করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসলেও হাসপাতাল থেকে আর ফেরা হলো না লিটনের। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী রিয়াজুল আলম লিটনের কথা বলছি।
সেদিন নিজের করোনা হয়েছে সন্দেহে রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে যান রিয়াজুল আলম লিটন। পরে নমুনা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখেন।
কিন্তু সে রাতেই ঘটে বিপত্তি।বুধবার (২৭ মে) রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডে মারা যান তিনি। বৃহস্পতিবার (২৮ মে) ভোরে স্বজনরা লিটনের লাশ গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের বীরগঞ্জে নিয়ে যান।
নিহত রিয়াজুল আলম লিটন স্ত্রী ফৌজিয়া আক্তার জেমি ও সাত বছরের একমাত্র সন্তান আসমাইন ফিয়াজকে নিয়ে শ্যামলী এলাকায় থাকতেন।
নিহত রিয়াজুল আলম লিটনের বড় ভাই রইসুল আজম ডাবলু বলেন, আমরা অপেক্ষা করছিল করোনা পরীক্ষার ফলাফলের জন্য। ফলাফল ঠিকই নেগেটিভ এলো। কিন্তু ভাই আমার বাঁচলো না। তাকে আগুনে পুড়ে মরতে হলো।
নিহত রিয়াজুল আলম লিটনের এক সময়ের রুমমেট ও বীরগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক বিপুল জানান, লিটন জগন্নাথ কলেজ অর্থাৎ বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন। এরপর থেকে তিনি ঢাকায় থেকে বায়িং হাউজ ব্যবসা করতেন। তিনি লায়ন্স ক্লাব অব দিনাজপুর গার্ডেনের সাবেক সেক্রেটারি এবং ঢাকাস্থ বীরগঞ্জ সমিতির উপদেষ্টা ছিলেন। এলাকার উন্নয়ন ও যেকোনও সামাজিক কার্যক্রমে স্বেচ্ছায় ঝাঁপিয়ে পড়তেন তিনি।
স্বজনরা জানান, নিহত রিয়াজুল আলম লিটনের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জের সুজালপুর এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত ফরজান আলী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। বৃহস্পতিবার ভোরেই তার লাশ নিয়ে স্বজনরা গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। দুপুর ১২টার দিকে লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে। জানাজা শেষে দুপুরেই পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, বুধবার রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ইউনিটে এয়ার কুলার মেশিনে শট সার্কিট হয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূচনা হয়। আইসোলেশন ইউনিটে অনেক দাহ্য পদার্থ ছিল। এই কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে সেখানে থাকা পাঁচজন রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে তিন জন করোনা পজিটিভ ছিলেন।
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, নিহতদের মধ্যে যারা করোনা পজিটিভ ছিলেন আইইডিসিআর-এর প্রটোকল অনুযায়ী তাদের লাশের দাফনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর যারা করোনা নেগেটিভ ছিলেন তাদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘটনাটি পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত করা হবে।
(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)