না বলা সে কথা কেবলি দহন

না বলা সে কথা কেবলি দহন

হাসিনা আকতার নিগার

গল্প আর বাস্তব জীবনের মাঝে কোন ফারাক খুুুঁজে পায় না তরী। হয়ত বা বৈরী পরিবেশে জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করেনি বলে এতদিন সে জানতে পারেনি জীবনের অসমাপ্ত গল্পটা যে অসমাপ্ত রয়ে যাবে।

শুধু মনে হয় তার জীবনের না বলা কথাগুলো না জেনে, সবাই কেন তাকে বলে সংসার করতে গেলে অনেক কিছু সইতে হয়। কিন্ত যার বিবেক বোধ আছে সে কি করে মেনে নিবে তার এ অপমান? সে তো বলতে পারে না আজ তোমরা যে যৌন সন্ত্রাস বা নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ করছ তোমরা কি জানো কত নারী নিরবে এমন নির্যাতনে শিকার হয় শুধু হাসি হাসি সংসার জীবনটা টিকিয়ে রাখতে।

তরী পারেনি কারণ সে একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মানুষ। তার অভিমানী এ মনটা বড় বেশী আবেগী। তাই ভালোবাসা শব্দটা জীবনের প্রথম প্রহরেই কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো হৃদয়ের সবটুকু উচ্ছাসকে বান জলের ভাসিয়ে দিয়ে তাকে করেছে শূন্য। সেই থেকে মনের দুয়ারে কড়া নাড়ার শব্দটাকে আর শুনতে চাইনি।

জীবনের পথটাকে নিজের সংগ্রাম দিয়ে একটু একটু করে তৈরী করতে গিয়ে নিজে যেন একটা যন্ত্র হয়ে গেছে।

কিন্তু মানুষ বলে, মনের দুয়ারে চৈতালী হাওয়া এসে দোলা দিলে তা আর যুক্তি মানে না। এমনি করে তরীর জীবনের মধ্য প্রহরের নতুন করে ভালোবাসার ডালি নিয়ে এলো পলাশ। যে মানুষটা বরষার জলে নীল শাড়ী পরতে ভুলে গেছে সেই মানুষটিকে পলাশ কেমন করে জানি একটু একটু করে আবার জাগিয়ে দিলো।  

পলাশ বলত ‘ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, বন্ধ দুয়ার ভেঙ্গে সে আসবেই, তরী তুমি মানো আর নাই মানো। ’ 

পলাশের কথাতে তরী কেমন জানি দুর্বল হয়ে যায়। টলে যায় তার মনের দৃঢ়তা। যে ভালোবাসা তার জীবকে তছনছ করে দিলো সে ভালোবাসা কি আবার তাকে বাচাঁর জন্য অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে ধরছে। তবে কি এ কারণে আজকাল তার একাকীত্বটা বেশী মনে হয়। এমনি করে নিজের অজান্তে পলাশ আর তরী আবার স্বপ্ন দেখে ভালোবাসা, বন্ধুত্ব আর একে অপরের সাথী হয়ে জীবনের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেবার।  

কিন্তু জীবনের সুর -তাল- লয়- ছন্দটা আবার ও ঠিক করে বাঁধা হলো না তরী- পলাশের। তরীর স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। পলাশ যে ভালোবাসার কথা বলত তা যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। বাস্তব জীবনে তরী তার কাছে হয়ে উঠে একটি পণ্য। তার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সে ব্যবহার করতে শুরু করে তরীকে।  

এবার তরীর শুরু হলো অস্তিত্বের লড়াই। তার আর্দশ নৈতিকতা সবকিছু তাকে ধিক্কার দিতে থাকে। এ কোন জীবন তার। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার ভাবে আত্মহননের। আবার মনে করে ‘না সে তো হেরে যেতে জন্মায়নি। তবে কেন ভালোবাসার জন্য ছলনাময় সেই কীটের কাছে ধর্ষিত হবে তরী। ' 

সকল কিছু ছেড়ে বন্ধন মুক্ত জীবনে নতুন করে পথ চলা শুরু করে তরী। জীবনের অসমাপ্ত গল্পটা তার অসমাপ্তই রয়ে গেল কিছু দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে। তাই দিন শেষে পত্রিকার পাতাতে দেশ - বিদেশের নারীদের যৌন হয়রানির বা সন্ত্রাসের খবর দেখে ভাবে, এই সমাজে কত নারী কতভাবে যে যৌন সন্ত্রাসের শিকার তার খবর কি রাখে সকলে। দামি শাড়ি আর বিলাসি জীবনের আড়ালে কত নারীর রাত কাটে মনের দহন আর বোবা রোদনে।

লেখক: কলামিস্ট।   

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল