একইদিনে দুজনের মৃত্যু খুবই কষ্টকর: প্রধানমন্ত্রী

একইদিনে দুজনের মৃত্যু খুবই কষ্টকর: প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেছেন, একইদিনে পরপর দু'জনের মৃত্যু খুবই কষ্টকর। করোনা এমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে যে আমাদের দলের কেউ মারা গেলে তার পরিবারের কাছে ছুটে যাবো একটু সান্ত্বনা দেবো, সেই সুযোগ পাচ্ছি না। যখন একটা কাজ করে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশের দারিদ্র্যসীমা আমরা কমিয়ে এনেছি, মাত্র ১০ বছরের মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছিলাম, ঠিক তখন এমন একটা অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাস, সারা বিশ্বটাকে স্থবির করে দিল। সারা বিশ্বে যেন কেমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করল।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত উন্নত-অনুন্নত দেশের সবাই ভয়ে আছেন। এই আতঙ্কটা এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেটা দুঃখজনক।

আজ রবিবার সংসদে আসার সময় আমাকে অনেক জায়গা থেকে সংসদে না আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি অন্ততপক্ষে দেশের মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে।

পাশাপাশি করোনার ভয়ে মানুষগুলোকে তো না খেয়ে মারতে পারি না। তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের জীবনযাত্রা যেন চলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

রাজনৈতিক ও পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ আওয়ামী লীগ পরিবারের দু’জন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারিয়ে সংসদে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে বেলা প্রায় সাড়ে ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। স্পিকার  দিনের কার্যসূচি স্থগিত করে সম্পূরক কার্যসূচিতে সংসদে শোক প্রস্তাব আনেন।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়ায় শোক প্রস্তাব আনার সুযোগ নেই। তাই শোক প্রস্তাবে তাকেও স্মরণ করা হয়। স্পিকার দুই নেতার কর্মময় জীবনী তুলে ধরেন। পরে তার ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সংসদে তার মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করা হয়। আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, আওয়ামী লীগের এমপি মৃণাল কান্তি দাস (মুন্সীগঞ্জ -৩), ডা. হাবিবে মিল্লাত (সিরাজগঞ্জ-২), ও বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির আসনের মুস্তফা লুৎফুল­াহ (সাতক্ষীরা-২)। পরে মরহুম দুই নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সংসদে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।

এর আগে তাদের স্মরণ করে নিজ নিজ আসনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ দুই নেতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, একইদিনে পরপর দু’জনের মৃত্যু খুবই কষ্টকর। খুব দুঃখজনক। এরপর কন্ঠরুদ্ধ হয়ে আসায় কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে কাঁদতে দেখা যায়। নিরবতা নেমে আসে অধিবেশনে। এসময় টিভির পর্দায় দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে তার মুখের মাস্কের ওপর গ্লাবস পড়া হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাশি দিতে দেখা যায়।

এরপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আসলে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বলতে। দু’জনকে হারানো খুবই দুঃখজনক। রাজনীতিতে পাশে থেকে যারা সাহস ও সমর্থন দিয়েছেন, তারা একে একে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। নাসিম ভাইয়ের পর শেখ আব্দুল্লাহ ভাইও চলে গেলেন।

বর্তমান করোনা যুদ্ধের সময় একইদিনে দুই সহযোদ্ধাকে হারানো খুবই কষ্টদায়ক। এসময় দুই নেতার অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশে ফেরার পর পদে পদে আমাকে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এসময় যে দু’জনকে আমি সব সময় পাশে পেয়েছি একই দিনে তাদের হারালাম।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের একজন কর্মীও যেখানে মারা গেলে, আমরা সবাই ছুটে গেছি, জানাজা পড়া, শ্রদ্ধা জানানো, পরিবারের সাথে দেখা করা, কিন্তু এখন এমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ যে আমরা এবার কিছুই করতে পারলাম না। কাউকে দেখা বা তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া বা তাদের সঙ্গে একটু কথা বলার সুযোগটাও কেন যেন পেলাম না, সেটাই সব থেকে কষ্ট।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে মোহাম্মদ নাসিমের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে ১৪ দলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কারণ তিনি সকলকে নিয়ে চলতে পারতেন। শরীক দলের সদস্যরাও তাকে ভালো জানতেন। তিনি সফলতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যুতে বিরাট ক্ষতি হয়েছে নিঃসন্দেহে।

এসময় শেখ হাসিনা আরি বলেন, একটা আতঙ্ক, ভয়, ভীতি, মৃত্যু আতঙ্ক যেন সারা বিশ্বকে পেয়ে বসেছে। এটাই একটা অদ্ভুত ব্যাপার, আমি জানি না, এ ধরনের পরিবেশ আগে কেউ আর কখনো দেখেনি। এসময় তিনি পরিবার সদস্যদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি দুই নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোহাম্মদ নাসিম ওয়ান ইলেভেনের সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় স্ট্রোক করেছিলেন। ওই সময় কারাবন্দি সালমান এফ রহমানের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স সব সময় জেলগেটে তার পরিবারের পক্ষ থেকে রাখা থাকতো। ওই অ্যাম্বুলেন্সে করে মোহাম্মদ নাসিমকে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় বলে তিনি সেই যাত্রায় বেঁচে যান। তবে ওই সময় তার শরীরের একপাশ প্যারালাইজড হয়ে যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চেয়েছিলাম, বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকুক এবং তা আছেও। অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে যাচ্ছিলাম। জাতির পিতার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। দেশের মানুষ একটা সুন্দর জীবন পাবে, অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বার বার আঘাত পেতে হচ্ছে, এ কথা বলেই চুপ হয়ে যান প্রধানমন্ত্রী।

সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মরণশীল। একবার জন্মগ্রহণ করেছি, মৃত্যু অবধারিত, সবার জন্য এটা প্রযোজ্য, এটা হবেই। যখন একটা কাজ করে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের আশা ছিল আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করব, দেশের দারিদ্র্যসীমা আমরা কমিয়ে এনেছি, কোথায় ৪০ ভাগ ছিল, সেটাকে ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে পেরেছি, মাত্র ১০ বছরের মধ্যে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছিলাম, ঠিক তখন এমন একটা অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাস, যা কেউ চোখেও দেখতে পারে না, বুঝতেও পারে না, সারা বিশ্বটাকে স্থবির করে দিল। সারা বিশ্বে যেন কেমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করল।

এসময় তিনি বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির বিস্তার রোধ করার বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যে এলাকাটায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেখানে লকডাউন করছি। পাশাপাশি মানুষের জীবনযাপন যেন স্বাভাবিক থাকে সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি অন্ততপক্ষে দেশের মানুষ যেন স্বাস্থবিধি মেনে চলে। পাশাপাশি করোনার ভয়ে মানুষগুলোকে তো না খেয়ে মারতে পারি না। তাদের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের জীবনযাত্রা যেন চলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে বলে আশা করছি।

সংসদের বাজেট ও অষ্টম অধিবেশনের মুলতবি বৈঠক সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়। করোনাকালীন জরুরি পরিস্থিতিতে চলমান অধিবেশনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৈঠকে অংশ নেন মন্ত্রী-এমপিরা ও সংসদের কর্মকর্তারা।

সূত্র- বাংলাদেশ প্রতিদিন

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর