‌‘সরকারের চেয়ে বেশি ব্যর্থ আমরা জনগণ’

‌‘সরকারের চেয়ে বেশি ব্যর্থ আমরা জনগণ’

অনলাইন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিকল্প পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেছেন, বর্তমানে করোনা মহামারীতে করোনা সঙ্কট ছাড়াও আরও কিছু নতুন সমস্যা যুক্ত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখছি যে, করোনা সমস্যার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞের মহামারিও দেখা দিয়েছে। এমন সব বিশেষজ্ঞ গণমাধ্যমে আসছেন এবং এমন সব কথাবার্তা বলছেন যাতে এই সঙ্কট সমাধানের তো উপায় পাওয়া যাচ্ছেই না, বরং সঙ্কট আরও ঘনীভূত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এরা আসলেই কি বিশেষজ্ঞ? এতো বিশেষজ্ঞ এলো কোত্থেকে?

বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লিনিক সহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং বিএমআরসি’র সভাপতি এই প্রবীণ চিকিৎসক একটি গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, করোনা নিয়ে এখন একটি ব্যবসা শুরু হয়েছে। সবাই সবার জায়গা থেকে ব্যবসা করছে। এই ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির সুযোগে গণমাধ্যমে এমন সব ব্যক্তিরা আসছেন এবং এমন সব কথাবার্তা বলছেন যা খুবই উদ্বেগজনক এবং বিভ্রান্তিকর।

অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে জড়িত। কাজেই কিছু কিছু ব্যক্তি আসছেন যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় চাকরি করে নিজেদের উপদেষ্টা পরিচয় দিচ্ছেন। অনেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়তো কোন প্রকল্প করেই নিজেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা পরিচয় দিচ্ছেন। যাদের কোন ব্যাকগ্রাউন্ড নেই এবং যারা কোন বিজ্ঞানভিত্তিক কথাবার্তাও বলছেন না।

তিনি গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ করেন, যাদের গণমাধ্যমে করোনার বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়ে আসবে, তাদের আনার আগে যেন অবশ্যই যাচাই বাছাই করা হয় যে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী। তারা আসলে করোনা সম্পর্কে কিছু জানেন কিনা। কারণ করোনা একটি জনস্বাস্থ্যের ইস্যু এবং এমন কোন ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে আনা উচিত নয় যাদের পাবলিক হেলথ সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান নেই।

তিনি বলেন, আইইডিসিআর-এর মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা যেমন করোনা বিশেষজ্ঞ এবং করোনা নিয়ে তিনি সবকিছু জানেন। আমি তাকে দেখি না, বরং এমন সব ব্যক্তিদের দেখি যারা গণমাধ্যমে এসে সরকারের ভুল, সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। সরকারের ভুল সরকারের ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন। সরকারের ভুল বা সরকারের সীমাবদ্ধতা অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু একজন ব্যক্তি যখন বিশেষজ্ঞ হিসেবে আসবেন তখন তাকে এভিডেন্স বেইজড এবং বিজ্ঞানভিত্তিক কথাবার্তা বলতে হবে। শুধু সরকারের সমালোচনা করে লাভ নেই।

অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী বলেন, উপসর্গবিহীন করোনা রোগীরা যেমন করোনা সংক্রমণের জন্য একটি বড় ঝুঁকি, তেমনি জ্ঞানবিহীন বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের করোনা সংকটের জন্য একটি বড় বিপদের কারণ। তিনি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকে আরো দায়িত্বশীল এবং সচেতনতা অবলম্বন করতে বলেন।

অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী মনে করেন যে, সরকারের ব্যর্থতা আছেই, কিন্তু সরকারের থেকে বেশি ব্যর্থ হলাম আমরা জনগণ। যারা এই করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। নিজেদেরকে সুরক্ষিত করতে পারছি না।

অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমি ১৯৯৭ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষাভবে জড়িত। কিন্তু এত নেতৃত্ববিহীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমি কখনো দেখিনি। তারা একের পর এক বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। তারা এক সময় বললো যে, মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলবে, পরে আবার সেটা তারা সংশোধন করলো। গতকাল তারা বললো যে, উপসর্গহীন রোগীরা করোনা ছড়ায় না, এরপরে আবার তারা সংশোধন করলো। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন বলে নয়, আসলেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যোগ্যতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে।

প্রবীণ এই চিকিৎসক বলেন, যেভাবে লকডাউন দেওয়া হয়েছে, এই লকডাউন নিয়েও আমি সন্তুষ্ট নই। এই লকডাউনে খুব একটা কাজ হবে না বলে আমার মনে হয় না। করোনা পরিস্থিতি উন্নতির ক্ষেত্রে এটা কোন ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি না। তিনি পরামর্শ দেন যে, পুরো ঢাকা না হলেও গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে লকডাউন করতে হবে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর