মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে বইমেলায় হেনরী চৌধুরীর 'ঠিকানার সন্ধানে'

হেনরী চৌধুরীর 'ঠিকানার সন্ধানে'

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে বইমেলায় হেনরী চৌধুরীর 'ঠিকানার সন্ধানে'

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ বছরের একটি বালক যেদিকেই 'জয় বাংলা' স্লোগান শুনছে সেদিকেই ছুটছে। ছুটতে ছুটতে মিশে যাচ্ছে মিছিলে। রোদে পুড়ে ক্লান্ত দেহে বাড়িতে ফিরে মায়ের কাছে চাইছে ভাত। কিসের মিছিল তা বুঝে ওঠার মতো জ্ঞান তখনও হয়নি, তবে বড়দের কাছে শুনেছে দেশকে স্বাধীন করার জন্য মিছিল হচ্ছে।

দেশ স্বাধীন হলে আমরা স্বাধীন হব। আমাদের ওপর আর অন্য দেশের কেউ নির্যাতন করতে পারবে না। আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে পারবে না। আর এই কথাগুলোই তখন উচ্ছ্বল কিশোর হেনরীকে মিছিলে পাঠানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

চোখের সামনে অনেক নৃশংসতা দেখেছে ছোট্ট হেনরী। পরিবারের বড়দের দেখেছে যুদ্ধে যেতে। তখন তার আর শুত্রু চিনতে কষ্ট হয়নি। মনে প্রবল জোর থাকলেও অস্ত্র হাতে যুদ্ধে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতা তখনও হয়ে ওঠেনি। কিন্তু যেখানেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার সুযোগ পেয়েছে, সেখানেই এগিয়ে গেছে। এরপর বাড়িতে এসে অন্যদের কাছে সেই গল্প দিয়েছে। এক সময় দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়তে থাকে সর্বত্র। পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় শুত্রুরা। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বড় হতে থাকে হেনরী। সময় আসে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। ছোট্ট হেনরী তখন পুরোদস্তুর যুবক। যুদ্ধে বিধ্বস্থ দেশ তখন মাত্র ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ভাগ্যের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমান হেনরী। ৩১ বছর বিদেশের মাটিতে কাটিয়ে ফিরে আসেন দেশে। এখন তার চুলে পাক ধরেছে। শরীরে আগের মতো জোর নেই। সিদ্ধান্তে নেন যুদ্ধের যে স্মৃতি এতদিন নিজের মাথায় বহন করে বেড়াচ্ছিলেন তার প্রকাশিত রূপ দেবেন। কলম হাতে বসে যান। মস্তিস্ক হাতড়ে বের করতে থাকেন সেই ভয়াবহ দিনগুলোর স্মৃতি। অবশেষে এবারের একুশে বইমেলায় হেনরী চৌধুরীর সেইসব মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে 'ঠিকানার সন্ধানে'।

news24bd.tv

বইমেলায় আগত দর্শনার্থী ও বই ক্রেতাদের সঙ্গে লেখক হেনরী চৌধুরী (বাম থেকে দ্বিতীয়)

 

হারাতে বসা স্মৃতিগুলোকে বইয়ে রূপ দিতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত হেনরী চৌধুরী। বইমেলায় নিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মুক্তিযুদ্ধে যা দেখেছি তা নিয়ে একটি বই বের করব । অবশেষে সক্ষম হয়েছি। এতেই ভালো লাগছে।

তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় আমি ছিলাম ছোট। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সময় মিছিলের সঙ্গে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) গিয়েছিলাম। ভাষণ শুনেছি। সেই শব্দগুলো এখনো কানে বাজে। পাকিস্তানি বাহিনী যেদিন আত্মসমর্পণ করে, সেদিন আমি গাছের ওপর বসে দেখেছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু আসলেন, ভেবেছিলাম পাজেরো বা মার্সিডিস টাইপের কোন দামি গাড়িতে চড়ে আসবেন। দেখলাম ট্রাকে করে এলেন। আমার একদম কাছ দিয়েই গিয়েছিল সেই ট্রাক। সেই আন্দোলনের সময় আমাকে বাড়ির লোকজন জোর করেও ঘরে আটকে রাখতে পারতো না। মিছিলের শব্দ কানে আসলেই ছুটতাম। অনেক নৃশংসতা চোখের সামনে দেখেছি। আমি ছোট মানুষ হওয়ায় অনেক সময় পাক হানাদারদের হাত থেকে বেঁচে গেছি। ৩১ বছর বিদেশের মাটিতে কাটিয়ে কয়েক বছর হলো পাকাপাকিভাবে দেশে ফিরে এসেছি। অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে আমার স্মৃতিতে থাকা ইতিহাসগুলো লিখে গেলাম। চাইলে মানুষ পড়বে।

বইটি একুশে বইমেলায় জিনিয়াস প্রকাশনীর ৬০৭, ৬০৮ ও ৬০৯ নম্বর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান হেনরী চৌধুরী।

সম্পর্কিত খবর