারা এটিকে ‘হেলথ ইমার্জেন্সী’ ভাবছে। বাংলাদেশে এটি সেই অর্থে ‘হেলথ ইমার্জেন্সি’র গুরুত্ব পাচ্ছে না। বাংলাদেশের এটি হয়ে গেছে রিলিফের ব্যাপার। অভিজিতের কথায় এও মনে হচ্ছে তিনি স্বাস্থ্য সংকটটাকে বিবেচনায় নিতে চান না। ‘জীবন আর জীবিকার’ অগ্রাধিকারের আলোচনায় তিনি ‘আতংক’ দেখতে পান।

তিনি কেবল ‘পেটের’ তথা ‘ক্ষিধার’ আলোচনায়ই থাকতে চান। তিনি করোনাকে স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখতে চান না, তিনি দেখছেন ভাত কাপড়ের অর্থনীতি হিসেবে। কিন্তু জীবন বিহীন জীবিকা কিংবা স্বাস্থ্যহীন মানুষকে অঢেল খাবার দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা কি কোনো ভালো অর্থনীতির লক্ষ্য হতে পারে!

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুন দেশ ডটকম।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) 

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল