সরকার জবাবদিহি চাইতে সক্ষম নয়, আগ্রহীও নয়

সরকার জবাবদিহি চাইতে সক্ষম নয়, আগ্রহীও নয়

আলী রিয়াজ

হাসপাতাল অনুমোদন ছাড়া চলল কীভাবে, কারা কীভাবে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দিল, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কারণেই অসংখ্য স্বাস্থ্য কর্মীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে কিনা, এদের সঙ্গে সরকারি দলের কোন পর্যায়ের ঘনিষ্ঠতা আছে বা নেই, সরকারি ঘোষণায় বানান ভুল আছে কিনা, মিডিয়া কেন আগে এ সব দুর্নীতির খবর অনুসন্ধান করে বের করতে পারে না, করোনা ভাইরাসের মাত্রা বিষয়ে সরকারি ভাষ্যের বাইরে কেন কিছু প্রকাশিত হয় না – এই সব প্রশ্ন করতে পারেন, কিন্ত আসল প্রশ্নটা কী? কে কার কাছে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য আছে সেটা বোঝা দরকার। সরকার ও ক্ষমতাসীন দল কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়, সে কারণেই কারো কাছে সরকার জবাবদিহি চাইতে সক্ষম নয়, আগ্রহীও নয়। নিজেরা নিজেরা হলে আর জবাবদিহির কথা ওঠে না, ভাগ বাটোয়ারার প্রশ্ন ওঠে।

করোনা ভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে বাংলাদেশে যে ধরনের আচরণ করা হয়েছে/ হচ্ছে তার লক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়া – ‘সব ঠিক আছে’।

মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখালেই যারা ভাবছেন যে, দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা হবে তারা নিজেরাও জানেন যে এর পরিণতি কী। মৃতের সংখ্যা বা আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া ঠিক আছে কিনা, মাত্রাটা বোঝা যাচ্ছে কিনা। এই অবস্থা মোকাবেলার জন্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কিনা। কিন্ত ক্ষমতাসীনরা ধরে নিয়েছেন কিছু সংখ্যা কম করে দেখালেই হলো।
আর যদি এই নিয়ে প্রশ্নও থাকে তা তাঁকে বা তাঁদের পরিবারকে কোনো রকম অসুবিধায় ফেলবে না। কিন্ত ইটালীতে কী ঘটেছে সেটা কিসের ইঙ্গিত দেয়? জাপান, চীন, এবং কোরিয়ার ঘটনার পরে এ নিয়ে কোনও রকম মাথা ব্যথা হয়নি।

দেশের ভেতরে জনস্বাস্থ্যের বিপদের সূচনা হয়েছে অনেক আগেই। এই নিয়ে এখন আর বেশ কিছু বলাও হয় না। অর্থনীতির অবস্থা, বিশেষত দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের অবস্থা সকলের জানা। হুহু করে দারিদ্র বাড়ছে। কিন্তু এরই মধ্যে কমপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিককে বেকারত্বের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। চলছে দুর্ণীতির মহোৎসব। আর সেই নিয়ে কথা বলার পরিণতি হচ্ছে এক ভয়াবহ আইনের ব্যবহার। কিছু নিয়ে কথা বলাই আর নিরাপদ নয়। আগে ‘গোপন ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ শোনা যেতো এখন ‘শলা-পরামর্শই’ যথেষ্ঠ। রাতের আধারে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আটকের ঘটনা ঘটছে। আইন কী বলে, আদালত কী বলেছে সেটা ধর্তব্যের বিষয় নয়। আর কিছু লোককে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সবকে আড়াল করার জন্যে অপ্রয়োজনীয় সব বিষয়ে আলোচনা, বিতর্কের সূচনা করার জন্য। হাসপাতাল, সার্টিফিকেট, সিন্ডিকেট নিয়ে যে সব প্রশ্ন সেই সব প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তার চেয়ে বেশি জরুরি এই বিষয়টি বোঝা যে সরকারের জবাবদিহি নেই কেন। এই প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে আর কোনো প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে না।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর