ময়মনসিংহে হাজার ছাড়াল করোনা শনাক্ত

ময়মনসিংহে হাজার ছাড়াল করোনা শনাক্ত

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ বিভাগে বেড়েই চলছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা শনিবার হাজার ছাড়িয়েছে। গত শনিবার করোনা ভাইরাসে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরো ৪৪ জন। এই বৃদ্ধির জেরে করোনা ভাইরাসে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর এবং জামালপুরে মোট আক্রান্ত হলেন ১ হাজার ২৭ জন।

এর মধ্যে ৯৬ জন চিকিৎসক, ৯৪ জন নার্স ও স্বাস্থ্য বিভাগের অন্যান্য

কর্মকর্তা-কর্মচারি রয়েছেন ১৮১ জন।

রোববার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক আবুল কাসেম।  

তিনি জানান, শনিবার বিভাগের ৪১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৬ জন ময়মনসিংহ জেলা এবং ২৮ জন জামালপুর জেলার
বাসিন্দা।

স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, বিভাগে করোনা শনাক্ত ১ হাজার ২৭ জনের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ৪৮৬ জন, জামালপুরের ২৩৬ জন, নেত্রকোনার ২২১ জন ও শেরপুরের ৮৪ জন।
তবে করোনা ভাইরাসে যেমন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, তেমন সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও কম নয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এটাই যেন আশার আলো। কোভিডে আক্রান্ত হবার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪১৩ জন।

সূত্রে আরো জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৫৮৮ চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং ১৩ জনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪১৩ জন।

অপরদিকে করোনায় থাবায় ময়মনসিংহে ৬, নেত্রকোনায় ২, জামালপুরে চার এবং শেরপুরে একজন মারা গেছেন। পহেলা এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ২১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার বিবেচনায় সবার উপরে আছে ময়মনসিংহ জেলা। আর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এখন করোনা সংক্রমণের সবচেয়ে বড় হটস্পট বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একের পর এক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের ফলে চিকিৎসা সেবাও মুখ থুবড়ে পড়ছে। ২০৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬ জন। এছাড়ও ৫৮
জন নার্স এবং আরো ৫৯ জন অন্যান্য স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন। আর ১৩টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন চিকিৎসক, ১৪ জন নার্স ও ৩৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন।

অপরদিকে, নেত্রকোনায় ৮ জন চিকিৎসকসহ ৩৯ জন, জামালপুরে ২৪ চিকিৎসকসহ ৮১ জন ও শেরপুরে ৭ চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ৩০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এমন পরিষংখ্যানে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভুঁইয়া উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘ময়মনসিংহ মেডিকেলের নতুন ভবনটি দ্রুতই করোনা ডেডিকেটেড উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এতে করে চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্টরা সংক্রমণের হাত থেকে যেমন রক্ষা পাবে তেমনি সাধারণ মানুষও এর সুফল ভোগ করতে পারবে। ’

অপরদিকে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম মশিউল জানিয়েছেন, ‘অন্য তিন জেলার চেয়ে ময়মনসিংহ জেলার মানুষ অনেক বেশি। সে হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি। নিজেকে সতর্ক রাখার চেয়ে এখন বিকল্প কিছুই নেই। ’

এদিকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ময়মনসিংহ অঞ্চলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। সারাদিনই সড়কগুলোতে থাকছে মানুষের ভীড়, নেই সামাজিক দূরত্ব। দেদারছে চলছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিকশা। এমনকি সিএনজি চালিত
অটোরিকশাও যাচ্ছে এক জেলা থেকে অন্য জেলা-উপজেলা পর্যন্ত।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর