সিরিজ বোমা হামলার ১৫ বছর

সিরিজ বোমা হামলার ১৫ বছর

অনলাইন ডেস্ক

দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার ১৫ বছরপূর্তি আজ। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন পরিকল্পিতভাবে দেশের ৬৩ জেলায় একই সময়ে বোমা হামলা চালায়। মুন্সীগঞ্জ ছাড়া সব জেলায় প্রায় ৫০০ পয়েন্টে বোমা হামলায় দু’জন নিহত ও অন্তত ১০৪ জন আহত হন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় ১৬১টি মামলা হয়।

ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে ও সোহেল আহম্মদ।

২০০৫ সালের এই দিনে সকাল সাড়ে ১১টায় পাঁচটি বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ঝালকাঠি শহর। একই সময় বোমার বিস্ফোরণ ঘটে ঝালকাঠি জেলা জজ আদালত চত্বর, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা আইনজীবী সমিতি, সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর ও বিকনা টেম্পো স্ট্যান্ডে।

এ ঘটনায় ঝালকাঠি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহরাব আলী বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন। মামলায় আহত অবস্থায় আটক ফরিদ হাওলাদারকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর গোয়েন্দা পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। জেএমবির সদস্য জিয়াউর এবং আহত অবস্থায় আটক রিকশাচালক ফরিদকে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় প্রায় ১৫ বছর পর দুই জঙ্গিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঝালকাঠির আদালত। একই সঙ্গে বিস্ফোরক আইনের ৪ ধারায় আসামিদের আরও ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।  

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক শেখ মো. তোফায়েল হাসান আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ঝালকাঠির বিকনা গ্রামের মো. ইউনুস মল্লিকের ছেলে মো. জিয়াউর রহমান এবং বৈদারাপুর গ্রামের মোশাররফ হোসেনের ছেলে ফরিদ হোসেন।

পুলিশ জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৫৯টি মামলার মধ্যে ৯৪টি মামলার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। এসব মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এখন ৫৫টি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। যার আসামি সংখ্যা হচ্ছে ৩৮৬ জন। এই সিরিজ বোমা হামলার রায় প্রদান করা মামলাগুলোর ৩৪৯ জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২৭ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেয়া হয়। এর মধ্যে ৮ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

ঝালকাঠি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান মনু জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে ঝালকাঠি জেলা শহরের পাঁচটিস্থানে সিরিজ বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় ঝালকাঠি থানার তৎকালীন ওসি মো. সোহরাব আলী বাদী হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। মামলায় ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় আটক ফরিদ হোসেনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। মামলায় আদালত ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান মনু এবং আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন কবীর ও অ্যাডভোকেট মমিনউদ্দিন খলিফা।

মামলায় ঝালকাঠির আদালতে জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমানসহ সাত শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ হয়। ২০০৭ সালের মার্চ মাসে জঙ্গিদের ফাঁসি দেশের বিভিন্ন স্থানে কার্যকর হয়। বিচারক হত্যা মামলার কৌসুলি অ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইন জেএমবির আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের নিয়ে ছিলেন উদ্বিগ্ন।

জেএমবিরা যাদের মাধ্যমে ঝালকাঠিতে আশ্রয় নিয়ে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেয়ার জন্যও কঠোর দাবি ছিল তার। ওই বছরের (২০০৭ সালের) ১১ এপ্রিল ঝালকাঠি নতুন কলেজ রোডের গোরস্থান মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে বের হবার সময় জেএমবির আততায়ীর সদস্যরা তাকেও গুলি করে হত্যা করে।

প্রশ্রয়দাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না নেয়ায় এখনও উদ্বেগ আর ঝুঁকি নিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন অ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইনের ছেলে তারেক ইবনে হায়দার।

ঝালকাঠির একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা জানান, ১৭ আগস্ট উপলক্ষে জেলাজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবে।

নিউজ টোয়েন্টিফোর/নাজিম