‘নিয়ম মানলে জুলাইয়ে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার কমতে পারে’

‘নিয়ম মানলে জুলাইয়ে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির হার কমতে পারে’

অনলাইন ডেস্ক

লকডাউনসহ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ যথাযথভাবে অনুসরণ করা গেলে জুলাই মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সহণীয় মাত্রায় চলে আসবে এবং তারপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।

আশার বাণী শোলালেন ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর। তিনি বলেছেন, লকডাউনসহ করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ যথাযথভাবে অনুসরণ করা গেলে জুলাই মাসের শেষের দিকে দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সহণীয় মাত্রায় চলে আসবে।

আরও বলেন, চলতি সপ্তাহে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে সেটা হয়তো আরো কয়েকদিন থাকবে।

কানাডার বাংলা পত্রিকা নতুনদেশ'র প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সাথে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে ভার্চ্যূয়াল আলোচনায় আইইডিসিআর'র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ভাইরাসের পরিস্থিতিসহ সরকারের নানা পদক্ষেপের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।

গত ঈদে ছুটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের গ্রামে ছুটে যাওয়া এবং ফিরে আসাকে বর্তমানের সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেন এই বিশেষজ্ঞ।

ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ঈদে গ্রামে যা্ওয়া মানুষদের প্রায় সবাই ৩১ মে বা ১ জুন আবার ঢাকায় ফিরেছেন। সেই সময় থেকে সংক্রমণ সুপ্তিকাল ১৪ থেকে ২১ দিন বিবেচনায় নিয়ে বলা যায় আরও কয়েকদিন সংক্রমণের বর্তমান হারটা অব্যাহত থাকবে।

এরপর থেকেই এটি কমতে শুরু করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে সেজন্য অবশ্যই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে বলেও তিনি সতর্ক করে দেন।

ড. এ এসএম আলমগীর বলেন, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় নিয়ে মে মাসে ভাইরাসটি তার চূড়ায় (পিক) এ উঠবে বলে আমরা ধরে নিয়েছিলাম। মে মাস পর্যন্ত আমাদের আমাদের পূর্বাভাষের শতভাগই সঠিক হয়েছে। কিন্তু ঈদের ছুটি এবং পরবর্তী কিছু ভুলের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়।

রোগ এবং রোগতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইইডিসিআর করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সরকারকে কখন সতর্ক করেছে এবং কি ধরনের পরামর্শ দিয়েছে জানতে চাওয়া হলে ড. আলমগীর বলেন, উহানে ভাইরাসটি চিহ্নিত হ্ওয়ার সময় থেকেই আমরা খোঁজখবর করতে শুরু করি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই আমরা নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করি। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নিজেদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই অন্তত চারটা সিএমই ( ভাইরাসের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য গতিবিধি সংক্রান্ত বিশ্লেষণ) করেছি। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সরকারের জন্য ‘জাতীয় প্রস্তুতি পরিকল্পনা’ তৈরি করে হস্তান্তর করা হয়।  

তিনি বলেন, সেই সময় অনেক মুরুব্বী বাংলাদেশের এসব মহামারী আসবে না, তোমরা কেন এটা নিয়ে চেঁচামেচি করো’- এই জাতীয় বক্তব্য দিয়েছেন। এতে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা গেছে।

ভাইরাস সনাক্তকরনে টেস্ট নিয়ে শুরু থেকেই নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ আছে, সেই অসন্তোষ এখনও বহাল আছে। টেস্টিং সক্ষমতা বাড়ানো গেলো না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আলমগীর বলেন, শুরু একটা ল্যাব থেকে বর্তমানে ৬১টি ল্যাবে ভাইরাসের টেস্ট হচ্ছে। এটি অবশ্যই সক্ষমতা বৃদ্ধি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে তো মেওলিক গবেষণার কোনো ল্যাব নেই বললেই চলে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের রিসার্চ ল্যাব, পিসিআর মেশিন ছিল। তারা রাতারাতি সেগুলোকে ডায়াগনস্টিক ল্যাবে রূপান্তরিত করেছে। আমাদের অধিকাংশ ল্যাবেই পিসিআর মেশিন নাই। যে পিসিআর আছে তার সবগুলোই আবার ডায়াগনস্টিকের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। আবার যে পিসিআরগুলো আছে সেগুলো ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনয়ি সংখ্যক মাইক্রোবায়োলোজিস্ট, ভাইরোলোজিস্টসহ প্রশিক্ষিত কর্মী নাই। অনেকেই থিওরি হিসেবে পিসিআর পড়েছেন কিন্তু সেগুলো নিয়ে কাজ করেননি। সেই সব জায়গায় আমাদের সমস্যা পোহাতে হয়েছে। এখনো আমাদের সমস্যার ভেতর দিয়েই যেতে হচ্ছে।

তিনি স্বীকার করে বলেন, শুরু দিকে আমরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থও ছিলাম, এই কাজগুলো আমরা করতে পারব কী না। প্রথম দিকে ভলান্টিয়ারদের দিয়ে এই কাজগুলো করানো হয়েছে।

করোনা সনাক্তকরণের টেস্টের ফলাফল নিয়েও নানা ধরনের অভিযোগ আছে, ফলাফল পাওয়ায় দীর্ঘসূত্রতা ছাড়াও ভুল ফলাফলের অভিযোগ আছে।

আইইডিসিআর'র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি ল্যাবে ৪/৫টা করে মেশিন নিয়ে আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। ফলে এখনো আমাদের সংকটের ভেতর দিয়েই যেতে হচ্ছে। প্রতিটি ল্যাবের আবার টেস্টিং সক্ষমতাও সমান না।  

তিনি বলেন, কোনো ল্যাবে যদি কোনো একটি মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয়, সেটি ঠিক করতে ঢাকা থেকে লোক পাঠাতে হয়। ওই মেশিনটি যদি দিনে ৩০০ নমুনা প্রসেসিং করার সক্ষমতা সম্পন্ন হয়, তা হলে তিন বন্ধ থাকলে ৯০০ নমুনা জমে যায়।  

তিনি দাবি করেন, ২/১টা জায়গা বাদে এখন প্রায় সব জেলায়ই পরীক্ষা করা যায়। ফলে যথাসময়ে ফলাফল দেয়ার চেষ্টা চলছে।

ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসএমস এ টেস্টের রেজাল্ট পাঠানোর আগে সেটি একটি নথিতে উঠানো হয়। সেখান থেকে এসএমএস তৈরি করা হয়। পুরো কাজটি হাতে আরেকটা পদ্ধতি হচ্ছে একটা রুল শিটে সারা দেশের রেজাল্টগুলো তোলা হয়। এই সময় ২/১টি ফলাফল উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। প্রায় প্রতিদিনই এরকম হচ্ছে।  

তিনি বলেন, এটি পুরোটাই ক্লারিক্যাল এরর। একরাতে ১৫ হাজার ফলাফল নথিভূক্ত করতে হয় বলে এই ধরনের ভুল হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর