জামায়াত ত্যাগীদের নতুন দল ‌‘এবি পার্টি’

জামায়াত ত্যাগীদের নতুন দল ‌‘এবি পার্টি’

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘সংস্কারপন্থি’ নেতারা ‘মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার’ বাস্তবায়ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে গতকাল (শনিবার) সকালে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ নতুন দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (এবি পার্টি) নামের এই দলের আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামী থেকে পদত্যাগকারী নেতা এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীকে। তিনি সরকারের একজন সাবেক সচিব ছিলেন।

এতদিন ‘জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামের একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্মে থাকা নতুন এ দলের সদস্য সচিব ঘোষণা করা হয়েছে বহিষ্কৃত জামায়াত নেতা ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে। নতুন কমিটিতে মেজর (অব.) ডা. আবদুল ওহাব মিনার ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলামসহ সাতজনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক, ৯ জনকে সহকারী সদস্য সচিব করে ২২২ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম শেষ করে এবি পার্টি নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করবে বলে জানানো হয়েছে।

দেশে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মাঝে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণাকে সময় অনুপযোগী বলে আখ্যায়িত করে রাজনৈতিক মহল এদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করার পক্ষে মত দিয়েছেন।

তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি দাবিদার আওয়ামীমহল থেকে বলা হচ্ছে- এরা মূলত স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিরই একটি নবসংস্করণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। তাই এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ইসলামপন্থীদের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ বলেন, এরকম  মহামারী-দুর্যোগের সময় একটি রাজনৈতিক দল ঘোষণার মধ্যে কোনো তাৎপর্য নেই। তাদের ঘোষিত মতামত কীভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে তা একটা সময় পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেই রাজনীতিতে এদের ভূমিকা সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, দেশের সংবিধান মেনে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষার পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে করার অধিকার সকল নাগরিকেরই রয়েছে। তবে, বর্তমান সংকটকালে দেশের মানুষ রাজনীতি মাথা ঘামায় না। তাছাড়া, নতুন দলটির তৎপরতা কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া জনগণ বুঝতে পারবে না- এরা কী চায়।

তবে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা বলেছেন, যে নামেই আসক না কেন সংস্কারপন্থী জামায়াত হলেও তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষেই থাকবে। এদের ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

নতুন দল ঘোষণার সূচনা বক্তব্যে সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল একটি শোষণমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। যারা এটা মানেন না বা বিশ্বাস করেন না এবং এই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে রাষ্ট্রকে ভুল পথে নিয়ে এসেছেন তারা কেউ দেশের প্রকৃত বন্ধু নন।

আমরা মনে করি, একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় আমাদের জাতীয় ঐক্যের অন্যতম পাটাতন। এবি পার্টি এই পাটাতনকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দলের অবস্থান সম্পর্কে জামায়াতের সাবেক এই নেতা বলেন, আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধ ও পবিত্র ধর্ম নিয়ে বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি রাজনৈতিক অনৈক্য বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধকে স্বীয় সম্পত্তি বা একক অর্জন মনে করে অন্যদের সবার অবদানকে অস্বীকার করা এবং গড়পড়তা সবাইকে দেশবিরোধী ভাবা স্পষ্ট হটকারিতা ও স্বাধীনতার অঙ্গীকারের চরম লংঘন।

অনুরূপভাবে নিজেদের ধর্মের একমাত্র সোল এজেন্ট এবং বাকিদের পথভ্রষ্ট, নাস্তিক, বিপথগামী ও মুনাফেক ভাবা চরম অন্যায় ও অধার্মিকতা। এবি পার্টি ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।

মঞ্জু বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দেশাত্মবোধ ও দেশপ্রেম, ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সকল ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সমান আচরণ এবং সামাজিক সুবিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি আধুনিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠিত হলেই কেবল মানুষের মুক্তি মিলবে। এবি পার্টির প্রধান লক্ষ্য হল একটি জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।

এবি পার্টির আহ্বায়ক নিয়োজিত হয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর এই ক্রান্তিলগ্নে আমার ওপর এই গুরুদায়িত্ব আপনারা অর্পণ করেছেন। কর্মজীবনে দেশের কল্যাণে আমি সাধ্যমতো ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছি। দুর্নীতি ও লুটপাটের রাজনীতির পরিবর্তে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শামিল হয়ে জীবনের শেষ সময়টুকু আমি অতিবাহিত করতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন।

সোলায়মান চৌধুরী বলেন, দেশের যে কোনো নাগরিক আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, যে কোনো নাগরিক আমাদের গঠনমূলক কঠোর সমালোচনা করতে পারেন। তাদের সমালোচনা আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে এবং সামনে এগিয়ে চলার আলোকে আমাদেরকে পথ দেখিয়ে দেবে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আমি দেশবাসীকে শরিক হওয়ার আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমাদের এই উদ্যোগ সফল হবে আমি আশা করি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর