এই প্রথম কোরবানির মাংস পেলেন দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীরা
ডিআইজি হাবিবের মানবতা

এই প্রথম কোরবানির মাংস পেলেন দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীরা

শফিকুল ইসলাম শামীম, রাজাড়ী:

পুলিশের চাকরি করেও সাধারণ মানুষের মনের অন্তস্থানে জায়গা করে নেওয়া যায় তার জলন্ত প্রমাণ ডিআইজি হাবিবুর রহমান। তার মানবতার কথা দেশ পেড়িয়ে বাইরেও রয়েছে।

বেদে পল্লী, হিজড়া ও যৌনকর্মীদের নিয়ে উন্নয়ন মূলক কাজ করায় তিনি সর্বশ্রেণী মানুষের কাছে সুনাম অর্জন কুড়েছেন। সেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় তিনি রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলা দৌলতদিয়া দেশের বৃহত্তর যৌনপল্লী।

এই যৌনপল্লীতে ১৩শত যৌনকর্মী রয়েছে। অনেকে বয়সের ভারে যৌনপল্লীর আশপাশে বসবাস করেন। সব মিলে প্রায় ২ হাজার যৌনকর্মী রয়েছে।  

করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য দেশে লকডাউন শুরু হলে দৌলতদিয়া যৌনকর্মীদের আয় রোজগার সম্পন্ন বন্ধ হয়ে যায়।

 
আয় রোজগার বন্ধ হওয়ায় হতাশায় পড়ে যায় তারা। ধার দেনা করে চলতে থাকে। ঠিক এই দুরঅবস্থায় সময় এগিয়ে আসলেন মানবতার ফেরিওয়ালা ডিআইজি হাবিব। তার ব্যক্তি উদ্দ্যেগে রয়েছে একটি সামাজিক সংগঠন। উত্তরন ফাউন্ডেশন। ডিআইজি হাবিবুর রহমান উত্তরন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। এই ফাউন্ডেশন থেকে দৌলতদিয়া অবস্থিত যৌনকর্মীদের জন্য চার মাসের খাবার ব্যবস্থা করেছিলেন। রোজার ঈদে চিনি, সেমাই, দুধ ও একটি করে কাপড় দিয়েছেন।  

না এই জায়গায় থেমে যায়নি। লকডাউন না থাকলেও তাদের আয় রোজগার অনেক কমে গেছে। সে কারণে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে দৌলতদিয়ায় অবস্থিত ২ হাজার যৌনকর্মীর জন্য বড় বড় ৫টি গরু কোরবানি দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। এই কোরবানির মাংস ২ হাজার যৌনকর্মীর মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হলো।  

জীবনের প্রথম কোরবানির মাংস হাতে পেলেন দৌলতদিয়া অবস্থিত যৌনকর্মীরা। ডিআইজি হাবিবুর রহমানের দেওয়া কোরবানি মাংস পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়লেন যৌনকর্মীরা। এ সময় যৌনকর্মীদের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন “অসহায় নারী ঐক্য সংগঠনের” 

সভানেত্রী ঝুমুর বেগম জানান, কোরবানি মাংস পায় গরীব-মিসকিন, পাড়া প্রতিবেশী, আত্নীয়-স্বজন। আমরা এর কোন টার মধ্যে নই। যৌনপল্লীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কোন মানুষ আমাদের কোরবানির মাংস দেয় নাই। এই প্রথম ডিআইজি স্যার আমাদের মাংস দিয়েছেন। আমাদের জন্য বড় বড় ৫টি গরু দিয়েছেন। আমরা নিজেরা কোরবানির ব্যবস্থা করেছি। রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ও গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি উপস্থিত থেকে সকলের মাঝে বিলিয়ে দেয়।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, অসহায় নারীদের কথা চিন্তা করে ডিআইজি স্যার লকডাউনের প্রথম দিক থেকেই সহযোগিতা করেছেন। এই অসহায় নারীদের চার মাসের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।  

রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, যৌনকর্মীরাও দেশের নাগরিক। ইচ্ছা করে কেউ যৌনকর্মী হয় নাই। এই অসহায় নারীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ডিআইজি হাবিবুর রহমান স্যার তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। আমরা স্যারের নির্দেশে পরিচালনা করছি।     

 

নিউজ টোয়েন্টিফোর/কামরুল