সাংসদ দুর্জয়ের ক্ষমতার দাপট!

সাংসদ দুর্জয়ের ক্ষমতার দাপট!

অনলাইন ডেস্ক

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটে অবৈধভাবে স্পিডবোট চালানো সবই চলে মানিকগঞ্জ-১ আসনের এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের ‘নির্দেশে’।

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজ নির্বাচনী এলাকায় তিনি হরহামেশায় করে যাচ্ছেন এসব কাজ।

এছাড়া অবৈধ ড্রেজিং ব্যবসার সঙ্গেও তিনি জড়িত। আর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব অপকর্মের ফল হিসেবে তিনি হাতে পাচ্ছেন প্রতি মাসে নগদ লাখ লাখ টাকা।

মানিকগঞ্জ জেলার চার পাশে বেশ কয়েকটি নদী রয়েছে। আরিচা বন্দরের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে যমুনা। প্রয়োজন না থাকলেও এই যমুনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিংয়ের কারণে বন্দর হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতি বছর নদীর তীর ভাঙছে, শত শত পরিবার হারাচ্ছে বসতভিটা।

জানা যায়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) প্রতি বছর নাব্যতা সংকট কাটাতে নদীতে ড্রেজিং করে। তবে এবার সে সংকট না থাকলেও শুধু সংসদ সদস্য দুর্জয় সিন্ডিকেটের ব্যবসার জন্য ড্রেজিং করা হয়। সরকারি কোষাগারে নাম মাত্র মূল্য দিয়ে সে বালু কিনে প্রায় কোটি টাকায় বিক্রি করে দুর্জয় সিন্ডিকেট। এই কোটি টাকার ৬০ ভাগ নিয়েছেন দুর্জয় আর ৪০ ভাগ পেয়েছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অবৈধ এ ড্রেজিংয়ের কারণে ভয়াল ভাঙনের কবলে পড়েছে আরিচা বন্দর।

অন্যদিকে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে চলাচলকারী অবৈধ স্পিড বোটের নিয়ন্ত্রণ এমপি দুর্জয় নিজের হাতেই রেখেছেন। এ নৌরুটে দেড় শতাধিক স্পিড বোট চলাচল করে। প্রত্যেকটি বোট থেকে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এ টাকার অর্ধেক পান এমপি নিজে এবং বাকি অর্ধেক পায় তার সিন্ডিকেট।

এছাড়া ভেকু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে উর্বর ফসলী জমির মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করারও অভিযোগ আছে দুর্জয়ের বিরুদ্ধে। যেখনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফসলী জমির ক্ষতি না করতে এবং পতিত না রাখার কথা বলে আসছেন, সেখানে জনপ্রতিনিধি হয়ে ক্ষমতার জোরে তিনি কৃষকের জমির উর্বর মাটি বেচে দিচ্ছেন। ওই সংসদীয় আসনে এ ধরনের যত অপকর্ম হয়, তার সবই এমপির নির্দেশনায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, সংসদ সদস্য দুর্জয় ও তার পরিবারের সদস্যদের ভয়ে কোনো ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিছু বলতে সাহস পান না। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে অনাস্থা আনেন। যে কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ যেতে সাহস পায় না। তিনি এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছেন যে সংসদীয় এলাকায় উনার বা তার পরিবারের যে কোনো সদস্যের নাম শুনলেই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও ভয়ে কাঁপে। তার পরিবারের কাছে কেউ নিরাপদ নয়।

জানা গেছে, দুর্জয়ের বাবা অধ্যক্ষ সায়েদুর রহমান ১৯৭৩ সনে একই আসনে সাড়ে ৩ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর খন্দকার মোস্তাকের প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম জাহিদ বলেন, যারা দুর্দিনে আওয়ামী লীগ করেছে তারা এখন নির্যাতিত। ৭৫ সালের পর থেকে পদে পদে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ওইসব নেতাকর্মীরা। কিন্তু আওয়ামী লীগ তিন বার ক্ষমতায় থাকার পরও ওই মানুষগুলোর কোনো খোঁজ নেই। তারা এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। যারা বিএনপি-জামায়েত ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে, তাদের দাপটে প্রবীণরা হারিয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা কর্মীদের প্রয়োজন শেষ। তারা এখন ঘরে ঢুকে গেছে। বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা নেতাদের অত্যাচারে নির্যাতিত হচ্ছেন প্রবীণ নেতাকর্মীরা। আর এটা হচ্ছে বর্তমান সংসদ সদস্যের কারণেই।

তবে এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার অবৈধ আয়ের এসব উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার আয়ের উৎস তো এনবিআর দেখবে। এনবিআর দেখুক আমার আয়ের উৎস। আমার টাকা কই গেলো। ’

সম্পর্কিত খবর