প্রধানমন্ত্রী খোঁজখবর রাখছেন করোনাক্রান্ত ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের

প্রধানমন্ত্রী খোঁজখবর রাখছেন করোনাক্রান্ত ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের

সোহেল সানি

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিএমএ প্রেসিডেন্ট ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। গত দুই সপ্তাহ ধরে লড়ছেন  করোনার বিরুদ্ধে।

তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করেন অসুস্থতার খবর শুনে।

ডা. জালালের বড় মেয়ে নিপাকে ফোনে পেয়ে প্রধানমন্ত্রী জেনে নেন সর্বশেষ অবস্থা। প্রীতিমুগ্ধ ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সঙ্গে গিয়েছিলাম ল্যাবএইডে সাক্ষাৎ করতে। শুনেই তিনি লোক দিয়ে খবর দিলেন না, না, কোনভাবেই যেনো এই ঝুঁকিটা না নেই। এরপর এভাবে কেটে যায় দেড় সপ্তাহেরও বেশি সময়।
তারপর বাসায় ফোন করে জানতে চাওয়া- তাঁর অবস্থার কথা।

ভাবি জানালেন, ক্রমে উন্নতির দিকে, খবরটা শুনে স্বস্তি পেলাম। গতকাল টেলিফোন করতেই ওপাশ হতে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের কন্ঠ শুনতে পেলাম। সামান্য কথপোকথনে তাঁর কণ্ঠটা ভারাক্রান্তই মনে হলো। মনে পড়ল তাঁর অতীত কিছু স্মৃতির কথাও।

ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সেই দুঃসাহসিক ছাত্রলীগ নেতা যিনি জাতীয় চারনেতা হত্যার খবর শুনে রাজপথে নেমে গিয়েছিলেন জীবনের মায়া ত্যাগ করে। ৩ নভেম্বর কারাগারে চারনেতা হত্যার প্রতিবাদে নগরীতে যে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়েছিল, তার অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল থেকে নিহত উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের লাশ নিয়ে আসেন আরমানীটোলা ময়দানে। আয়োজন করেছিলেন সেদিন জাতীয় চারনেতার গায়েবানা জানাজা।

ওদিনের প্রতিবাদ মিছিলে ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ছাড়াও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সালাউদ্দিন ইউসুফ, ইসমাত কাদির গামার দৃপ্তকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি। শোক ও ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল রাজধানী। জাতীয় চার নেতার ছবি সংবলিত সেই মিছিল ও গায়েবানা জানাযা অনুষ্ঠানের খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে।

ল্যাবএইডে শয্যাশায়ী ডা. জালাল ফোনে কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, শেখ হাসিনা বড় নির্মম মহাকালের কথা না ভেবে, সমকালের কোনো স্তুতিবাদ, নিন্দাবাদের তোয়াক্কা না করে পথ চলছেন। তিনি করোনা যুদ্ধেও জয়ী হবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি দলের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের ত্যাগের  মূল্যায়ণ করছেন। কেননা নিঃস্বার্থ নেতাকর্মীরা সকল সংকটে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। মহতিমনের প্রেরণায় অনুরক্ত হয়ে ওঠা দেশরত্ন শেখ হাসিনা অদৃষ্টবাদীর ন্যায় গভীর, গহীন-বিষাদে ডুবে থাকার মানুষ নন।

করোনা মোকাবিলা শুধু নয়, নানা বিষয়ে সাফল্য অর্জন করে তা তিনি দেখিয়েছেন সারাবিশ্বকে। ডা. জালাল মহিউদ্দিন '৬৯-এ গণঅভ্যুত্থানকালীন জগন্নাথ কলেজের ভিপি ও '৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।

ডা. জালাল '৭২-'৭৩-এ ছাত্রলীগের গ্রন্থনা প্রকাশনা সম্পাদক ও '৭৩-'৭৪- ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভেন মার্ডারকে কেন্দ্র করে শফিউল আলম প্রধান বহিষ্কার হলে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। '৮১ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলনে সভাপতি হওয়া ডা. জালাল '৮৭ সালে আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক এবং '৯২-'০৯ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য সম্পাদক। '০৮ সালের নির্বাচনে লালবাগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. জালালের ভাষায় বঙ্গবন্ধু এক অসাধারণ অমূর্ত স্মৃতি, কালোত্তীর্ণ প্রতিভা, স্তম্ভিত বিস্ময় মহামানব।

ডা. জালাল রাজনৈতিক কর্মপরিসরে ব্যস্ত থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কর্মীদের বুকে আগলে ধরেন। সততার উপলব্ধির বিস্ময়কর অনুমানীয় চিন্তাধারাই তাঁর মেধা ও প্রতিভার উচ্চকিত ভাবভঙ্গিতে প্রকাশ পায়। বারবার বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন- বিএমএ'র মহাসচিব নির্বাচিত হন। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে গেছেন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে। তিনি তারুণ্যসুলভ অসীম আশাবাদী এক উদ্যমী কর্মবীর এখনও।

শেখ হাসিনার নিষ্ঠা, সততা ও অকুন্ঠ দেশপ্রেমববোধের বহু দৃষ্টান্তের উন্মোচন করেন জালাল তাঁর কথোপকথনে। নিজেও আস্থা, বিশ্বাস, সততা, নিষ্ঠা, শ্রম ও ত্যাগসুখ আর ব্যক্তিত্বের পরিচয়বহন করে চলেন দায়িত্ববোধের সরব পদচারণায়।

ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টিকরণ তাঁর কর্মের পরিধি ধীরলয়ে বিস্তৃতিলাভ করছে। সরল, সহজ, সাবলীল ব্যবহারে, কোমলমতি প্রাণ তাঁর আচার-আচরণ আকর্ষণীয়।

তাঁর অনন্তমনে শেখ হাসিনা মাতৃত্বের বন্ধনের আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা এক আশ্রয়স্থল। প্রয়াসের নানা ক্ষেত্র আবিস্কারের পরিকল্পক হয়ে ওঠার মতো কর্মশৈলীতায় সর্বদাই চিন্তামগ্ন।
দলীয় কর্মীকূলের মাঝে এক প্রাণবন্ত উজ্জ্বল-উচ্ছল বিদগ্ধপ্রাণ। কট্টর মনোবল, অশেষ প্রত্যাশা আর বিশেষ প্রাপ্তির হিসাবের অংকটা তাঁর রাজনীতির ভবিষ্যৎকে আরও প্রসিদ্ধ করবে। নিখাদ বিশ্বাস ও সংবেদনশীল পথ-পরিক্রমায় বেড়ে ওঠা তাঁর গল্পটাই রচিত হয়েছে মানবকল্যাণের সূত্রধরে।

শেখ হাসিনার দেশগড়ার অগ্রসরমান মহাসড়কে জাগরণের জনসমুদ্রে  নিজেকে এখনো কর্মী মনে করেন ডা. জালাল।    প্রশমিত প্রেমবোধের বিপরীতে অগ্নিমূর্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে এরশাদ-খালেদার দুঃশাসনের বিরুদ্ধেও। কর্মীদের জন্য তাঁর মনের দূয়ার খোলা। অবুঝ বয়সে মনের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাসা বেঁধেছে। সত্যিই উপেক্ষার চোখ নয়, মানুষকে ভালোবাসেন ভ্রাতৃত্বের পরশে। সাক্ষাতে চোখ জুড়ায় তাঁর সুরুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ও মহিমানিলয় মিলনমেলার অপূর্ব বলয় দেখে। সুদর্শন মিষ্টভাষী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন রাজনীতির সরল, সহজ অন্তঃকরণ এবং সচ্ছল দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী যারা, তাদের চিনতে বেশিদিন সময় লাগে না, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে তা প্রমাণ করেছেন। তিনি নিরহংকারী পরিশীলিত,পরিচ্ছন্ন, নির্মল ও প্রশান্ত মনের অধিকারী। কারো কারো হিংসা, প্রতিহিংসা থাকলেও অহিংসার পথ ধরেই হাঁটি। বললেন মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। আওয়ামী লীগের এই নেতা করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসবেন- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমি মনে করি পরিপূর্ণ মানুষের সান্নিধ্য পাওয়া যায় তার দ্বিধাহীন চিন্তার স্বাধীনতায়। মূল্যবোধের দীনতায় গুণীজনের প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে না। পদাধিকার বলে আত্মঘোষিত ব্যক্তিদের দিয়ে সামাজিক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা দেখা যায়, কিন্তু সৃজনশীলতাকে এগিয়ে রাখা যায় না।

কথোপকথনঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর