লালমনিরহাটে নতুন করে ১৯ গ্রাম প্লাবিত, অসহায়দের হাহাকার

লালমনিরহাটে নতুন করে ১৯ গ্রাম প্লাবিত, অসহায়দের হাহাকার

নিউজ ২৪ ডেস্ক

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছয়টি বাঁধ। বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক বাড়িঘর। পানিবন্দী মানুষগুলোর মাঝে দেখা দিয়ে ভয়াবহ খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট।

দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব।

সোমবার সকালে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৫ সে. মি. ও ধরলা নদীর পানি কুলাঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য তিস্তা ব্যারেজের সবকটি গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সোমবার ভোর রাতে তিস্তা ও ধরলার প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ছয়টি বাঁধ।

এতে নতুন করে আরও ১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ রয়েছে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সারাদেশের সাথে দ্বিতীয় দিনের মতো রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দী হয়ে থাকা লক্ষাধিক পরিবারে অধিকাংশ মানুষ গরু, ছাগল ও হাস-মুরগি নিয়ে উঁচু রাস্তায় রাত্রীযাপন করছে। পানিবন্দী মানুষগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ খাদ্য সংকট। অনেকের সারাদিনে এক বেলা খাবারও জুটছে না। পরিবার পরিজন ও গরু ছাগল নিয়ে আজও মানুষ ছুটছে নিরাপদ স্থানে। আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের বারান্দায়, বাঁধে ও উঁচু স্থানে। তিস্তা ও ধরলার প্রবল স্রোতে সোমবার ভোরে শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, লক্ষাধিক বানভাসি মানুষের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র দেড়’শ টন চাল। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য।  

বাসভাসি লোকজন অভিযোগ করে বলেছেন, গত ৫দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে থাকলেও তারা পাননি তেমন কোন সাহায্য-সহযোগিতা। অনাহারে ও অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন।  সরকারিভাবে যে ত্রাণ ও শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগন্য। উজানের ঢলে তিস্তা ও ধরলার ৬৩টি চর ও চরগ্রামের সব বাড়িতেই পানি বুক সমান। সেই সঙ্গে ভয়াবহ আকারে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।  

সদরের রাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নের চরবেষ্টিত ১৭টি গ্রামের অবস্থা ভয়াবহ, গত পাঁচ দিনে অর্ধ-শত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চরের সব রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে বন্যা দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু বাঁধে। এই ইউপি চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বলেন, পাঁচ দিনে সরকারের বরাদ্দ মিলেছে ১৩০ কেজি চাল, কিন্তু দুর্গত মানুষের সংখ্যা ২৫ হাজারেরও বেশি। এই অবস্থায় তিনি চরম বেকায়দায় পড়েছেন।

অন্যদিকে গত পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী থাকা পরিবারগুলোর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে নানা পানিবাহিত রোগ। জেলা সির্ভিল সার্জন ডা. আমিরুজ্জামান বন্যা দুর্গত এলাকায় ৫৪টি মেডিকেল টিম কাজ করার কথা বললেও কোথাও কোন মেডিকেল টিমের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।  

জেলা শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন জানিয়েছেন, ভয়াবহ বন্যার কারনে জেলার ১৯৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ত্রাণ সংকটের সত্যতা স্বীকার করে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ জানিয়েছেন, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ১৬০ মেট্রিক টন চাল এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা নিবার্হী অফিসাররা বিতরণ করবেন।

সম্পর্কিত খবর