ফোরজি কী এবং কেন?

ফাইল ছবি

ফোরজি কী এবং কেন?

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

মুঠোফোন গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে ফোরজি নেটওয়ার্কের জন্য অপেক্ষা করে আসছেন। ভারতে বেশ কয়েক বছর ধরে ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। অবশেষে বাংলাদেশে ফোরজি চালু হলো।

কিন্তু অনেকের প্রশ্ন জেগেছে ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্ক কী? কেনই বা এটি-

নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির বিবর্তনের একটি ধাপ হলো ফোরজি।

আশি ও নব্বইর দশকে ব্যবহৃত ওয়ানজি ও টুজি মূলত ভয়েস ও সাধারণ ডিজিটাল ডেটা ট্রান্সমিশনে সক্ষম ছিল। পরবর্তীতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সেবা প্রদানে সক্ষম থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু হয় যথাক্রমে ১৯৯৮ ও ২০০৮ সালে। ইন্টারন্যাশনাল টেলিকম্যুনিকেশন ইউনিয়ন রেডিও কম্যুনিকেশনস সেক্টর (আইটিইউ-আর) কর্তৃক নির্ধারিত মানদ- অনুযায়ী ফোরজি সার্ভিসে ইন্টারনেটের গতি হতে সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট থেকে ১ গিগাবিট। সাধারণভাবে ধরা হয় ফোরজি নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের গতি থ্রিজি নেটওয়ার্কের তুলনায় ১০ গুণ বেশি।
বিটিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত ফোরজির গতি সেকেন্ডে ২০ মেগাবিট।

যারা উপকারভোগী

কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও সরকার, টেলিকম অপারেটর এবং হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো একযোগে কাজ করলে ফোরজির সুফল পৌঁছে যাবে গণমানুষের কাছে।  

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, ফোরজি প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা গেলে তা দেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে। ফোরজির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দ্রুতগতির ইন্টারনেট। ফলে এটি চালু হলে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে অত্যন্ত সহজে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ফোরজি হতে পারে অন্যতম প্রধান সহায়ক।

ফ্রিল্যান্সিংসহ অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক পেশার সঙ্গে জড়িতদের জন্যও ফোরজি হতে পারে অত্যন্ত উপযোগী। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ফোরজি পৌঁছে গেলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ ফ্রিল্যান্সিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।  

বাংলালিংকের ডিরেক্টর অব কম্যুনিকেশনস আসিফ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরে ফোরজি একটি বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।

ফোরজি চালু হলে কারা সুবিধা পাবে? এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু বলেন, ফোরজি চালু হলে দেশে কমিউনিকেশন আগের চেয়ে আরও উন্নত হবে। এর মাধ্যমে শুধু দৈনন্দিন কার্যক্রম নয়, যারা আউটসোর্সিং করেন, যারা ফ্রিল্যান্সার তাদের জন্য ইন্টারনেট স্পিড যত বেশি হবে কাজ করতে তত সুবিধা হবে। ইন্টারনেটে স্পিডের ওপর নির্ভর করে অনেক কোম্পানি মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দিয়ে থাকে। তাই ইন্টারনেট স্পিড যত বেশি গতির ও স্টাবল ততই লাভবান হবেন ফ্রিল্যান্সাররা।

এখনো টুজি!
ফোরজির বিস্তারের আগে দেশের যেসব প্রান্তে এখনো থ্রিজি পৌঁছায়নি সেসব এলাকা থ্রিজি কভারে আনার জন্য জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু।  

তিনি বলেন, ফোরজির চেয়ে আমাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত যেসব জায়গায় এখনো টুজি নেটওয়ার্ক আছে সেখানে থ্রিজি কাভারেজের আওতায় আনা। সারা দেশ এখনো থ্রিজি নেটওয়ার্কের আওতায় আসেনি। এখন নতুন করে ফোরজি আনলে সেটাও যে সারা দেশে বিস্তৃত হবে তার গ্যারান্টি কে দেবে?
 
অপর্যাপ্ত ফোরজির মোবাইলসেট

দেশের মোবাইলসেট মার্কেট এখনো ফোরজির জন্য প্রস্তুত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মোবাইলফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক।  

তিনি বলেন, থ্রিজি ও ফোরজি হ্যানসেটে মূল্যের পার্থক্য এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। দেশে যেহেতু এখনো ফোরজি নেটওয়ার্ক চালু হয়নি, তাই একজন ক্রেতা এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার বেশি খরচ করে ফোরজি সক্ষমতার সেট কেনেন না। ফলে দেশের হ্যান্ডসেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি হ্যান্ডসেট আমদানিকারকরাও ফোরজি হ্যান্ডসেট খুব বেশি একটা এই দেশে এখনো আনে না। ফলে ফোরজি হ্যান্ডসেটের বাজার এখনো তৈরি হয়নি।  

প্রতিবেশী দেশ ভারতে ফিচার ফোনে ফোরজি কানেকটিভিটি সুবিধা এনেছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিচার ফোনে ফোরজি আনা সম্ভব। তবে তার জন্য সাধারণ ফিচার ফোনের তুলনায় ৭০০-৮০০ টাকা বেশি গুনতে হবে। তাহলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা এই ফিচার ফোন কেন কিনবে? 

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর