উন্নয়নের স্রোতধারায় বদলে যাওয়া এক নগরী

উন্নয়নের স্রোতধারায় বদলে যাওয়া এক নগরী

মোহাম্মদ সাঈদ খোকন

প্রিয় নগরবাসী। আসসালামু আলাইকুম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) আপনাদের মেয়র হিসেবে আজ থেকে পাঁচ বছর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শেষ অবধি নিরলসভাবে আন্তরিক প্রচেষ্টায় নগরবাসীর কষ্ট লাঘবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকায় কিছু কাজ এখনও চলমান রয়েছে।

আশা করি অচিরেই অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত হবে এবং নগরবাসী উন্নয়নের সুফল পাবেন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষ দিনে উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য চিত্র আমার প্রিয় নগরবাসীর সামনে বিনীতভাবে উপস্থাপন করলাম।

করোনা মহামারিতে ত্রাণ বিতরণ

করোনাভাইরাসে সৃষ্ট ভয়াবহ মহামারিতে প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনানুযায়ী কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার, দরিদ্র, অতিদরিদ্র, হতদরিদ্র বস্তিবাসী ছিন্নমূল, পথবাসী, দুস্থ ও অসহায় প্রায় দেড় লাখ পরিবারের মাঝে গত দুই মাসে বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। সুখে-দুঃখে সব সময় নগরবাসীর পাশেই ছিলাম।

যখনই কোনও দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, তখনই সামনে থেকে মোকাবিলা করেছি।  

ইতিমধ্যে ডিএসসিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৭৫টি ওয়ার্ডের ৩৭ হাজার ৫০০ কর্মহীন ছিন্নমূল পথবাসী, অসহায় দরিদ্র বস্তিবাসী ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে, ডিএসসিসির হটলাইনের (০১৭০৯৯০০৭০৩, ০১৭০৯৯০০৭০৪) মাধ্যমে পাওয়া অনুরোধের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করে মোট নিবন্ধিত ১৯ হাজার ৪৯১ জন সাহায্যপ্রার্থীর বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছানো হয়েছে। এছাড়া ডিএসসিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মহীন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, অসহায় এক হাজার ৮৬ জন পথবাসী পরিবারের প্রত্যেকের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ৯৫০ জন কর্মহীন রিকশাচালকের প্রত্যেকর মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ৭৫টি ওয়ার্ডের এক লাখ কর্মহীন ছিন্নমূল পথবাসী, অসহায় দরিদ্র বস্তিবাসী ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারকে রমজানের উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলমান।  

বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতায় ২০ হাজার বস্তিবাসী, ছিন্নমূল, হিজড়া জনগোষ্ঠী, দলিত সম্প্রদায়ের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ৫ হাজার ৬০০ পরিচ্ছন্নকর্মীদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত মানবিক সহায়তা ত্রাণ কার্যের আওতায় ছিন্নমূল, দিনমজুর, কর্মহীন, শ্রমজীবী, রাস্তায় ভাসমান মানুষ, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, রিকশাচালক, ভানগাড়িচালক, পরিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার ও অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৯০ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

এলইডি বাতি স্থাপন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখন এলইডি বাতির আলোয় আলোকিত নগরী। অনেকেই এখন প্রিয়জনদের নিয়ে দক্ষিণ ঢাকার রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। নগরী আলোকিত করে দেওয়ার ফলে এখন বদলে যাওয়া এ শহরে অপরাধমূলক ঘটনাও অনেক কমে এসেছে। রাজধানীর অলিগলিসহ সর্বত্র আমরা ৫৪ হাজার ১৮৬টি এলইডি বাতি স্থাপন করেছি। নতুন সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডে ১৩ হাজার ৯৩৬টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্ধাস্তু আশ্রয় কেন্দ্র

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নদীভাঙনের শিকার অনেক পরিবারের অসহায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ রাজধানীতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্ধাস্তু আশ্রয় কেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার জন অসহায় ও ছিন্নমূল রাতে থাকার এবং প্রায় ২০০ জনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিনামূল্যে দাফনের ব্যবস্থা

ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব নাগরিকের (ধর্ম অনুযায়ী) সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কবরস্থানে দাফন এবং শ্মশানঘাটে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি অনুষ্ঠান

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ২৫টি ‘জনতার মুখোমুখি জনপ্রতিনিধি’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমধর্মী জবাবদিহিমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওয়াসা, ডেসা, তিতাস, রাজউক, ডিএমপিসহ ২৮টি সেবা সংস্থার প্রতিনিধিসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলররা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। তারা এলাকাবাসীর বিভিন্ন সমস্যার কথা সরাসরি শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকেন। জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবাবদিহিতার এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।

ডিজিটালাইজড এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন

নগরীর সৌন্দর্য বজায় রেখে সিটি করপোরেশন ও সরকারি কোনও তথ্য প্রচার এবং ব্যবসায়ীদের বিজ্ঞাপন প্রচারের সুবিধার্থে পান্থকুঞ্জ পার্ক, শাহবাগ মোড়, গাউছিয়া মোড়, রাসেল স্কয়ার, তাঁতিবাজার মোড় ইত্যাদি এলাকায় ৯টি ডিজিটালাইজড এলইডি বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। এছাড়া এক হাজারেরও বেশি বক্স এলইডি বোর্ড বসানো হয়েছে। এর ফলে ঢাকা এক নান্দনিক রূপ লাভ করেছে।

জলসবুজে ঢাকা প্রকল্প

নগরীর পার্ক এবং খেলার মাঠগুলো বেদখল হয়ে নেশাখোরদের অভয়ারণ্য এবং নানা অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পার্ক ও খেলার মাঠগুলো দখলমুক্ত করে নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ‘জলসবুজে ঢাকা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পে ১৩টি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানের শতাধিক অভিজ্ঞ স্থপতিবিদদের সম্পৃক্ত করে একটি গোস্বা নিবারণী পার্কসহ আন্তর্জাতিক মানের ১৯টি পার্ক ও ১১টি খেলার মাঠ উন্নয়ন কাজ শুরু করা হয়। তার মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়া পার্ক ও মাঠ যথাক্রমে শহীদ খালেক সর্দার পার্ক (সিক্কাটুলী পার্ক), মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশু পার্ক, জোড়পুকুর পার্ক, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, বাহাদুর শাহ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, রসুলবাগ শিশু পার্ক, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, বংশাল ত্রিকোণাকার পার্ক, গুলিস্তানে শহীদ মতিউর পার্ক।

 নির্মাণাধীন পার্ক ও মাঠ– সিরাজউদ্দৌলা পার্ক (৭৫ শতাংশ), ওসমানী উদ্যান (৫৫ শতাংশ), মতিঝিল পার্ক (৮০ শতাংশ), যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক (৮০ শতাংশ), মালিটোলা পার্ক (৮৫ শতাংশ), পান্থকুঞ্জ পার্ক (১৫ শতাংশ), কলাবাগান খেলার মাঠ (৮০ শতাংশ), সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ (৩৫ শতাংশ), বাংলাদেশ মাঠ (৮০ শতাংশ), শামসাবাদ খেলার মাঠ (২ শতাংশ), দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ (৮৫ শতাংশ), বালুরঘাট খেলার মাঠ (৯০ শতাংশ), শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম (৫ শতাংশ), বশির উদ্দিন পার্ক (৭০ শতাংশ), গজমহল পার্ক (৯৫ শতাংশ), বকশীবাজার পার্ক (৭৫ শতাংশ), হাজারীবাগ পার্ক (৭০ শতাংশ) ও আজিমপুর শিশু পার্ক (১৫ শতাংশ) উল্লেখ্যযোগ্য।

অনলাইন হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স চালুকরণ

করদাতারা ঘরে বসেই যেন হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি প্রদান করতে পারেন সে লক্ষ্যে অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।

আধুনিক জবাইখানা নির্মাণ

আধুনিক জবাইখানা না থাকায় বর্তমানে যত্রতত্র অস্বাস্থ্যকরভাবে পশু জবাই হয়ে থাকে। এ অবস্থা নিরসনকল্পে হাজারীবাগ ও কাপ্তানবাজারে দুটি আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

কবরস্থান/শ্মশানঘাট উন্নয়ন

আজিমপুর কবরস্থানে আধুনিক ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ’ নির্মাণকাজ সম্পন্নের পর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আজিমপুর, জুরাইন ও মুরাদপুর কবরস্থানের আধুনিকায়নের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, মিরনজল্লা সুইপার কলোনি মন্দির আধুনিকায়ন করে দেওয়ার পাশাপাশি পোস্তগোলা এবং লালবাগ শ্মশানঘাটের আধুনিকায়নসহ শবদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্নের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এসটিএস নির্মাণ

ইতিমধ্যে ২১টি এসটিএস নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছে। আরও কয়েকটির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ডিএসসিসি ও প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৭২টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০টি কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে প্রায় ১২ টন ক্ষতিকর মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করে পরিবেশ সম্মতভাবে অপসারণ করা হচ্ছে।

পাবলিক টয়লেট নির্মাণ

নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত অত্যাধুনিক ৩০টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। পুরনো ৮টি টয়লেট সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। আরও ৪৭টির মধ্যে ১৫টির নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিবন্ধীবান্ধব এসব আধুনিক টয়লেটে ব্রেস্ট ফিডিং রুম, চেঞ্জিং রুম, খাবার পানি, গোসল করার ব্যবস্থাসহ নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। নবনির্মিত পার্ক ও খেলার মাঠগুলোতেও এ সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অবৈধ বিলবোড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণ

আকাশ, প্রকৃতি ও পার্ক ঢেকে থাকা অবৈধ ও দৃষ্টিকটু প্রায় ৩০ হাজার অবৈধ বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণ করা হয়েছে।

রাস্তা, ফুটপাথ, নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়ন

নাগরিক ও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে ৮০৭.৪১ কি.মি. রাস্তা, ৮০৭.৯৫ কি.মি. ড্রেন/নর্দমা এবং ১৫৯.৬৬ কি.মি. ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হয়েছে।

জলাবদ্ধতা দূরীকরণ

বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার ওপর ন্যস্ত থাকলেও নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ইতিমধ্যে শান্তিনগর ও নাজিমউদ্দিন রোড এলাকার দীর্ঘ ৩০-৪০ বছরের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন করা হয়েছে।

বাজার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন

করপোরেশনের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাঁনখারপুল মার্কেট, ঢাকেশ্বরী রোড সাইড মার্কেট, সিদ্দিকবাজার, কাপ্তানবাজার মুরগিপট্টি, ইসলামবাগ, ফুলবাড়িয়া-২ এবং ঢাকা ট্রেড সেন্টার মার্কেট ইত্যাদি নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া আরও ৮-১০টি মার্কেট নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ

স্বল্প ব্যয়ে সামাজিক নানা অনুষ্ঠানাদি সম্পন্নের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত ৬তলা বিশিষ্ট মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া আধুনিক মানের হাজারীবাগে খলিল সরদার কমিউনিটি সেন্টার, লালবাগে শায়েস্তাখান কমিউনিটি সেন্টার এবং নাজিমউদ্দিন রোডে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ কমিউনিটি সেন্টারসহ আরও ৩টির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। বিদ্যমান বাসাবো ও সূত্রাপুর কমিউনিটি সেন্টারের সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

ব্যায়ামাগার ও সঙ্গীত বিদ্যালয়

নগরবাসীর জন্য করপোরেশনের আওতাধীন ২১টি ব্যায়ামাগার ও শিশু-কিশোরদের জন্য ১২টি সঙ্গীত শিক্ষা কেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আধুনিক সরঞ্জামাদি কেনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

হাসপাতাল উন্নয়ন-সংস্কার

নয়াবাজারে অবস্থিত সিটি করপোরেশনের মহানগর জেনারেল হাসাপাতালটির আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখানে অসহায়, দুস্থ, দরিদ্র নগরবাসীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে রক্ত, কফ, মলমূত্র পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নাজিরাবাজার মাতৃসদন কেন্দ্রসহ ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার’ প্রকল্পের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহে নামমাত্র মূল্যে মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য এবং প্রজননসেবা প্রদান করা হচ্ছে। চকবাজারের শহীদনগরের শিশু হাসপাতালটিরও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

খাল ও ভূমি উদ্ধার

মান্ডা খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। ডিএসসিসি, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে হাজারীবাগের কালুনগর খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। কুতুবখালী খাল পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। অন্যান্য খাল উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ডিএসসিসির অবৈধ দখলে থাকা প্রায় ১২০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে।

আবর্জনা অপসারণ

আবর্জনা অপসারণ একটি জটিল কাজ। আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা অনেক পরিচ্ছন্ন। একাজে সফলতা পেতে প্রয়োজন ডিএসসিসির সঙ্গে সাধারণ জনগণ, ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত কর্মপ্রয়াস। সিটিজেন এনগেজমেন্টসহ প্রতিটি ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষার্থী, ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ, এনজিওসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে ‘কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর’ গড়ে তোলা হয়েছে।

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা চালু, সিম ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু, তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ নগরবাসীদের এ কাজে শামিল করতে সেলিব্রেটি, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, শিক্ষকমন্ডলী, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে নিয়ে মোটিভেশনমূলক কার্যক্রম চলমান আছে।

কোরবানির বর্জ্য অপসারণ

ঈদুল আজহায় পশুর হাটের বর্জ্য এবং কোরবানি পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যথাসময়ে বর্জ্য অপসারণ করা হয়। ফলশ্রুতিতে বিগত ঈদুল আজহায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৪ ঘণ্টার মধ্য নগরীর কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়।

৮ ইউনিয়নের উন্নয়ন

৭৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া এই ৪ ইউনিয়নের ১৬৭.৮৮ কি.মি. রাস্তা, ৮.৮১ কি.মি. ফুটপাথ, ১৭১.৬৫ কি.মি. ড্রেন, ১১৬.১৮ কি.মি. রাস্তায় এলইডি বাতি স্থাপন, ৭ হাজার ৬৩টি বৃক্ষরোপণসহ নানা অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

এছাড়া মান্ডা, ডেমরা, নাসিরাবাদ ও দক্ষিণগাঁও এ ৪টি ইউনিয়নের জন্য ৫১৫.৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১.৩৬ কি.মি. রাস্তা, ৬১.৭৯ কি.মি. ড্রেন, ৭.৯৫ কি.মি. ফুটপাথ, অ্যাপ্রোচ রোডসহ ১১টি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণ এবং ওই এলাকার রাস্তায় এলইডি লাইট স্থাপন প্রকল্পের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ

পথচারীর নিরাপদ সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে ‘সিএএসই’ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ৮টি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পের আওতায় নতুন আরও সাতটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণসহ বিদ্যমান ১৬টি ফুটওভার ব্রিজের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পথচারী পারাপারের লক্ষ্যে জেব্রাক্রসিংগুলো কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মশক নিধন কার্যক্রম

মশক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি স্পেশাল ক্রাশ প্রোগ্রাম চালুসহ করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়মিতভাবে লার্ভিসাইডিং এবং ফগিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। করপোরেশনের অধীন জলাশয়সমূহের কচুরিপানা ও আর্বজনা নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং মশক নিধন কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োজিত করা হচ্ছে। ৫টি অঞ্চলের মশক কর্মীদের চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে মোটিভেট করা হয়েছে। ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব পালনে সমন্বয় কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। একটি অঞ্চলের সমগ্র এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মশক নিধনের সমগ্র জনবল এবং যন্ত্রপাতি একত্র করে একদিনে এক একটি অঞ্চলের সমগ্র এলাকাতে ফগিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এটি পর্যায়ক্রমে ৫টি অঞ্চলের প্রতিটিতে চালানো হচ্ছে, যাতে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য কল সেন্টারের মাধ্যমে বিনামূল্যে ওষুধসহ স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং ডেঙ্গু পরবর্তী শারীরিক অসহ্য যন্ত্রণা নিরসনে বাড়িতে ডাক্তার পাঠিয়ে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এটি সব মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ স্বাস্থ্যসেবা পক্ষ

মেয়র হানিফ স্বাস্থ্যসেবা পক্ষ চলাকালে কল সেন্টারের মাধ্যমে প্রাপ্ত ২ লাখ এক হাজার ৪৪৪টি কলের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের কল সংখ্যা ছিল ৭২ হাজার ২১২টি এবং সেবা গ্রহীতার সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার একজন। চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তদের বিনামূল্যে বাড়িতে গিয়ে ডাক্তারি সেবা, ওষুধ প্রদান, ফিজিওথেরাপি প্রদান ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয়।

স্বচ্ছ ঢাকা কর্মসূচি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের পাশাপাশি স্বচ্ছ ঢাকা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিল্পী, সাহিত্যিক, শিক্ষক, স্কাউট, গার্লস গাইড রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

সবুজ ঢাকা

ঢাকা মহানগরীকে সৌন্দর্যময়ী সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নগরবাসীর নিজ নিজ বসতবাড়ির ছাদে বা আঙিনায় বাগান করার জন্য ১০% ট্যাক্স রিবেট প্রদান করা হয়। ফুটওভার ব্রিজগুলোকে সবুজ বৃক্ষশোভিত করে সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। এছাড়া সবজি বাগান, হেয়ার রোড, শেরাটন মোড়, বঙ্গভবন, জিপিও, পল্টন মতিঝিলসহ প্রায় ৭.৫ কি.মি. সড়ক বিউটিফিকেশন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

আধুনিক যান ও যন্ত্রপাতি সংযোজন

যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়ন কাজে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক কোল্ড মিলিং মেশিন, জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন সংযোজন করা হয়েছে। কোল্ড মিলিং মেশিন দিয়ে পুরনো ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করে মাত্র ৭ ঘণ্টায় ১ কি.মি. সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব। এতে সময় বাঁচানোর পাশাপাশি ব্যয়ও ৪০% সাশ্রয়ী হয়। জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ড্রেনে জমে থাকা শক্ত ময়লা পরিষ্কার করা যাচ্ছে যা জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সহায়ক হচ্ছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়ন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিতকল্পে ডিজিটাল হাজিরা, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য লোকেশন ট্র্যাকিং সিস্টেম, টেন্ডারিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় শতভাগ ই-টেন্ডারিং চালু, ইন্সট্যান্ট মনিটরিং করার জন্য হোয়াটস অ্যাপ চালু এবং সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম সরেজমিন দেখার জন্য ডিএসসিসি লাইভ মনিটরিং চালু করা হয়েছে। জনগণের দোরগোড়ায় নাগরিক সেবা পৌঁছে দিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নগর ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।

ঢাকা আরবান আপগ্রেডিং প্রজেক্ট

‘ঢাকা আরবান আপগ্রেডিং প্রজেক্ট’ শিরোনামে একটি নতুন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হয়েছে যা অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনসহ পুরনো ঢাকা, বিশেষ করে, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, সূত্রাপুর, নয়াবাজারসহ গুলিস্তান, খিলগাঁও, মুগদা, বাসাবো সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিবাস নির্মাণ

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ধলপুর, লালবাগ ও গণকটুলীতে ছয়তলা বিশিষ্ট ৬টি ক্লিনার কলোনি, ধলপুরে দুটি ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছে। গণকটুলিতে আরও ৬টি, মিরনজল্লা ক্লিনার কলোনিতে ৩টি ভবন নির্মাণের কার্যক্রম চলমান। তাদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কর্তৃক ঢাকা সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৩টি দশতলা বিশিষ্ট ভবনে সর্বমোট ১২১৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

রাস্তা খনন

রাস্তা খননের ফলে নাগরিক ভোগান্তি এক বড় সমস্যা। ঢাকা ওয়াসা, ডেসকো, টিঅ্যান্ডটি, তিতাস গ্যাস ইত্যাদি সেবা সংস্থাগুলো তাদের উন্নয়ন কাজের জন্য রাস্তা খনন করে থাকে। এর পাশাপাশি চলছে এমআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ নানা ধরনের জাতীয় অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন কাজ। ফলে সড়কগুলো আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গাবতলী থেকে আজিমপুর, সায়েন্সল্যাব থেকে শাহবাগ, কুড়িল থেকে মালিবাগ হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়ক রিকশামুক্ত ঘোষণা করা হয়।

হকার পুনর্বাসন

হকাররা ফুটপাত, সড়ক দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করায় রাস্তায় যানজট সৃষ্টি এবং পথচারীর চলাচলে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। হকারদের ব্যবসার জন্য ৫টি হলিডে মার্কেট চালু এবং কর্মদিবসে বিকাল ৫টার পরে ফুটপাতে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। করপোরেশনের পক্ষ থেকে হকারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে একটি কর্মসূচি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় হকারদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা, বিদেশে পাঠানো, প্রশিক্ষণ প্রদান, ভ্যানগাড়ি সরবরাহ, হকার নিবন্ধন ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত আছে। এটির অনুমোদন পাওয়া গেলে ফুটপাতসহ হকারমুক্ত রাখা সম্ভব হবে।

কেন্দ্রীয় ঈদের জামাত

প্রতি বছর দুই ঈদে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রধান জামাতের প্যান্ডেল তৈরি ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব ডিএসসিসি পালন করে থাকে। এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরাসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। লক্ষাধিক মুসল্লি জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ জামাতে শরিক হন। মহিলাদের নামাজ আদায়ের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কর্মসূচি

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এক হাজার ৫০০ বর্গফুট আয়তন পর্যন্ত ফ্ল্যাট ও বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ, তাদের জন্য আজিমপুর ও জুরাইন কবরস্থানে স্থান সংরক্ষণ এবং স্বজনদের জন্য কমিউনিটি সেন্টার অর্ধেক ভাড়ায় ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভেজাল বিরোধী অভিযান

খাদ্যে ভেজাল বিরোধী কার্যক্রমের আওতায় সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩টি সরকারি ও ১৯টি বেসরকারি কাঁচাবাজারকে ফরমালিনমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ১৩৫টি মামলা, ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং ৮১৯টি খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

মাতুয়াইল ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ

ল্যান্ডফিলে বর্জ্য অপসারণ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর তথা বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে এক ৫৪৪.১৬ কোটি টাকার ‘মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণসহ ভূমি উন্নয়ন’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হওয়ায় প্রায় ৮১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করার কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মাতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণের জন্য ৫০ একর এবং বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের জন্য প্রায় ৩১ একর ভূমি ব্যবহার করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রতিদিন ৫-৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ল্যান্ডফিলের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

যানজট নিরসন

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বেঁচে থাকার তাগিদে ও দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে রাজধানীতে প্রতিবছর কমবেশি ৬ লাখ লোকের আগমন ঘটছে। পাশাপাশি প্রতিদিনই নতুন নতুন যানবাহন সড়কে যোগ হচ্ছে। ঢাকামুখী অসংখ্য মানুষের আগমন এবং বিদ্যমান সড়কের তুলনায় অত্যধিক যানবাহন রাস্তায় চলাচলের কারণে শহরের যানজট ক্রমান্বয়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। একদিকে অপরিসর ও অপর্যাপ্ত রাস্তা, অন্যদিকে লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল, রাস্তা দখল করে রাখা যানবাহন, যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা– সব মিলিয়ে পরিস্থিতি নাজুক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। তাই যানজট নিরসনে সমন্বিতভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসছে না। তবে ঢাকা দক্ষিণে যানজট তুলনামূলক কম।

যানজট মোকাবিলায় ৪টি ইন্টারসেকশন নির্মাণ, ৩০টি বাস স্টপেজ নির্মাণ, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা, অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন, জেব্রা ক্রসিং চালু, রাস্তা জুড়ে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করে ৮টি এলাকায় ৫৬০টি স্থানে অনস্ট্রিট পার্কিং চালু করা, যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রী উঠানামা বন্ধকরণ, উন্নয়ন কাজ চলাকালীন অথবা কাজ শেষে মাটি, রাবিশ ইত্যাদি তাৎক্ষণিক সরিয়ে নেওয়া, সড়কের এক প্রান্ত জুড়ে রাখা বর্জ্যবাহী কন্টেইনারগুলো এসটিএসএর অভ্যন্তরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া, পথচারীদের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা এবং ৫২টি স্বচ্ছ পুলিশ বক্স নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল থেকে নেভি ফাউন্ডেশন, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের উভয় পার্শ্ব, রাজউক অ্যাভিনিউয়ের শিল্প ব্যাংক ভবন থেকে আলিকো ভবন, পলওয়েল মার্কেটের সামনের রাস্তা, গাউসিয়া মার্কেট, নিউ মার্কেটের দক্ষিণ গেট সড়কের একাংশে যানবাহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলোকে ২২টি রুট নির্ধারণ করে ছয়টি কোম্পানির আওতায় এনে চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাবতলী-আজিমপুর, সায়েন্সল্যাব-শাহবাগ, কুড়িল-রামপুরা-যাত্রাবাড়ী এ তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজিমপুর-নিউমার্কেট এলাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে, যা ইতোমধ্যে নগরবাসী কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে। এয়ারপোর্ট-মতিঝিল রুটে ডাবল ডেকার বাস চালু করা হয়েছে। পুরনো ঢাকা থেকে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা হয়ে রামপুরা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করাসহ বছিলার ঘাটারচর থেকে নারায়ণগঞ্জ-কাঁচপুর পর্যন্ত রুটে চলাচলকারী সব পরিবহনকে একটি কোম্পানির অধীনে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বাস চলাচলে প্রতিযোগিতা কমে যাবে। যাত্রীদের বাসে চলাচল অনেকটা নিরাপদ হবে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে যা ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। নতুন বাস ডিপো নির্মাণের বিষয়টিও বিবেচনাধীন রয়েছে।

কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর

সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের সঙ্গে সিটিজেনস এনগেজমেন্ট বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ‘কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর’ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডকে চারটি ভাগে ভাগ করে একেকটি এলাকা থেকে মসজিদের ইমাম, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সমাজসহ সাতজন করে নাগরিক প্রতিনিধি নিয়ে এক একটি গ্রুপ করে চার গ্রুপে মোট ২৮ জন কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বাসেডররা অঞ্চলভিত্তিক সিটি করপোরেশনের সামগ্রিক নাগরিক সেবা কর্মকাণ্ড তদারকি করবে। এতে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন নাগরিক সেবা কর্মকান্ডে গতিশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। তাছাড়া ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে মশক নিধন, আর্বজনা অপসারণ, রাস্তাঘাট মেরামত, সড়কবাতি ইত্যাদি কার্যক্রমে কোনও অসঙ্গতি বা সমস্যা দেখা দিলে, নাগরিকরা কোনও বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে এ গ্রুপে পোস্ট করলে দ্রুত সমাধান পাওয়া যাবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা

প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমন ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাংক সাহায্যপুষ্ট আরবান রেসিলেন্স প্রজেক্টের আওতায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিক্ষেত্রে তিনটি স্থানে ওয়্যার হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জ্ঞান বৃদ্ধি ও প্রস্তুতি শক্তিশালী করার জন্য সেচ্ছাসেবক টিম গঠন এবং কমিউনিটি ও স্কুল পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে ঢাকা আর্থকোয়েক অ্যান্ড ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস (ডিইইপি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নগরাঞ্চলে দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চারটি ওয়ার্ডে পপুলেশন সার্ভিস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্ট্রেংথেনিং আরবান রেজিলেন্স প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্ল্যানের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

নদীর নাব্য ফেরানো

ঢাকা শহরের চারপাশ দিয়ে প্রবাহিত বালু-শীতলক্ষ্যা-তুরাগ-ধলেশ্বরী নদী রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণসহ উন্নয়ন ও বিকাশে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এ নদীগুলোর নাব্য ফিরিয়ে আনা তথা নদী প্রবাহ ঠিক রাখার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নদীর পাড় দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের কার্যক্রম চলছে। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসন এবং নৌপরিবহন দফতরের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে করপোরেশন কাজ করছে। ইতোমধ্যে মান্ডা খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। কুতুবখালী খালের আর্বজনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পরিষ্কার করা হয়েছে। হাজারীবাগের কালুনগর খাল জেলা প্রশাসন, ডিএসসিসি দখলমুক্ত করেছে। এসব উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

আমার প্রয়াত পিতা আপনাদের প্রিয় নেতা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। তার হাত ধরেই জনকল্যাণে রাজনীতিতে এসেছি, রাজনীতিতে এসে তাকে হারিয়েছি। আমার বাবার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। বাবার অবর্তমানে আমার প্রাণপ্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার অভিভাবক; আপনারা আমার অভিভাবক। বিগত পাঁচ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ নির্দেশনা ও পরামর্শক্রমে মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে পেরেছি। এ সময়ে যে উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে তা বিগত এক দশকেও করা সম্ভব হয়নি। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এখন উন্নয়নের স্রোতধারায় বদলে যাওয়া এক নগরী।

 আমার অভিভাবক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। তার স্নেহের পরশে, অক্লান্ত ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে নাগরিক সেবা কার্যক্রমে গতিশীলতা এনে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছি। আমি মানুষ, ফেরেশতা নই। কোনও ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমাদের যেটুক অর্জন তার কৃতিত্বের দাবিদার সম্মানিত নগরবাসীসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দায়িত্ব পালনকালে পাশে থেকে সহযোগিতা দানের জন্য আমি সবাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। জনগণের ভোটে নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে স্বাগত জানাই। আমি বিশ্বাস করি, তার গতিশীল নেতৃত্বে আমার অসম্পূর্ণ কাজগুলো পূর্ণতা পাবে, নতুন নতুন সেবার দ্বার উন্মুক্ত করার মধ্য দিয়ে নগরবাসী পাবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

আমি নগরবাসীর দোয়া চাই, দেশবাসীর দোয়া চাই। আগামী দিনগুলোতে আপনাদের স্নেহ-ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে চাই। জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক: মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল