করোনা রোগীর মৃতদেহ খেল কুকুরে!

করোনা রোগীর মৃতদেহ খেল কুকুরে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি হাসপাতালের মধ্যেই করোনা রোগীর মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে কুকুরে! যে রোগীকে দিন কয়েক আগেই ওই হাসপাতালে চিকিত্‍‌সার জন্য আনা হয়েছিল।  

সোমবার (১০ অগস্ট) ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের ওঙ্গোলের সরকারি হাসপাতালে এই ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও বুধবারই তা সামনে আসে।  

ঘটনার কথা জেনে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ মৃত ওই রোগীর পরিবার।

মৃতের আত্মীয়েরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চরম গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন।  

এই ঘটনায় তড়িঘড়ি তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তার পরেও যে প্রশ্নটা উঠছে, হাসপাতাল চত্বরের মধ্যে করোনা রোগীর মৃতদেহ এ ভাবে পড়ে থাকছে। অথচ কর্তৃপক্ষ কী ভাবে এতটা উদাসীন হতে পারে?

অভিযোগের তীর, রাজীব গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (RIMS)-এর বিরুদ্ধে।

এই হাসপাতাল চত্বরের একটি শেড চালচুলোহীন দুঃস্থ, ভবঘুরেরা রাতের বেলায় আশ্রয় নেন। সেখানেই পড়েছিল কোভিড আক্রান্ত রোগীর মৃতদেহ।

সোমবার হাসপাতালের এক সিকিওরিটি গার্ড প্রথম খেয়াল করেন। তার নজরে পড়ে পথ কুকুররা একটি মৃতদেহ নিয়ে খাবলা-খাবলি করছে। তিনি লাঠিহাতে তাড়া করে, কুকুরগুলোকে তাড়িয়ে দেন। তত ক্ষণে অবশ্য মৃত ব্যক্তির কানের একাংশ ছিঁড়ে নিয়েছে কুকুরে। মুখের একাধিক অংশে খাবলা মেরে বিকৃত করে দিয়েছে রাস্তার সারমেয়রা।

খোঁজ করে সিকিওরিটি গার্ড জানতে পারেন, ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন। নাম কান্তা রাও। বাড়ি প্রকাশম জেলার বিত্রগুন্তা গ্রামে। ঘটনার অনেকক্ষণ আগেই তিনি মারা গিয়েছেন। এই ঘটনা সামনে আসার পরেই মৃতের পরিবারের লোকেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। কিন্তু, হাসপাতাল অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তও করে। কিন্তু, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, কান্তা রাওকে হাসপাতালে ভর্তিই করা হয়নি।

মৃতের পরিবারের দাবি নস্যাত্‍‌ করে RIMS-এর সুপার ডাক্তার শ্রীরামুলু জানান, ৫ অগস্ট RIMS-এ আনা হয়েছিল কান্তা রাওকে। কিন্তু, হাসপাতালে রোগী হিসেবে তাকে নথিভুক্ত করা হয়নি।  

কিন্তু, হাসপাতাল কেন কান্তা রাওকে ভর্তি নেয়নি, কেন কোভিড আক্রান্ত একজন রোগীকে পাঁচ দিন বিনা চিকিত্‍‌সায় শেডের মধ্যে কাটাতে হল, তার সদুত্তর সুপার দিতে পারেননি। সুপারের বক্তব্য, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

ডাক্তার শ্রীরামুলুর বলেন, কান্তা রাও হাসপাতালে ভর্তি হননি। ইন-পেশেন্ট বা আউট-পেশেন্টের তালিকায় তার নাম পাওয়া যায়নি।  

মৃতের পরিবার আমাদের জানিয়েছেন, কোভিড পজিটিভ রিপোর্ট পেয়ে ৫ অগস্ট কান্তা রাওকে তারা হাসপাতালে আনেন। কিন্তু, রোগী পুরনো ক্যান্টিন শেডে ছিলেন। সাধারণত গৃহহীন কিছু লোকজন ওই শেডের নীচে থাকেন। যে কারণে হাসপাতালের কোনও ডাক্তার তাঁকে দেখেননি।

হাসপাতাল সুপার আরও জানান, সোমবার হাসপাতালের এক সিকিওরিটি গার্ড এবং কয়েক জন ভিজিটর্স খেয়াল করেন, শেডের নীচে শুয়ে থাকা এক ব্যক্তির উপর কুকুর হামলা করেছে। ওরাই কুকুরগুলোকে তাড়ায়। তখনই আমরা জানতে পারি ওই ব্যক্তি মারা গিয়েছেন।

সুপারের বক্তব্য, কেন কান্তা রাওকে ভর্তি নেওয়া হয়নি, কেন তাকে পাঁচ দিন ধরে শেডে নীচে বিনা চিকিত্‍‌সায় কাটাতে হল, তদন্তে সেটাই দেখা হচ্ছে।

অন্ধ্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা চন্দ্রবাবু নাইডু এই ঘটনার ভিডিও শেয়ার করেছেন। জগনের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তোলেন চন্দ্রবাবু। অন্ধ্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এই ঘটনায় মানুষের মর্যাদা লঙ্ঘিত হয়েছে।

সূত্র: এই সময়

নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাজিম

এই রকম আরও টপিক