কিট তৈরির সক্ষমতা রয়েছে ঢাবির, সাড়া নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

কিট তৈরির সক্ষমতা রয়েছে ঢাবির, সাড়া নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

অনলাইন ডেস্ক

করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার এবং কিট উদ্ভাবনের সক্ষমতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আছে। এ ব্যাপারে গত ২৯ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হলেও আজও কোনো সাড়া পাননি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা৷ 

সরকার বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমর্থন এবং আর্থিক সহযোগিতা পেলে কিট উদ্ভাবন, ভাইরাস শনাক্তকরণে তারা প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান।  

তিন িবলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি৷ কিন্তু অফিসিয়ালি এখন পর্যন্ত কোনও সাড়া পাইনি৷ এখন যে কিট তৈরি করা হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়৷ পরবর্তী সময়ে কিটের সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ কিটের সংকট পূরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷

কমিটির সদস্য ও অধ্যাপক ড. মামুন  আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যা যা করার, তা আমরা করেছি৷ কিন্তু এসব কাজ সমন্বয় করতে হয় সরকারের সঙ্গে৷ এ বিষয়ে সমন্বয় করে কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বলেছি যে, আমরা সরকার বা দেশকে সহযোগিতা করতে চাই। আমাদের সহযোগিতা যদি সরকার না নিতে চায়, তাহলে আমরা কী করতে পারি?’ 

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে এই পরিস্থিতিতে সরকারকে কী কী সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি৷ এতে তিনটি বিষয় ছিল৷ যেমন প্রথম বলেছি, আমাদের যে পরীক্ষা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে তা আমরা ব্যবহার করতে চাই৷ দ্বিতীয় হচ্ছে, আমাদের টেকনিক্যাল ম্যানপাওয়ার এবং এ বিষয়ে এক্সপার্টরা রয়েছেন৷ এই টেস্টিং ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রে এক্সপার্টদের মাধ্যমে অন্যদের ট্রেনিং দেওয়ার মাধ্যমে সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা দিতে আমাদের এক্সপার্টরা প্রস্তুত রয়েছে৷ তৃতীয়ত, আমরা বলেছি স্বল্প খরচে প্রচুর পরিমাণে কিট প্রস্তুত করার দক্ষতা এবং যোগ্যতা আমাদের রয়েছে৷ সুতরাং সেটাও আমরা সরকারকে করে দিতে চাই৷ এরকম সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আমরা সরকারের কাছে দিয়েছি৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়ে তাদের সহযোগিতামূলক উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি৷ কিন্তু আজ এক মাসের মতো হয়ে গেলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনও রেসপন্সই পেলাম না৷ এই পরিস্থিতিতে অন্য কোনও দেশ হলে এসব উদ্যোগের জন্য বাহবা দিতো৷'

অধ্যাপক মামুন আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সাধারণ চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাসিলিটিজ তারা ব্যবহার করতে চায়৷ এরপর তৎক্ষণাৎ আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দ্রুত জানালাম যে, অবশ্যই এই সংকট কালে সরকার আমাদের থেকে যে ধরনের সহযোগিতা চাইবে তা আমরা করতে প্রস্তুত রয়েছি৷ কিন্তু এরপর এ বিষয়ে আর কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।

’ 

তবে এ বিষয়ে টেকনিক্যাল কমিটির একজন সদস্য হিসেবে সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা জাতির সংকট কালে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত৷’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কিট ইনোভেশন বা ডেভেলপমেন্ট এবং করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে, যা গবেষণার বিষয়৷ আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমরা তা করতে পারবো বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি৷ সরকার বা অন্য কেউ যদি সাপোর্ট করে, তাহলে আমাদের গবেষকরা সেটা করতে পারবে৷ আমাদের টেকনিক্যাল কমিটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রস্তাবনাও তৈরি করেছে৷ ভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য আমাদের ল্যাব তৈরি৷ অর্থাৎ আমরা সরকারকে আমাদের সক্ষমতা জানিয়েছি, কাজ করতে আমরা প্রস্তুত৷’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামীতেও এসব উদ্যোগের প্রয়োজন পড়বে৷ কারণ এটিই কেবল শেষ ভাইরাস না৷ এক্ষেত্রে গবেষণার ক্ষেত্র উন্মোচন করা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাড়ানো– এগুলো হয়তো করা লাগবে৷ এসব বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে৷ এসব বিষয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের পরিকল্পনা শেয়ার করেছেন৷ শুধু তাই নয়, আমরা করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হওয়ার পরের অবস্থা সম্পর্কেও ভাবছি৷ আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি ও গণতন্ত্রসহ আরও অনেক ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে৷ যা কমানোর জন্য জাতীয়ভাবে প্রস্তুতিও লাগবে৷ যদিও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কম, তারপরও এসব ক্ষেত্রে গবেষণার কোনও ঘাটতি নেই৷ সরকার বললেই আমরা সহযোগিতা করব৷ আমরা জাতির সংকট কালে অংশগ্রহণ করতে চাই৷

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর