করোনামুক্ত বিশ্বের ২৫টি দেশ ও অঞ্চল

করোনামুক্ত হয়েছে ২৫ টি দেশ ও অঞ্চল।

করোনামুক্ত বিশ্বের ২৫টি দেশ ও অঞ্চল

আক্রান্ত হলেও ২৮ দেশে মারা যায়নি কেউ
নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারিতে চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরুর পর পাঁচ মাসে ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। আক্রান্ত এককোটির বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে পাঁচ লক্ষাধিক। শুধু যুক্তরাস্ট্রেই প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে ৪৫ হাজারের বেশি মানুষ।

বাংলাদেশে দৈনিক আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। দ্রুত দীর্ঘ হচ্ছে মৃতের সারির। অথচ, এর মধ্যেই ২৫টি দেশ ও অঞ্চল বিদায় করতে সক্ষম হয়েছে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটিকে। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হলেও কোনো মৃত্যু হয়নি এমন দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা ২৮টি।

আজ ১ জুলাই বিকালে (বাংলাদেশ সময়) ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র দেখা গেছে। যে দেশগুলোয় এই মুহূর্তে কোনো করোনা রোগী নেই সেগুলোর অধিকাংশই দ্বীপরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে অবস্থিত। জনসংখ্যার ঘনত্বও কম। মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যেই এসব দেশের অধিকাংশ করোনা আক্রান্ত হয়। কোনো কোনো দেশ এক-দেড়মাসের মাসের মধ্যেই করোনা বিদায় করতে সক্ষম হয়। ধারণা করা হচ্ছে, জনসংখ্যার কম ঘনত্ব, দ্বীপরাষ্ট্র হওয়ায় বাইরের মানুষের নিয়ন্ত্রিত যাতায়াত ও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করায় সহজে দেশগুলোয় করোনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে।

১ জুলাইয়ের তথ্যমতে করোনামুক্ত দেশ ও অঞ্চলগুলো হলো: সান মারিনো, আইল অফ ম্যান, ফেরো আইল্যান্ড, ব্রুনাই, বারবাডোজ, লিচেনস্টেইন, সিন্ট মার্টিন, সেন্ট ভিনসেন্ট গ্রেনেডাইনস, পূর্ব তিমুর, গ্রেনাডা, নিউ ক্যালেডোনিয়া, লাওস, সেইন্ট লুসিয়া, ডোমিনিকা, ফিজি, সেইন্ট কিটস এন্ড নেভিস, ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ, গ্রিনল্যান্ড, ভ্যাটিকান সিটি, মন্টসেরাট, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড,  সেইন্ট পিয়ের মিক্কেলন, ক্যারিবিয়ান নেদারল্যান্ডস, সেন্ট বার্থলেমি ও অ্যাঙ্গোলা। এর মধ্যে এশিয়ার ৭২ লাখ জনসংখ্যার দেশ লাওসে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২৪ মার্চ, মুক্ত হয় ৯ জুন। ক্যারিবীয় দ্বীপ রাষ্ট্র সেন্ট বার্থলেমিতে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ১ মার্চ, করোনামুক্ত হয় ২১ এপ্রিল। অ্যাঙ্গোলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২৬ মার্চ, করোনামুক্ত হয় ২৭ এপ্রিল। কোনো দেশ একমাসেই নিজেদের করোনামুক্ত করতে সক্ষম হয়। কোনো দেশের আড়াই-তিন মাস লাগলেও একটিও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে চীনের কাছাকাছি দুই কোটি ৩৮ লাখ জনসংখ্যার দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৮ জন। চীনের সঙ্গে যাতায়াতের কারণে দেশটিতে দ্রুত ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। তবে এরপর সাড়ে চার মাস পার হলেও আক্রান্ত সাড়ে চারশ’র নিচে আটকে রেখেছে দেশটি। মারা গেছে সাত জন। বর্তমানে আক্রান্ত আছে ২ জন। অন্যদিকে তাইওয়ানের ২২ দিন পরে বাংলাদেশে শনাক্ত হয় প্রথম করোনা রোগী। আর গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৮ জন করোনা আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮৮৮ জনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাইওয়ান সম্ভাব্য সংকটের ভয়াবহতা আগেই বুঝতে পেরে ভাইরাসের চেয়ে এগিয়ে থাকতে সক্ষম হয়। উহানে করোনা প্রাদুর্ভাবের পরপরই তাইওয়ান সরকার চীনের মূল ভূখণ্ড ছাড়াও হংকং ও ম্যাকাওর উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেইসঙ্গে দেশটির সরকার সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এছাড়া তাইওয়ান সরকার ন্যাশনাল হেল্থ ইনস্যুরেন্স এবং ইমিগ্রেশন ও কাস্টম বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো সমন্বয় করে। এর মাধ্যমে তারা জনগণের ভ্রমণের তথ্য নিয়ে শুরুতেই সম্ভাব্য রোগীদের শনাক্ত করে ফেলে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়েই তারা ভাইরাসটির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে সক্ষম হয়।