আইসিসিবি’র হাসপাতালে বসল ৭৫০ শয্যা
করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা

আইসিসিবি’র হাসপাতালে বসল ৭৫০ শয্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মাণাধীন দেশের বৃহত্তম করোনা আইসোলেশন সেন্টারে সাড়ে সাতশ’ শয্যা বসানো হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার আরও দুই শতাধিক শয্যা বসানোর জন্য দ্রুততার সঙ্গে চলছে কাজ। দুই দিন ঝড়-বৃষ্টির কারণে খোলা স্থানের কাজগুলো বাধাগ্রস্থ হওয়ায় আজ ওই কাজগুলোয় জোর দেওয়া হয়েছে। যে করেই হোক দ্রুততম সময়ে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শেষ করে চিকিৎসার জন্য সরকারকে হস্তান্তর করতে চান সংশ্লিষ্টরা।

 

উল্লেখ্য, কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

আজ আইসিসিবি’র নির্মাণাধীন হাসপাতাল প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবারেও জোর কদমে চলছে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। সাত-সকালেই হাজির হয়েছেন কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীরা।

ট্রেড সেন্টারের তিনটি ব্লকের একটিতে বেড ও রোগীর জিনিসপত্র রাখার জন্য ডেস্কগুলো বসানো হয়ে গেছে। সম্পন্ন হয়েছে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের কাজ। মাঝের ব্লকটি ফ্লোরম্যাট বসানোর জন্য পরিস্কার করা হয়েছে। বাকি ব্লকটিতে ফ্লোরম্যাট বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। এরপর আনা হবে বেডগুলো। এছাড়া দুই দিনের খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাবুর বাইরে টয়লেট তৈরির অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে লাগানো হয়েছে অতিরিক্ত শ্রমিক।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম আজ বলেন, দেশের মানুষ যাতে সঠিক সময়ে সেবা পায় সেজন্য আমরা সবাই খুব তৎপর। দুই দিন ঝড়-বৃষ্টির কারণে বাইরে কাজ করতে পারিনি। এজন্য আমরা একটু পিছিয়ে গেছি। তবে সবকিছুই সাইটে আছে। এখন শুধু বসাতে হবে। এ মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদী। ট্রেড সেন্টারে বেড সংখ্যা অনেক বেশি। এজন্য এই অংশটা আমরা একটু আগে ছেড়ে দিতে চাচ্ছি। আশা করছি দুয়েকদিনের মধ্যে এই অংশ শেষ করে ফেলতে পারব। আপনারা দেখেছেন ট্রেড সেন্টারে এক পাশে বেড বসানো হয়ে গেছে। অন্য অংশে ফ্লোর ম্যাট বসানো হচ্ছে। বেডগুলো এনে পাশে রেখেছি। ম্যাট বসলেই বেডগুলো বসিয়ে দেব।  

তিনি বলেন, অনেক বড় একটা কাজ। আমার কাছে প্রথমে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল যে, আমরা এটা পারব কিনা। কিন্তু, কাজটা যেহেতু মহৎ, সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা লক্ষ্য পূরণে অনেকদূর এগিয়ে গেছি। লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের বড় বাধা ছিল মালামাল ক্রয়। আমরা সেটা করে ফেলেছি। একহাজার বেড এখন সাইটে আছে যার অধিকাংশ বসানো হয়েছে। দুই দিনের মধ্যে বাকি বেড চলে আসবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা না ঘটলে দ্রুতই হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এ হাসপাতালের জন্য কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এ কাজে সফল হব।

আইসিসিবি’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, লকডাউন পরিস্থিতিতে মালামাল আনা, শ্রমিক আনা কঠিন ব্যাপার। তারপরও এই কয়দিনে হাসপাতালটির নির্মাণকাজ যে পর্যায়ে এসেছে তা সন্তোষজনক। ইতোমধ্যে ২ নম্বর হলে আড়াইশ’ ও ট্রেড সেন্টারে পাঁচশ’ বেড বসানো হয়ে গেছে। হাসপাতালটি দ্রুত নির্মাণে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাত-দিন কাজ করছে। আমরাও সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছি। তাদের কোনো সহযোগিতা লাগলে তাৎক্ষণিক সেটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করছি ২৭-২৮ তারিখের মধ্যেই হাসপাতালটি তৈরি হয়ে যাবে।

তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল