‘টাইরেসকে পুলিশে না দেওয়াটাই ফাহিমের কাল হলো’

‘টাইরেসকে পুলিশে না দেওয়াটাই ফাহিমের কাল হলো’

অনলাইন ডেস্ক

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং অ্যাপ পাঠাও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ খুন হয়েছেন। নিউইয়র্ক পুলিশ এই খুনে অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব বা ব্যবসায়িক কারণ সামনে রেখে তদন্ত করছে। ফাহিম খুনের বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ভারতে নির্বাসিত বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন বিশ্লেষণমূলক স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। ফাহিমকে নিয়ে আবার লিখেছেন তিনি।


পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

ফাহিম সালেহ অল্প বয়সে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক হয়েছেন, ২.২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বিলাস বহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন নিউইয়র্ক শহরের অভিজাত এলাকায়, এসব আমাকে আকর্ষণ করেনি। আমাকে আকর্ষণ করেছে তাঁর তুখোড় মেধা, উদ্ভাবনী শক্তি, এবং প্রচণ্ড উদ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা আর লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয় মানুষের দুর্ভোগের অবসান ঘটানোর চেষ্টা করাটা। খুব ছোট আকারে শুরু করেছিলেন কিছু কাজ, বেঁচে থাকলে বড় কিছু হয়তো করতে পারতেন এই স্বপ্নবান যুবক।

তাঁকে বাঁচতে দিল না ২১ বছর বয়সী টাইরেস ডেভন হাস্পিল।

এই ছেলেকে কেন ফাহিম একসময় সহকারীর চাকরি দিয়েছিলেন কে জানে। সম্ভবত গুণ কিছু ছিল ছেলেটির। কিন্তু গুণের চেয়ে দোষ তো এর পাহাড়- সমান। ফাহিমের এক লাখ টাকা ডলার চুরি করে ধরা পড়েছিল টাইরেস। তখন তার চাকরিটি খুব স্বাভাবিক যে, চলে যায়। ফাহিম তাকে পুলিশে সোপর্দ না করে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করার পরামর্শ দেন। কোথায় টাইরেস ফাহিমের কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে, তা নয়, ফাহিমকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে সে। ফাহিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে টাইরেস।

২১ বছর বয়সী ছেলের নিশ্চয়ই এটি প্রথম হত্যা। কিন্তু এমন হত্যাকাণ্ড দেখে পুলিশ বলেছিলেন , এ কোনও প্রফেশানাল খুনির কাজ। অনেকে বিশ্বাস করে শিশু কিশোর তরুণেরা সৎ, নিস্পাপ, নিরীহ, কোমল, আদর্শবাদী। কিন্তু এরা যতটা ভয়ংকর হতে পারে, তত ভয়ংকর বয়স্ক মানুষেরা হয়তো হতে পারে না। গুলশান ক্যাফেতে টাইরেসের বয়সী ছেলেগুলোই তো ছিল, কী নৃশংস ভাবে ওরা জবাই করেছে মানুষগুলোকে। ধর্মের জন্য যেমন মানুষ যা কিছু করতে পারে, তেমন টাকার জন্যও। এক দল পরকালের সুখের জন্য বীভৎস কাজ করতে দ্বিধা করে না, আরেক দল দ্বিধা করে না ইহকালের সুখের জন্য ।

এক লাখ ডলারের দেনা থেকে বাঁচার জন্য টাইরেস হত্যা করেছে ফাহিমকে। আহ, ফাহিম যদি জানতেন এ কারণে তাঁকে মরতে হবে, তাহলে তো টাইরেসকে এক লাখ ডলার দান করে দিতেন। অথবা চুরি করার কারণে টাইরেসকে পুলিশে দিতেন। টাইরেসের জন্য ফাহিমের এই ফেভারটাই, পুলিশে না দেওয়াটাই ফাহিমের কাল হলো।

নিউইয়র্কের পুলিশ দু'দিনের মধ্যেই খুনীকে ধরেছে। এরকম খুন আমাদের অঞ্চলে হলে কোনওদিনও হয়তো খুনী ধরা পড়তো না। কিন্তু একটি ব্যাপার আমি বুঝিনি, কেন ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডারকে সেকেণ্ড ডিগ্রি মার্ডার বলা হচ্ছে। সেকেণ্ড ডিগ্রি মার্ডার হলে টাইরেস শাস্তি কম পাবে। টাইরেস তো ফাহিমকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়েই ফাহিমের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল ব্যাগে স্টান গান, ছুরি, ইত্যাদি নিয়ে। তাহলে?

বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত লোকদের মধ্যে তো গিজগিজ করছে বোকা গাধা, চোর বদমাশ, খুনী ধর্ষক ধর্মান্ধ প্রতারক, টেরোরিস্ট। এইসব গোবরে পদ্মফুল ছিলেন ফাহিম সালেহ। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারতাম। কিন্তু পদ্মফুলটিকে অকালে ঝরিয়ে দিল একটা জঘন্য কুৎসিত লোক। হত্যাদৃশ্যটি কল্পনা করলে গুজবাম্প হয়।

-তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর