ফাহিম সালেহ’র বিস্তারিত পরিচয়

ফাহিম সালেহ’র বিস্তারিত পরিচয়

অনলাইন ডেস্ক

দেশের জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ। গত মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) নিউইয়র্কে নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন তিনি। পুলিশ তার খণ্ডবিখণ্ড দেহ উদ্ধার করে।

ফাহিম সালেহর লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, তার বয়স ৩৩ বছর।

জীবনের এই সময়র প্রায় অর্ধেক, ১৫ বছরই তিনি উদ্যোক্ত হিসেবে কাজ করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার হাতে গড়ে উঠেছে একাধিক সফল প্রতিষ্ঠান।

ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। তার পৈত্রিক বাড়ি চট্টগ্রাম।

বাবার নাম সালেহ উদ্দিন। ফাহিমের নানার বাড়ি নোয়াখালী। তার মায়ের নাম রায়হানা। তবে ফাহিমের জন্মস্থান সৌদি আরব। বাবা-মা সৌদি আরবে থাকার সুবাদে সেখানেই জন্ম হয় ফাহিমের।

ফাহিমের বাবাও ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হরিশপুর গ্রামের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালাহউদ্দিন আহমেদ বিশ্বখ্যাত আইবিএম কর্পোরেশনের এডভাইজার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি করতেন। আইবিএম থেকে অবসর নেয়ার পর তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন নিউইয়র্ক থেকে দেড়শ’ কিলোমিটার উত্তরের ডাচেস কাউন্টির ফুকেটসি এলাকায়।

স্ত্রী রায়হানা, দুই কন্যা এ্যাঞ্জেলা ও রুবি এবং একমাত্র পুত্র ফাহিম সালেহকে নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের চমৎকার সুখী সংসার। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সৌদি আরব থেকে ফাহিম সালেহ পরিবারের সঙ্গে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। শৈশব-কৈশোর কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই পড়ালেখা ফাহিমের। মেধাবী ছাত্র ফাহিম নিউইয়র্কে একটি হাইস্কুলে পড়া অবস্থাতেই উইজ টিন নামক একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন।

পরে যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। ২০০৯ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর থেকে চাকরি খুঁজছিলেন। নিউইয়র্কের পাশাপাশি তিনি বোস্টনের বিভিন্ন কোম্পানিতেও চাকরির আবেদন করেন। ওই সময় তিনি চাকরিও পেয়ে যান। কিন্তু চাকরিতে না গিয়ে উদ্যোক্ত হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন।

২০১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরে যৌথভাবে ‘পাঠাও অ্যাপ’ চালু করেন। বাংলাদেশের পাঠাও ছাড়া নাইজেরিয়ায় ‘গোকান্ডা’ নামে আরেকটি রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম চালু করেন। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন।

২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে নাইজেরিয়ায় গোকাডা চালু করেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই সংকটে পড়ে তারা। কারণ, নাইজেরিয়ার সরকার মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করে। তবে সংকটে পড়ার আগে এক বছরেই গোকাডা ৫৩ লাখ ডলার বা ৪০ কোটির বেশি টাকা আয় করে। যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হয়ে গেলে গোকাডা পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে।

সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় ফাহিম সালেহর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়ছে, ‘ফাহিমের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আসা সংবাদ শিরোনাম এখনো আমাদের অনুধাবনের বাইরে। ফাহিম সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তিনি তার চেয়েও বেশি ছিলেন। ’

ফাহিম বাবা-মায়ের সঙ্গে নিউইয়র্ক থেকে দেড়শ’ মাইল দূরে থাকতেন। পরে নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় বিশ কোটি টাকা (২২ লাখ ডলার) দিয়ে কিনেন একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। নিউইয়র্কের অন্যতম অভিজাত এলাকা ম্যানহাটনে নিজের রোজগারের টাকা দিয়েই ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সেই ফ্ল্যাটেই খুন হতে হয়েছে তাকে।

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল