লাশ গ্রামে নিতে বাধা, কবরের জায়গা দিলো না কেউ!
‌‘করোনায়’ মৃত্যু

লাশ গ্রামে নিতে বাধা, কবরের জায়গা দিলো না কেউ!

অনলাইন ডেস্ক

করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় নওগাঁর বদলগাছীতে এক পোশাক কারখানার শ্রমিকের লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য গ্রামের যমুনা নদীর তীরে তার লাশ দাফন করেছে পুলিশ। ওই শ্রমিকের নাম নাসিমা বেগম (২৫)।  নাসিমা বেগম ওই গ্রামের মাসুদ আলীর মেয়ে।

গতকাল সোমবার সকালের দিকে উপজেলার তাজপুর গ্রামে ঘটেছে এই ঘটনা।  

জানা গেছে, নাসিমা বেগম দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসেন তিনি। এরপর জ্বর ও সর্দি নিয়ে গত ২৩ মে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।

অবস্থার অবনতি হলে রোববার (৩১ মে) দুপুর দেড়টায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে নাসিমাকে রাতে সাড়ে ৮টায় বগুড়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে সাড়ে ৯টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে তার মৃত্যু হয়। পরে করোনা পরীক্ষার জন্য মৃতদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

পুলিশ জানায়, করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় নিহতের মরদেহ গ্রামে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তারপরও দিবাগত রাত ৩টার দিকে গ্রামে নিয়ে আসা হলে গ্রামবাসী বিভিন্নভাবে বাধা প্রদান করেন। পরে পুলিশের সহযোগিতায় লাশ গ্রামে প্রবেশ করলেও কবর দেওয়ার কোনো জায়গা মেলেনি।

এরপর বদলগাছী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ছয়জন পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় সোমবার সকালে তাজপুর গ্রামের ছোট যমুনা নদীর তীরে বাঁধের পাশে নিহতের দাফন সম্পন্ন করেন। জানাজা পড়ান উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ঈমাম আইয়ুব আলী।

এ ব্যাপারে বদলগাছী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‌‘প্রথমে গ্রামবাসীরা বাধা দিয়েছিল। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। গ্রামে কোনো কবরস্থান নেই। এমনকি নিহতের বাবার বাড়িভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। নিহতের মামার জায়গা থাকলেও তারা দেননি। অবশেষে কেউ জায়গা দিতে রাজি না হওয়ায় আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে কিনে নেওয়ার জন্য গ্রামবাসীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকাবাসী তাতেও রাজী হননি। এরপর বিকল্প জায়গা হিসেবে সরকারি জমিতে কবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ’

‘কিন্তু কবর খুঁড়তে যে কোদাল ও সরঞ্জাম দরকার গ্রামবাসীরা তা দিয়েও আমাদের কোনো রকম সহযোগিতা করেননি। অবশেষে পুলিশ সদস্যরাই কবর খুঁড়ে লাশটি নদীর ধারে কবর দিয়েছি’ যোগ করেন আরিফুল ইসলাম।

জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছাইদুর ইসলাম কেটু বলেন, ওই তরুণী ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তিনি যে করোনায় আক্রান্ত এমন বিষয় গ্রামের কেউ জানতো না। এমনকি নিহতের আত্মীয়-স্বজনরাও না।

তিনি বলেন, ‘রাতেই নিহতের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিহতের স্বজনরা তাদের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করতে দেয়নি। পরে রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় দাফন করেছে পুলিশ। ’

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহা. আবু তাহির বলেন, ওই নারী দীর্ঘদিন থেকে ঢাকায় থাকতেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার পর ফলাফল জানা যাবে। তবে নিহতের পারিবারিক ও সরকারি কোনো কবরস্থান না থাকায় পুলিশ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লোকজনের মাধ্যমে সরকারি জায়গায় যথাযথ মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর