লক্ষ্মীপুরে নিজ গ্রামের মানুষের পাশে ভ্রমণে বিশ্বজয়ী নাজমুন

নাজমুন নাহার

লক্ষ্মীপুরে নিজ গ্রামের মানুষের পাশে ভ্রমণে বিশ্বজয়ী নাজমুন

অনলাইন ডেস্ক

নাজমুন নাহার তার ভ্রমণের পৃথিবীকে খুঁজে নিয়েছেন তার গ্রামের বিধবা নারী ও শিশুদের মাঝে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের পতাকা হাতে তিনি ভ্রমণ করেছেন পৃথিবীর ১৪০ দেশ। সর্বশেষ তিনি ব্রুনাই সফর শেষে ৫ ফেব্রুয়ারি সুইডেনে ফেরেন। বাকি দেশগুলো ঘুরতে চেয়েছিলেন ২০২১ সালের মধ্যে।

কিন্তু পৃথিবীর এই নির্মম পরিস্থিতিতে সবাই আজ ঘরবন্দি। তবুও যে ভালো কাজ করতে চান তার মহৎ কাজে পৃথিবীর কোনো কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।  

সম্প্রতি কথা হয় নাজমুন নাহারের সাথে তার বর্তমান পরিস্থিতি জানার জন্য। বর্তমানে তিনি সুইডেনে অবস্থান করছেন, আজ তার ঘরে থাকার ৮০তম দিন পূর্ণ হল।

 

নাজমুনের পরিকল্পনা ছিল ২০২০ এর এপ্রিল ও মে মাসে বাংলাদেশের পতাকা হাতে তিনি সফর করবেন আফ্রিকার দেশ অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, এরিত্রিয়া ও জিবুতি। করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে নাজমুন তা পারছেন না। তাই এই সফরের পুরো অর্থটাই তিনি খরচ করছেন নিজ গ্রামের সকল বিধবা নারী ও অসহায় মানুষের জন্য।  

নাজমুন বলেন, আফ্রিকাতে ভ্রমণের সময় জঙ্গলে আটকা পড়ে আমার সর্বোচ্চ আড়াই দিন না খেয়ে থাকার রেকর্ড আছে, আমি জানি ক্ষুধার কষ্ট কাকে বলে। এটা এখন সময়ের দাবি, মানুষ বাঁচলে পৃথিবী বাঁচবে। আর পৃথিবী বাঁচলে আবারও আমি পৃথিবীতে নেমে পড়তে পারবো বাংলাদেশের পতাকা হাতে।  

বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী নাজমুন নাহারের জন্মস্থান লক্ষ্মীপুরে। আজ লক্ষ্মীপুরের গঙ্গাপুর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক অনিক ও আহাদের সাথে কথা হয়। " 

অনিক বলেন, নাজমুন নাহার আমাদের মাটির সন্তান, আমাদের মাটির গর্ব। করোনাকালের কঠিন দুর্যোগে তিনি নিজ গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটা সত্যিই একটি দারুণ উদ্যোগ। ওনার পাঠানো অর্থ থেকে আমরা গ্রামের কয়েকজন যুবক মিলে রাতভর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছি, বাজার করা, খাদ্য সামগ্রী প্যাকেট করা থেকে শুরু করে ভ্যানে করে বিধবা নারী ও অসহায়দের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত।   

তার এই মহৎ কাজের জন্য সেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। নাজমুনের পক্ষ থেকে বিশেষ করে বিধবা নারী ও অসহায় মানুষের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি শুভেচ্ছা উপহারের প্যাকেট।   আমরা আশা রাখি গঙ্গাপুর ও নন্দন পুরের ৫০০ পরিবারকে খাবার পৌঁছে দিতে পারবো। ইতোমধ্যে আমরা প্রায় তিন শতাধিকের বেশি মানুষকে পৌঁছে দিয়েছি খাদ্য সামগ্রির প্যাকেট। আমরা চাই তার সব ভালো কাজের মাধ্যমে উৎসাহিত হোক অন্যরাও। উনি আমাদের এই শেকড়ের মাটির ভালোবাসা। "

নাজমুনের পরিবারের সবাই সম্পৃক্ত আছেন তার এই মহৎ কাজের সাথে। জানা গেছে, পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করছেন তার দুই ভাই আমিন আহমেদ মুরাদ ও আহমেদ দৌলত।  

২ মে ২০২০  থেকে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট বিশেষ করে বিধবা নারী ও অসহায়দের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া শুরু হয়েছে। গ্রামের অন্য স্বেচ্ছাসেবক যুবক রিপন, রাকিব ও আহাদ  মুখে মাস্ক পরে ভ্যান চালিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন নাজমুন নাহারের পক্ষ থেকে বিধবা নারী ও শিশু বন্ধুদের ঘরে ঘরে প্রতিটি শুভেচ্ছা প্যাকেট। প্যাকেটের ভেতর খাদ্য সামগ্রীর সাথে লেখা ছিল নাজমুনর একটি শুভেচ্ছা মেসেজ - 

 "বন্ধু, আপনারাই এখন আমার পৃথিবী।  
 আপনাদের মাঝেই উড়ুক লাল সবুজের পতাকা।  
               ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। " 


তার পৃথিবী মন এখন অসহায় মানুষের পাশে। নাজমুন বলেন, আমাদের গ্রামের মানুষ খুব কর্মঠ, এখানকার মানুষ গরিব নয়।   যারা দিন আনে দিন খায় করোনা তাদের অনেকেই এই করোনা পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারছে না।  

এটা ত্রাণ নয়, এটা তাদের জন্য আমার ভালোবাসার উপহার। তারা আমার গ্রামের কর্মঠ বন্ধু। বিপদ হলে দুই বন্ধু যেমন খাবার ভাগ করে খায় ঠিক তেমনি ভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা। বিশ্ব ভ্রমণের সময় আমি অনেক পথযাত্রীদের সাথে খাবার ভাগ করে খেয়েছি। পকেটে পয়সা থাকলেও অনেক দুর্গম জায়গায় না খেয়ে থাকতে হয়েছে।  

নাজমুন এখনো স্বপ্ন দেখছেন, পৃথিবীর পরিস্থিতি যখন ঠিক হয়ে যাবে, বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকাকে তিনি ২০০ দেশ পর্যন্ত পৌঁছাবেন। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরার কৃতিত্বের মাঝে তিনি গৌরবের অংশীদার করেছেন বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষকে। তিনি পেয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও উপাধি। দেশেও মিলেছে তার অনেক সম্মাননা। দেশ-বিদেশে বহু পত্র পত্রিকার শিরোনামে এবং সফল নারীদের গবেষণার মাঝেও স্থান হয়েছে নাজমুন নাহারের নাম।  

করোনার লকডাউন পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে ব্যায়াম করা, লেখালেখি করা, গবেষণার কাজের মাধ্যমে সময় কাটাচ্ছেন নিজ বাসস্থানে। এছাড়াও তিনি আগামীতে বাকি ৪০ দেশ ভ্রমণের জন্য প্রস্তুতি ও ম্যাপের উপর গবেষণা চালাচ্ছেন।   

আমরা বিশ্বাস করি নাজমুন বিশ্বের বাকি দেশগুলোর মাঝে এঁকে দিবেন তার পায়ের চিহ্ন ও বাংলাদেশের  নাম। সকল দুর্যোগের মাঝেও তাঁর লক্ষ্য থাকুক অটুট।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল