ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভাঙার ‘এজেন্ডায় মেতেছেন’ মুসাপুত্র ববি

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভাঙার ‘এজেন্ডায় মেতেছেন’ মুসাপুত্র ববি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের ভেতরে নানা ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও অপতৎপরতা চালাচ্ছেন মুসা বিন শমসের পুত্র ববি হাজ্জাজ। কুৎসা রটাচ্ছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও।

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে ভারত-বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভাঙার ‘এজেন্ডা’ নিয়ে অপচেষ্টায় মেতেছেন বিভিন্ন ‌‘অপকর্মের হোতা’ এই তরুণ।

দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত বলেও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

ফেসবুকে দেওয়া বিভিন্ন স্ট্যাটাস ও সভা-সমাবেশে দেওয়া বক্তব্য ও দলীয় পোস্টারের লেখা বিশ্লেষণেও এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।

তাঁর উসকানিমূলক বক্তব্য ও মন্তব্যে অনেকের ধারণা, ববি হাজ্জাজ স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সঙ্গে গোপন আঁতাতে এসব অপকর্মে লিপ্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যোগদান ঠেকাতে মাঠে নামেন ববি হাজ্জাজ। গত ৩ মার্চ এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সমাবেশ করেন।

ওই সমাবেশের পোস্টারে তিনি লেখেন, ‘ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের নির্লজ্জভাবে মুসলিম দমন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন পাস, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ভারতের উগ্র সহিংসতার বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান। ’ ওই সময়ে তিনি নিজের  ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘সে নো টু মোদি। ’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে ববি হাজ্জাজ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট গড়েন। জোটের নাম দেন ‘গণঐক্য’। নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে বেছে নেন মুসলিম লীগের প্রতীক ‘হারিকেন’। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ববি হাজ্জাজ ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নবাব স্যার সলিমুল্লাহর কবর জিয়ারতের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন ববি হাজ্জাজ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারতে যাননি। মুসলিম লীগের সঙ্গে ঐক্য ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের সঙ্গে তিনি ঐক্য করতে রাজি। ’

গত বছরের ৮ অক্টোবর ববি হাজ্জাজ বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একটি ক্ষুদ্র সমাবেশ করেন। সমাবেশে তিনি ভারতবিরোধী উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। নিজ দলের নামে ছাপানো পোস্টারে ববি হাজ্জাজ লেখেন, ‘ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গর্জনের প্রেরণা দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার দীপ্ত সৈনিক শহীদ আবরার। ’

গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর ববি হাজ্জাজ কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে একটি আলোচনাসভা করেন। ওই সভার ব্যানারে লেখেন, ‘ভারতের কাশ্মীরে মুসলিম নির্যাতন ও মুসলমানদের অধিকার হরণের প্রতিবাদে আলোচনাসভা। ’ আলোচনাসভা থেকে তিনি ভারতের সীমান্ত অভিমুখী যাত্রার ঘোষণা দেন। ওই দিনই তিনি ফেসবুকে ভারতবিরোধী এক দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি কাশ্মীরি জনগণের ওপর নির্যাতনের কথা বলেন এবং ভারতের তীব্র সমালোচনা করেন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধেও সরকার কেন যুদ্ধের ভাষায় কথা বলছে না—এ প্রশ্নও তোলেন।

তিনি লেখেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে ১০/১৫ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে বড় ঝামেলায় আছি, যার সমাধান আওয়ামী লীগ সরকার করতে পারছে না। মিয়ানমারকে কোনো প্রকার হুমকি দিতেও তারা নারাজ। তা হলে মিয়ানমার কেন সমাধানে আসবে? বিশেষ করে ভারত-চীন কেউ আমাদের হয়ে কথা বলছে না। ভারতের বিজেপি সরকার তো উল্টো এই সুযোগ নিতে চেষ্টা করছে আসামে এনআরসি দিয়ে। এনডিএম (নিজের দল) ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। আমরা দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা করে এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠব। ’

২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি চট্টগ্রামে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সীমান্ত অভিমুখে যাত্রা করার প্রস্তুতিমূলক সভায় বক্তব্য দেন। চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘সরকার সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে রেখেছে বলেই আজ  মিয়ানমারের কাছেও আমাদের মাথা নত হয়ে থাকতে হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও চলছে নীরব মুসলিম বিতাড়ন ও নিধন। মোদি সরকার চর দখলের মতো কাশ্মীর দখল করে নিয়েছে। আসামে বিতর্কিত নাগরিকত্বের তালিকা হয়েছে। এখান থেকেও বাংলাদেশে মুসলমানদের পুশ ব্যাক করবে। ’

গত বছরের ৯ নভেম্বর নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে বাবরি মসজিদ মামলার রায় নিয়েও উসকানিমূলক মন্তব্য করেন।  

ভারতবিরোধিতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী, তাদের বড় ভাইসুলভ আচরণ রয়েছে। এটা ত্যাগ করতে হবে।

সম্পর্কিত খবর