সন্তান হারা এক বাবার আর্তি

সন্তান হারা এক বাবার আর্তি

নোয়াখালী প্রতিনিধি

আইসিইউতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখা যায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জব্বর ইউনিয়নের চর রশিদ গ্রামের নাদিয়া ইসলাম নামে ১ বছরের শিশুকে। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার ৬৯/ডি গ্রীনরোড পান্থপথ পুরাতন গ্যাস্টোলিভার ভবনের ইউনিহেলথ স্পেশালাইজ হাসপাতালে।

নাদিয়া ইসলামের বাবা মো. নাছির উদ্দিন জানান, গত ১৯ জুন আমার মেয়ের কপালের উপর একটি ফোড়া উঠতে দেখি, পরের দিন ২০ জুন সকালে মেয়ে যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন দেখা যায় তার বাম চোখ লাল এবং ফুলে যায় সাথে জ্বর, পাতলা পায়খানা। ২৩ জুন মেয়ের অবস্থা খারাপ দেখে আমি রাত ১ টার সময় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি দিয়েছি।

২৪ তারিখে ডিউটি ডাক্তার ওয়াডে এসে ১ ঘণ্টা পর ডা. লিয়াকত আলী মুন্সি আমাকে ডেকে বলে আপনার মেয়ে হাটপেল করেছে তাকে আইসিইউতে ভর্তি দিতে হবে তাই তাকে ঢাকা নিতে হবে। আমি একটা এ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকা নিয়ে বেলা ১ টার সময় ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি দেওয়ার পর ডিউটি ডা. নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে নেওয়া কেইচ সামারি দেখে আমাকে বলে মেয়েকে আইসিইউতে ভর্তি রাখতে হবে এবং
আইসিইউতে ভর্তি দিতে হলে আপনি ফাইলে সই করতে হবে কারণ আপনার মেয়ে মারা গেলে হাসপাতাল কতৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। কিছুক্ষণ পর গেটে থাকা দারোয়ানরা আমাকে বলে এই হাসপাতালে আইসিইউ নেই আপনার মেয়েকে অন্য হাসপাতালে নিতে হবে। তখন তারা আমাকে ৬৯/ ডি গ্রীনরোড় প্রন্থপথ পুরানা গ্যাস্টোলিভার ভবন ঢাকা-১২০৫, ইউনিহেলথ স্পেশালিইজ হাসপাতাল দেখিয়ে দেন।

ওইদিন আছরের পর আমার মেয়েকে আইসিইউতে ভর্তি দিয়ে আমরা চলে যায়। পরের দিন সকাল ১০ টার সময় আমরা হাসপাতালে উপস্থিত হলে আমাদেরকে রোগী দেখার অনুমতি দেওয়া হয়।

আমরা ভেতরে গিয়ে দেখি আমার মেয়েকে একটি নরমাল রুমে রাখা মেয়ের হাত-পা বাঁধা মুখে মাক্স লাগানো। তা দেখে আমি আমার মোবাইলে ছবি উঠিয়ে নিই এবং কতৃপক্ষকে হাসপাতাল থেকে সিট কাটার জন্য বললে তারা সিট কাটতে রাজি হননি। আমি ঢাকার বড় বড় হাসপাতাল গুলোতে যোগাযোগ শুরু করলে আমার হাতে নোয়াখালী থেকে নেওয়া কেইচ সামারি দেখে সকলে বলে আপনার রোগীর করোনা টেস্ট নেগেটিভ সার্টিফিকেট লাগবে। তা নাহলে ভর্তি করা যাবে না। ২৫ জুন আছরের পর আমাকে হাসপাতাল কতৃপক্ষ ডেকে বলে আপনার মেয়ে মারা গেছে তখন আমি হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং আমার স্ত্রীকে সফর করার জন্য বলি। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের ছাড়পত্র আমার হাতে আসলে দেখি তাতে ৪০ হাজার টাকা তাদের বিল এসেছে, তখন আমি তাদেরকে বললাম আমিতো বিভিন্ন টেস্ট করার জন্য ২০ হাজার টাকা আপনাদেরকে দিয়েছি ৪০ হাজার টাকা কীভাবে বিল আসে তারা কেউ আমার সাথে কথা বলতে রাজি হননি। তাদের সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে নোয়াখালীর আমার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন কাজ
সমাপ্ত করি।

নাছির উদ্দিন বলেন, ২৮ জুন বিকেল বেলা আমার মোবাইলে একটি মেসেজ আসে আপনার মেয়ের করোনা নেগেটিভ।

তিনি আরো বলেন, আমি চাই না এই ভাবে অবহেলায় আর কোনো মা-বাবার বুক খালি হোক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের কাছে আমার আকুল আবেদন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগটা আরো সেবামূলক হোক।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর