গরুর দুধ ১৫ টাকা লিটার!
করোনার প্রভাব

গরুর দুধ ১৫ টাকা লিটার!

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

প্রাণ সংহারি করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে উপলকূলীয় জেলা বাগেরহাটের দুগ্ধ শিল্পে। যে কারণে দুধের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে পানির দামে দুধ বিক্রি করছেন জেলার ডেইরী ফার্ম খামারিরা। ৫০ থেকে ৬০ টাকা লিটারের দুধ বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কখনো আবার এ মূল্য গিয়ে ঠেকছে মাত্র ১৫ টাকায়।

এমন অবস্থায় দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে গরুর খাদ্য কিনতে পারছে না খামারিরা। আর এ কারণে জেলার কয়েক হাজার দুগ্ধ খামারির পরিবারে চলছে হাহাকার।

খামারিরা বলছেন- দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে জেলার ৩১ হাজার ডেইরী ফার্ম খামারিরা পথে বসবে।

বাগেরহাট প্রাণী সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, বাগেরহাট জেলায় ডেইরী ফামর্মের সংখ্যা ৩১ হাজার।

এর
মধ্যে একটি বা দুটি গাভী পালনের আয় দিয়ে বছর জুড়ে পরিবার চলে এজেলার কয়েক হাজার দুগ্ধ খামারি পরিবারের। এসব খামারের উৎপাদিত দুধ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা, গোপালগঞ্জ জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে এসব ডেইরী ফার্ম থেকে ২৫০টন দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বর্তমানে এসব জেলার সাথে একদিকে যেমন যোগাযোগ বন্ধ। অন্যদিকে
জেলার সব দধি মিষ্টির দোকানও বন্ধ থাকায় বাগেরহাটে উৎপাদিত দুধ এখন পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। দুধ বিক্রির সেই টাকা দিয়ে কেনা যাচ্ছেনা গো-খাদ্য। এমনই অবস্থায় দুই-চারটি গাভী পালনকারী ক্ষুদ্র দুগ্ধ খামারী পরিবারে চলছে হাহাকার।

বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের দুগ্ধ খামারি নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে দুধ বিক্রি করছি, যা দিয়ে গরুর খাবারও কিনতে পারছি না। দেশে এমন অবস্থা চলছে যে, গরু বিক্রিও করতে পারছি না।

একই ইউনিয়নের দুগ্ধ খামারী অঘর মন্ডল বলেন, লকডাউনের কারনে বাইরের জেলা থেকে কেউ দুধ নিতে আসতে পারছে না, তার উপর স্থানীয় মিষ্টি ও চায়ের দোকান গুলো বন্ধ থাকায় ১৫ টাকা কেজি দরেও দুধ বিক্রি করছি। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েও আধা কেজি, এক পোয়া করেও দুধ বিক্রি করছি।

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার দুগ্ধ খামারী শেফালি দাস বলেন, আমার বাড়িতে তিনটি গাভি আছে।
প্রতিদিন যে দুধ হয় তা দিয়ে গরুর খাবার কেনার পাশাপাশি আমার সংসারও ভালোভাবে চলে যেতে। করোনা ভাইরাসের পর থেকে দুধ বিক্রি এক প্রকার প্রায় বন্ধ। এ মুহূর্তে অধিকাংশ দিনই আমরা দুধ প্রতিবেশি বা আত্মিয়-স্বজনদের গিয়ে দিচ্ছি।

ফকিরহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র দুগ্ধশিল্প উদ্যোগতা ইতি চক্রবর্ত্তী বলেন, আমার নিজের খামারে বর্তমানে ৬টি গাভী আছে। আমি পরিবারের অন্য কাজের পাশাপাশি গাভী পালন করি একটু সচ্ছল ভাবে জিবন যাপন করার জন্য। এলাকায় গাভী পালনকারী নারীদের নিয়ে আমরা দুগ্ধ সমবায় সমিতি করেছি। বর্তমানে আমিসহ আমাদের সমিতির সবাই পানির দামে দুধ বিক্রি করছি। যা দিয়ে গরুর খাবার জোগাড় ও পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমার মতো হাজারো খামারি পরিবারে একই অবস্থা। এ অবস্থায় আমাদের টিকে থাকতে হলে জরুরিভাবে সরকারি সহয়তা প্রয়োজন।

বাগেরহাট জেলা দুগ্ধ মালিক সমবায় সমিতি সহসভাপতি মো. ফজলুল করিম বলেন, জেলায় গ্রাম ও প্রত্যান্ত অঞ্চলগুলোতে অনেক খামারি আছেন যারা একটা থেকে দুটি গাভী পালন করে। তারা মূলত দুধ বিক্রি করেই তাদের পরিবার পরিচালনা করে থাকেন। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বর্তমানে বাজারে দুধের কোন ক্রেতা নেই বললেই চলে। এক প্রকার পানির দামেই দুধ বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বাজার গুলোতে দোকান-পাট বন্ধ থাকায় গরুর খাবারও ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় সরকারি ভাবে জেলার দুগ্ধ খামারিদের সহযোগীতা না করা হলে জেলা দুগ্ধ শিল্প হুমকীর মুখে পরবে।

বাগেরহাট জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, বাগেরহাট জেলা একটি দুগ্ধ
প্রধান জেলা। এখানে ক্ষুদ্র,মাঝারি ও বড় আকারের কয়েক হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে। এ জেলা থেকে দুধ ও ছানা পার্শ্ববর্তী বরিশাল, পিরোজপুর, খুলনা ও গোপালগঞ্জ জেলাতে বিক্রি করতো খামারিরা। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে লকডাউনের কারণে এসব জেলার সাথে খামারিদের যোগাযোগ বন্ধ। এ কারনে জেলায় দুধের দাম অনেক কমে গেছে। আগে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় লিটার বিক্রি হলেও এখন ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমরা স্থানীয় ভাবে জনসাধারনদের দুধ খেতে উৎসাহিত করছি, যাতে দুধের চাহিদা বুদ্ধি পায়। এয়াড়া করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দুধের দামও স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তিনি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর