যে কারণে আইএএস হতে চান রূপান্তরকামী অত্রি

যে কারণে আইএএস হতে চান রূপান্তরকামী অত্রি

নিউজ টোয়েন্টিফোর ডেস্ক

স্কুলবেলায় তিনি বরাবরের প্রথম। জামা-প্যান্ট থেকে তিনি যখন শাড়ি-ব্লাউজে, ‘লড়াই’ চলেছে ঘরে-বাইরে। তিনি পালাননি।

রূপান্তরকামী হিসেবে গত বছর মামলা করে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় অংশ ননে।

কিন্তু আইএএস (ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস) পরীক্ষা দিতে পারেননি। এবার ওই পরীক্ষা দিতে চেয়ে সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। কয়েকদিন আগে পেলেন ওই পরীক্ষা দেওয়ার ছাড়পত্র। কারণ, ওই পরীক্ষায় তাঁর সরাসরি বসার অধিকার ছিল না।
কারণ ফর্মে যে শুধু ‘মেল’ আর ‘ফিমেল’-এর উল্লেখ!

তিনি ভারতের হুগলির ত্রিবেণীর ক্যাম্পগেট এলাকার বাসিন্দা, রূপান্তরকামী অত্রি কর। যাঁর কথায়, জীবনে কম লড়াই করতে হচ্ছে না! আমি চাই, সমাজ যাবতীয় অবজ্ঞা ঝেড়ে আমার সম্মানটা অন্তত পাই। ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে, ‘আদার সেক্স’ (অন্য লিঙ্গ) হিসেবে ফর্ম ফিল-আপ করতে পারব। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রায়ের প্রতিলিপি পাঠিয়ে দিয়েছি।

বাবা পরিমল কর গৃহশিক্ষকতা করেন। অত্রি তাঁর ছোট সন্তান। স্কুলে অত্রি ‘ফার্স্ট’ হলেই পরিমলবাবু ছেলেকে ব্যাট-বল বা ক্যারম কিনে দিতে চাইতেন। অত্রির হাত যেত পুতুলে। তাঁর শরীর পুরুষের। কিন্তু মন যে নারীর! ছোট থেকেই ‘মেয়েলিপনা’র জন্য প্রিয়জন, বন্ধুদের কাছে কথা শুনতে হয়েছে তাঁকে। বউদির বাপের বাড়ির লোক এলে আমাকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হতো না— এখনও স্পষ্ট মনে আছে অত্রির।

এখন বড় হয়েছেন অত্রি। রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ-তে ভর্তি হন। পার্ট-১ পরীক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেন। চাকরির পরীক্ষা দিতে শুরু করেন। গুপ্তিপাড়ার একটি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান ২০১৪ সালে। তখনই লিঙ্গ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। সেই প্রক্রিয়া এখন শেষ পথে। বাড়ির লোকজন, পাড়া-পড়শিরাও মেনে নিতে শুরু করেন ‘মেয়ে অত্রি’কে।

এখন বৌদি চুল বেঁধে দেন। মা শাড়ি পড়তে সাহায্য করেন। বাবা পরিমলবাবু বলেন, ওর জন্য একসময় নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছি। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান নিজে যা ভালো মনে করবে, সেটাই করুক।

কিন্তু আটপৌরে সংসারে বড় হওয়া অত্রির আইএএস হওয়ার স্বপ্ন কেন? তাহলে কি প্রতিশোধ নিতে অত্রি আইএএস হতে চান?

সম্পর্কিত খবর