আইসিসিবি’র হাসপাতালে ২০০ চিকিৎসককে পদায়ন
করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা

আইসিসিবি’র হাসপাতালে ২০০ চিকিৎসককে পদায়ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মিত হাসপাতালে ২০০ চিকিৎসক পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আরও ২০০ চিকিৎসক পদায়নের প্রস্তুতি চলছে। চলছে নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া। এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ও হাসপাতাল উদ্বোধনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সকল কিছুই প্রক্রিয়াধীন। আজ রবিবার হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. এহসানুল হক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

উল্লেখ্য, কভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যত দিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে তত দিন বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। আর ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দিতে গত ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর (এইচইডি)।

হাসপাতালটি এখন চিকিৎসাসেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।

ডা. মো. এহসানুল হক বলেন, পদায়ন হওয়া ২০০ চিকিৎসকের মধ্যে থেকে ১৫ জন যোগদান করেছেন। আরও ২০০ চিকিৎসক পদায়ন হবে। ৩৯তম বিসিএস থেকে পর্যায়ক্রমে যোগদান করবে। প্রয়োজনে আরও চিকিৎসক পদায়ন হবে। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন আছে। নার্স এখনো পাইনি। এটার নিয়োগও প্রক্রিয়াধীন আছে। উদ্বোধনে বিলম্ব হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, জনবল নিয়োগ একটা বড় বিষয়। এটা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা তো কাজ করেই যাচ্ছি। হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে হাসপাতাল চালাতে আপনার কত জনবল প্রয়োজন এমন কোন চাহিদা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চাহিদা স্বাস্থ্য অধিদফতর ঠিক করবে। দুইবার উদ্বোধনের তারিখ দিয়েও পেঁছানোর কারণ কী- এমন প্রশ্নে বলেন, এ বিষয়টা আমার জানা নেই। এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। করোনা ঝুঁকির মধ্যে হাসপাতালের কার্যক্রম অনলাইনে অবহিত করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবেন।  

এদিকে হাসপাতালের কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হতে পারে এমন প্রশ্নে আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, উদ্বোধনের সময়টা একটু পিছিয়েছে। কারণ বাংলাদেশে একসঙ্গে এত বড় হাসপাতাল শুরু করার অভিজ্ঞতা কারও নেই। সব ধরণের লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া, এটাকে ইক্যুইপমেন্ট দিয়ে, ওষুধ দিয়ে, খাবার দিয়ে টিকিয়ে রাখার প্রস্তুতি আমাদের ছিল। কিন্তু ফাইন টিউনিং বলে একটা কথা আছে। মন্ত্রণালয় থেকেও চাইছে শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েই শুরু করতে। অল্প মানুষের বিষয় হলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেওয়া যায়। অনেক মানুষের ব্যাপার চলে আসলে একটা স্টান্ডার্ড প্রসিডিউরে কাজ করতে হয়। এ কারণে একটু দেরি হচ্ছে। হাসপাতালের আয়োজনে কোন ঘাটতি নেই। কভিড হাসপাতালের জন্য যা যা দরকার সব কিছুর ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আশা করছি আজ-কালের মধ্যেই হয়ত একটা তারিখ নির্ধারণ হয়ে যাবে।

উদ্বোধন কে করবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা তো আমরা বলতে পারব না। আশা করছি সরকার প্রধান হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন। যেহেতু এখানে অনেক মানুষকে সেবা দেওয়ার বিষয়, জনসম্পৃক্ত এই কার্যক্রমটি জনপ্রিয় নেত্রী হিসেবে আমাদের সরকার প্রধান উদ্বোধন করবেন এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে এবং একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেও আমি আহ্বান জানাই।
 
জসীম উদ্দিন বলেন, দু’য়েকবার তারিখ পরিবর্তন হওয়ায় জনমনে একটা বিরূপ ধারণা জন্ম নিতে পারে। মানুষ মনে করতে পারে রোগী যখন হু হু করে বাড়ছে তখন আরও আগে কেন হাসপাতালটি চালু হলো না। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি বলতে চাই, কভিড পরিস্থিতি নিয়েই আমাদের হয়ত অনেকদিন চলতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য মহামারীগুলো যেমন ছিল, কভিড কিন্তু তেমন নয়। এটা অনেক গভীরে চলে গেছে। এক-দুই মাসে এটা থেকে রেহাই পাব বলে মনে হচ্ছে না। এটাকে নিয়েই আমাদের জীবন ও জীবিকা একসঙ্গে চালাতে হবে। তাই মহামারি আকারে যতদিন কভিড-১৯ থাকবে ততদিন এই হাসপাতাল আমাদের প্রয়োজন হবে। এজন্য দুর্বল আকারে এটাকে আমরা তৈরি করিনি। উন্নতমানের সব সরঞ্জাম আনা হয়েছে, যাতে মানুষ ভালো সেবাটা পেতে পারে। পরিকল্পনা পর্যায়ে দু’য়েক দিন বিলম্ব তেমন কিছু না, পরিচালন পর্যায়ে গিয়ে যাতে কোন ঘাটতি না থাকে সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। এজন্য যে সময়টা নেওয়া হচ্ছে সেটা যুক্তিযুক্ত।

উল্লেখ্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

এদিকে করোনা ভাইরাস (কভিড-১৯) চিকিৎসায় রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে নিয়োগকৃত দুই হাজার চিকিৎসককে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রবিবার (১০ মে) বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের পদায়ন করে  স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর আগে গত ৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নিয়োগ দিয়ে  প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল।