স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলেই হস্তান্তর আইসিসিবি'র হাসপাতাল
করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা

স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলেই হস্তান্তর আইসিসিবি'র হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্তের চিকিৎসায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মিত দেশের বৃহত্তম অস্থায়ী হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। সকল যন্ত্রপাতি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ পরীক্ষা করে আজকের মধ্যে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে বুঝিয়ে দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে সকল নথিপত্র। স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলেই হাসপাতালটি বুঝে নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে পারবে। আজ রবিবার দুপুরে এ নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আইসিসিবি’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন এ তথ্য জানান।

উল্লেখ্য, কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে ততদিন বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে আনঅফিসিয়ালি ৪ তারিখ উদ্বোধনের তারিখ দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।

আইসিসিবি ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রস্তুতি শতভাগ আছে। যতদূর জানি হাসপাতালটি চালু করতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জরুরি ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও পোস্টিংয়ের  চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত পরিচালক, সহকারি পরিচালক পর্যায়ের লোকজন আসতে দেখছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মী অর্থাৎ চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়দের এখনও দেখছি না। এ কারণে মনে হচ্ছে না আগামীকাল উদ্বোধন করতে পারবে। হাসপাতালের জন্য নিয়োগকৃত তাদের একজন পরিচালক শনিবার (২ মে) এখানে কিছু সময় অফিস করেছেন। হাসপাতাল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আজকের মধ্যেই হস্তান্তরের কাজটা সম্পন্ন করতে সব নথিপত্রও তৈরি করে রেখেছি। তারা চাইলেই হস্তান্তর করব।  

এদিকে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম বলেন, এত বেশি শয্যার হাসপাতাল বাংলাদেশে এই প্রথম চালু হচ্ছে। এখানে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা আছে। সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা আছে। প্রত্যেক চিকিৎসক চেম্বারে বসে প্রত্যেক রোগীকে মনিটরিং করতে পারবেন। প্রত্যেক ডিবি বোর্ডে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা আছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসকদের জীবানুমুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা আছে। মাত্র ২০ দিনের মধ্যে এত বড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা সত্যিই দারুণ একটি ব্যাপার। শুধু আমাদের দেশ না দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও এটা বড় একটা ঘটনা। এটা আমাদের সক্ষমতাকে তুলে ধরে। হাসপাতালটি বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমরা এক প্রকার বুঝেই নিয়েছি। এখন স্বাস্থ্য অধিদফতর চাইলেই বুঝিয়ে দেব। হাসপাতাল এখন রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।  

আগামীকাল (৪ মে) উদ্বোধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যা, উদ্বোধনের কথা হয়েছিল। বিষয়টা যেহেতু মন্ত্রণালয়ের, তাই ৪ তারিখেই উদ্বোধন হবে নাকি তারিখ পেছানো হবে সেটা মন্ত্রণালয়ই ভালো বলতে পারবে। আমরা যে কোন সময় বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুত। স্বাস্থ্য অধিদফতর যে পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে তিনি গতকাল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন। উনাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেব।   পাশাপাশি বসুন্ধরার কাছে সকল নথিপত্রের একটা কপি থাকবে। বসুন্ধরার কোন স্থাপনাগুলোতে আমরা কী কী কাজ করেছি তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য থাকবে তাতে।  

তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে হবে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)।

উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল