ছবিহীন মানুষ

ছবিহীন মানুষ

ড. আসিফ নজরুল

আমি দেবপ্রিয় দা’কে একদিন ফোন করে বলি, আমি কিন্তু আপনার অনেক সিনিয়র। আমি আন্দোলন করেছি আপনার বাবার সাথে।  

এটি আসলে সত্যি। নির্মূল কমিটির আন্দোলনের সময় দেবপ্রিয় দার বাবা (বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য) আর সুলতানা কামাল আপার মা (সুফিয়া কামাল) এর সাথে বেশ কয়েকটা মিটিং-এ থাকতে হয়েছিল আমাকে।

জাহানারা ইমাম আর খান সরওয়ার মুরশিদের সাথে তো লেগে থাকতাম দিনরাত।

২০০২ সালে দেশে ফেরার পর খান সরওয়ার স্যার আমাকে টিআইবির উপদেষ্টা হিসেবে যখন কাজ দেন তখনো স্যারের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে এদের কারো সাথে আমার কোনো ছবি নেই। ছবি নেই শাহাদত চৌধুরী বা হুমায়ূন আহমেদের মতো একসময়ের অতি ঘনিষ্ঠজনের সাথেও।

ছবি নাই এমনকি আমার চার বছরের পিএইচডির সুপারভাইজার স্বনামধন্য প্রফেসর ফিলিপ স্যান্ডস্ এর সাথেও।
সবচেয়ে আশ্চর্য্য যা-ছবি নাই আমার নিজের বাবার সাথেও। প্রায় ষাট বছর আগে তোলা বাবার সাথে তার বড় দুই সন্তানের ছবি আছে। কিন্তু আমার সাথে কোনো ছবি নাই! আমার যে কোনো ছবি নাই প্রায় এটা লক্ষ্য করি ফেসবুকে নিয়মিত হওয়ার পর। সেখানে বিখ্যাত কোনো মানুষের মৃত্যুর পর একজনকেও পাই না যার ছবি নাই তার সাথে। বাবা কিংবা মা দিবসে কেউ থাকে না বাবা-মার ছবি ছাড়া।

ছবি দেয়া নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নাই। কষ্ট লাগে এটা ভাবলে যে বাবার সাথে কেন ছবি থাকলো না আমার? মাথায় হাত বুলিয়ে যে মাতৃসম মানুষটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসতাম বা কথা বলার ফাঁকে যাকে দেখতাম অপার স্নেহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। তাদের সঙ্গে ছবি নাই কেন আমার? নিজে তো একটু দেখতে পারতাম মাঝেমাঝে। ।

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর