রংপুরে ১০৩টি ইউনিয়নের আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী
বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি

রংপুরে ১০৩টি ইউনিয়নের আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী

নদীর পানি বিপদসীমার উপরে, মিলছে না ত্রাণ
রেজাউল করিম মানিক, রংপুর থেকে

ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে,তলিয়ে গেছে সহস্রাধিক হেক্টর জমির ফসল, পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের ১০৩টি ইউনিয়নের আড়াই লাখ মানুষ, বসতবাড়িতে পানি ঢোকায় অনাহারে দিন কাটাচ্ছে তারা। মিলছে না ত্রাণ সহায়তাও।

এদিকে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর পাট, ভুট্টা ও চিনা বাদাম ক্ষেত তলিয়ে গেছে।

তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

অন্যদিকে পানিবৃদ্ধির সাথে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্ন। গত২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার নদীর ভাঙনে ২৩০টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ।

পাউবো সূত্র জানায়, ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুর অঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, সানিয়াজান ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সোমবার সাকলে তিস্তার পানি ব্যারেজ পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি ব্রীজ পয়েন্টে ৭৬ সেন্টি মিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৭৭ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের ৩টি উপজেলার ১৪টি, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ১৭টি, কুড়িগ্রামের ৯টি উপজেলার ৫১টি, নীলফামারীর ৩টি উপজেলার ৭টি ও গাইবান্ধার ৩টি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে আড়াই লাখ মানুষ।

গত ৪ দিন ধরে ঘরবাড়িতে পানি উঠায় চরম বিপাকে পড়েছে বানভাসী মানুষেরা। ঘরবাড়ি ছেড়ে এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু বাধ কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। বন্যাকবলিত মানুষগুলো বলেছেন, পানিবন্দী হয়ে অনাহারে থাকলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি তেমন কোনো সাহায্য সহযোগিতা।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজগর আলী জানালেন, হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন তারা। পানিবন্দী পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে শীঘ্রই বিতরণ করা হবে ত্রাণ সামগ্রী।

লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউপির চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান বলেন, যেভাবে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে এই ইউপির মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ জন্য তিনি ওই এলাকার পানিবন্দী মানুষদের খোঁজ-খবর নিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে পানিবন্দী এসব লোকজনদের সরকারি সাহায্যের আবেদনও জানান তিনি।

আদিতমারীর মহিষখোচা ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন জানান, প্রতিদিনই তিস্তার পানি বাড়ছে, সেই সাথে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

তিনি জানান, তার ইউনিয়নের ৬ হাজার পরিবার ৪ দিন থেকে পানিবন্দী হয়ে থাকলেও এখনও মেলেনি তেমন সাহায্য সহযোগিতা।

চিলমারী উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. রায়হান শাহ জানান, চিলমারীর ৪টি ইউনিয়নই নদীবেষ্টিত, ব্রহ্মপুত্রের পানি আকস্মিক বেড়ে যাওয়া পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার, পানিবন্দী পরিবারগুলোর মাঝে শীঘ্রই ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম জানান, রংপুর অঞ্চলের বৃহৎ ৪টি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত ৫টি জেলায় ১৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা ও ৭৪৫ মে.টন জিআরের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে 

তিনি জানান, সরকারি হিসাব মতে রংপুর অঞ্চলের ৫ জেলার ১০৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। তবে ত্রাণ সামগ্রীর ঘাটতি নেই বলে তিনি দাবি করেন।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানান, ভারতে ভয়াবহ বন্যা হওয়ায় তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো বাড়তে পারে বলেও জানান পাউবোর এই কর্মকর্তা। ভাঙন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে সেসব এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর