তুলনাটা যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে

তুলনাটা যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে

শওগাত আলী সাগর

মানুষ অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা সাধারণত কখন করে! তুলনাটা যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে হয়- তখন কি তার বেশষ কোনো অর্থ হয়!

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, 'ইউরোপ-আমেরিকায় আপনারা দেখেছেন কী অবস্থা। সেই তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে। ’ এই বক্তব্যের সঙ্গে কারোই সম্ভবত দ্বিমত করার সুযোগ নেই। অবশ্যই করোনার বিস্তার, মৃত্যুর সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থা ভালো।

 

বাংলাদেশের কেউই নিশ্চয়ই চায়নি- বাংলাদেশের ইউরোপ-আমেরিকার মতো মানুষ মারা যাক, ইউরোপ-আমেরিকার মানুষেরাও চায়নি। তবু স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এই তুলনাটা দিতে হলো কেন? সরকারের আরও অনেকেই এই তুলনাটা দেন।

আজকাল অনেক ডাক্তারও এই তুলনাটা দেন। তার কারণ কি! বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকরা কি করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নিজেদের সাফল্যের প্রচারণা হিসেবে এই তুলনা দেন? না কি তাদের মনের ভেতরকার অন্তর্নির্হিত কোনো অস্বস্তি ঢাকতে বারবার এই কথাগুলো উচ্চারণ করে নিজেদের শান্ত্বনা দেন!

একটি জনপদে কতোজন মানুষ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন- তা নিশ্চিতভাবে বলার উপায় হচ্ছে পরীক্ষা।

যতো বেশি সংখ্যক মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা হবে- ততো বেশি নিশ্চিত হওয়া যাবে আক্রান্তের হার কতোটা।

২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৮ হাজার লোকের পরীক্ষা হলে, রাজধানী আর শহরে পরীক্ষার আওতা কেন্দ্রীভূত হলে সেটিকে কি ভালো ব্যবস্থাপনা বলা যায়! আমরা তো জানতেই পারছি না, দেশের সাধারণ মানুষের কতো শতাংশ এই ভাইরাসটি বহন করছেন তাদের শরীরে। ইউরোপ- আমেরিকা কিন্তু পরীক্ষা বাড়ানোর জন্য, দেশের কতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছে- সেটি জানার জন্য মরিয়া হয়ে আছে। তাদের তৎপরতা কিন্তু আক্রান্ত সবাইকে চিহ্নিত করে ফেলা, আড়াল করা নয়।  

বাংলাদেশে পরীক্ষার হার বাড়লে সংখ্যাটা কোথায় দাঁড়াবে- তা তো আমরা জানি না। আর বাংলাদেশই বোধ হয় পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে করোনার চেয়েও 'করোনার উপসর্গ' একটি জটিল রোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

পৃথিবীর আর কোনো দেশে সম্ভবত ‘করোনা উপসর্গ’ রোগে এতো লোকের প্রাণহানি ঘটেনি। অথচ এই রোগটার দিকেই আমরা ঠিক মতো নজর দেইনি।

করোনাভাইরাস সব দেশে সমানভাবে তার ছোবল বসাতে পারেনি। দেশভেদে এর প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে। কোনো দেশে ক্ষয়-ক্ষতি বেশি হয়েছে, কোনো দেশে ক্ষয়-ক্ষতি কম হয়েছে। কোন দেশ কিভাবে, কোন দেশের সরকার কতোটা জনমুখী হয়ে, মানুষের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার উদ্যোগ নিয়েছে সেটিও প্রকাশ করে দিয়েছে।

কানাডার প্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা থেরেসা ট্যাম এর একটা কথা আমার মনে গেঁথে আছে- প্রত্যেকটা মৃত্যু হয়তো আমরা ঠেকাতে পারবো না, কিন্তু প্রত্যেকটা মৃত্যু ঠেকানোর আন্তরিক চেষ্টা থাকতে হবে, অর্থবহ চেষ্টা থাকতে হবে।

বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলায়, মানুষকে বাঁচানোর ‘আন্তরিক চেষ্টা’ ছিল- সেটি দেখাতে পারলে বোধ হয়- ইউরোপ-আমেরিকার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করার দরকার হবে না।

লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, নতুন দেশ ডটকম।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল