ঋতুচক্রে বদল এসেছে কি না, তা নিয়ে আগেই আলোচনা শুরু হয়েছিল। গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ধারাবাহিক বৃদ্ধি, বর্ষার দিন কমে যাওয়ার পাশাপাশি শীত দেরিতে আসা, সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় অসাম্যের মতো একাধিক ঘটনায় তারই প্রতিফলন ধরা পড়েছে বলে মনে করেন আবহাওয়াবিদরা।
তবে ঋতুচক্র বদলের পাশাপাশি এবার ঘূর্ণিঝড়ের চক্রেও পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে। শুধু তাই নয়, ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতাও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের।
আবহাওয়াবিদ-গবেষকদের একটি অংশের এমন মনে করার কারণ হলো, ২০১৯ সালের ওডিশায় আছড়ে পড়া ফণী এবং তার পরে এই আমপান। তীব্রতার মাপকাঠির ভিত্তিতে এই দুই মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ই (এক্সট্রিমলি সিভিয়র সাইক্লোন) ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার জন্য মে মাসকে বেছে নিয়েছে। আর তাতেই খটকা লেগেছে আবহায়াবিদ-গবেষকদের।
তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের সময়কাল হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর, এই তিন মাস।
আবহাওয়াবিদদের মতে, গত ১৫-২০ বছরের তথ্য ঘাঁটলে দেখা যাবে, মে মাসে সেই অর্থে কোনও সুপার সাইক্লোন হয়নি। ফণী ও আমপান সেখানে ব্যতিক্রম।
এক আবহাওয়া বিজ্ঞানীর কথায়, ‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার কারণে এ ধরনের জলবায়ুগত ব্যতিক্রম (ক্লাইম্যাটিক অ্যানোম্যালি) তৈরি হতে পারে। যেভাবে দূষণ বাড়ছে, ভূগর্ভ থেকে খনিজ উত্তোলন হচ্ছে, অরণ্য ধ্বংস করাসহ পরিবেশের একাধিক পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে, তারই ফলে এ ধরনের আবহাওয়াজনিত বিপর্যয় (হাইড্রোমেটিয়োরোলজিক্যাল হ্যাজ়ার্ডস) তৈরি হচ্ছে। ’
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট’-এর (এনআইডিএম) রেজ়িলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডিভিশনের সাবেক প্রধান তথা বর্তমানে আইআইটি, জম্মুর অধ্যাপক চন্দন ঘোষ জানান, গত বছর মে মাসে ফণী এসেছিল, আবার ওই বছর নভেম্বরে বুলবুল আছড়ে পড়ে, যা সাধারণত হয় না।
তিনি বলেন, ‘শুধু এ অঞ্চলেই ঋতুচক্রের স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে যে ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে, তা নয়। আটলান্টিক, প্রশান্ত মহাসাগরেও এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। জাপান, আমেরিকার দিকে তাকালেও বোঝা যাবে, সেখানেও একই অবস্থা। ’
‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস, ইলাহাবাদ’-এর নির্বাচিত সদস্য তথা দিল্লির ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’-র সেন্টার ফর অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্সেসের অধ্যাপক-গবেষক এ ডি রাও বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলোর তীব্রতা আগের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সেগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি বেড়েছে না কমেছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। সে সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলতে আরও তথ্য দরকার। ’
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, বুধবার (২০ মে) ‘কোর এরিয়া’-য় অর্থাৎ উত্তর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে আমপান ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর ও নদিয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য গতিবেগ (উইন্ড স্পিড) হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।
তিনি বলেন, ‘আছড়ে পড়ার (ল্যান্ডফল) সময়ে বাতাসের গতি কিছুটা কমলেও তা দেড়শো কিলোমিটারের বেশি থাকবে বলেই মনে হচ্ছে। সেই সময়ে আমপান আর সুপার সাইক্লোন থাকবে না, তা এক্সট্রিমলি সিভিয়র সাইক্লোনে পরিণত হবে। আছড়ে পড়ার পুরো প্রক্রিয়া চলবে প্রায় দু’-তিন ঘণ্টা ধরে। ’
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)