‌‘খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিত্তিহীন’ মন্তব্য ‘অনভিপ্রেত’: ফখরুল

‌‘খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিত্তিহীন’ মন্তব্য ‘অনভিপ্রেত’: ফখরুল

অনলাইন ডেস্ক

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মনগড়া ও ভিত্তিহীন’ মন্তব্য অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘২১ আগস্ট ২০০৪, গ্রেনেড হামলায় হতাহতদের স্মরণে গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠানে সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি আমাকে মারার চেষ্টা করেছেন’। এছাড়াও তিনি বেগম জিয়াকে নিয়ে আরও ‘মনগড়া ও ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করেছেন- যা অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণরুপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ’

শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে দলটির সহ-দফতর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই আকস্মিক হামলার ঘটনা শোনার সাথে সাথেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হতবাক ও বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি দ্রুত হতাহতদের খবর নিতে থাকেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমান এবং বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেনারেল তারেক সিদ্দিকীকে দেখতে সিএমএইচ-এ যান। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার বাসায় গিয়ে সমবেদনা জানাতে চেষ্টা করেন, এজন্য নিরাপত্তা বাহিনী দিনভর চেষ্টা চালায়।

কিন্তু ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী সুধা সদনের আশেপাশের রাস্তা দিনরাত দখল করে রাখে। এক পর্যায়ে নিরাপত্তার অগ্রিম টিম হিসেবে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে সেখান থেকে বের করে দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। ২১ আগস্ট বোমা হামলার ঘটনা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং এতে হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। ’

ফখরুল বলেন, ‘এই ভয়াবহ হামলার ঘটনায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও কেবিনেট নিন্দা জানান, নিহত ও আহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানান ও দোষীদের বিচারের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার কাছে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজ স্বাক্ষরে শোক ও সমবেদনা জানিয়ে পত্র পাঠান। সেই চিঠি পৌঁছাতে গিয়ে পত্রবাহক নিজেও হামলার শিকার হন। বোমা হামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ সার্ভিস দিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফবিআই সদস্যরা আসেন। জাতীয় সংসদে উত্থাপিত দাবি অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। ’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে ১/১১ এর সরকারের সময় গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) বোমা হামলার সাথে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের জড়িত থাকার কোনও উল্লেখ নাই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম কেউ কখনোই উচ্চারণ করেনি। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের আমলে পুলিশি পুনঃতদন্তের মাধ্যমে রচিত সম্পূরক চার্জশিটে তারেক রহমানসহ বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের নাম জড়িত করা হয়। এতে সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে পুলিশি ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কল্পিত চার্জশিট তৈরী করা হয়েছে। যে পুলিশ কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়, তিনি বর্তমান সরকারের অত্যন্ত আপনজন হিসেবে পরিচিত। কারণ তিনি সেসময় অবসরে থাকলেও এবং নৌকা মার্কা নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিতে এলাকায় ব্যাপক হারে পোস্টার সাঁটার পরেও তাকে ডেকে নিয়ে এসে চাকুরির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২১ আগস্ট বোমা হামলার মামলার পুনঃতদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়- মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য। সরকারের ইচ্ছা পূরণে তদন্তকাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে কয়েকটি পদোন্নতিও দেয়া হয়- যা নজীরবিহীন। ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গ্রেনেড হামলার জন্য তারেক রহমানকে দায়ী করে। এই দাবির সমর্থনে তারা হাজির করে মুফতী হান্নানের একটি বানোয়াট জবানবন্দি- যা ভিডিও করে ইউটিউবে ছাড়া হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মুফতী হান্নানকে পাশ থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা শিখিয়ে দিচ্ছেন কি কি বলতে হবে। এরপর ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে আদালতে মুফতী হান্নানের পূর্বের জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনের সংবাদটি ওই মাসের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়। সংবাদটি এরকম- “২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছে মুফতী আব্দুল হান্নান। আবেদনে এই জঙ্গি নেতা দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছায় এধরণের কোন জবানবন্দি আদালতে দেননি। ব্যাপক নির্যাতন করে সিআইডি’র লিখিত কাগজে তার সই আদায় করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি তারেক জিয়া, হারিছ চৌধুরী ও লুৎফুজ্জামান বাবরের সাথে কোথাও কোনও সময়েই দেখা করিনি, পিন্টুর বাসাতেও কখনো যাইনি ও চিনি না এবং অন্যান্য আসামিদেরকেও আমি চিনি না। ” এছাড়াও তার ওপর অকথ্য নির্যাতনের বর্ণনা রয়েছে তার জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনে। ’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘মুফতী হান্নানকে দিয়ে যদি বিএনপি সরকার গ্রেনেড হামলা করায় তাহলে সেই সরকারই ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর কেন তাকে গ্রেফতার করে? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও মামলায় সংক্ষিপ্ত কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। সমগ্র মামলাটি বিশ্লেষণ করলে এটিই সুষ্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ বিএনপি-কে ধ্বংস করার একটি সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যই ২১ আগস্ট সংক্রান্ত মামলায় বিএনপি-কে জড়ানো হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য এখনও চলমান রয়েছে। আইন ও বিচারিক প্রক্রিয়াকে হাতের মুঠোয় নিয়ে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জড়াতে সম্পূরক চার্জশিট তৈরি করার মাধ্যমে প্রহসনের বিচারিক প্রক্রিয়ায় সাজা দিয়ে এখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টার্গেট করা হয়েছে। ২১ আগস্ট নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা। এই মামলায় কোনভাবেই বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কেউ কখনোই টু শব্দটি করেনি। ’

বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপরিণামদর্শী, দায়িত্বহীন, বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল।  

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর