বাগেরহাটে ভেসে গেছে ৫২৭৪ চিংড়ি ঘের, শত কোটি টাকার ক্ষতি

বাগেরহাটে ভেসে গেছে ৫২৭৪ চিংড়ি ঘের, শত কোটি টাকার ক্ষতি

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

বাগেরহাটে গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে জেলার ৫ হাজার ২৭৪টি চিংড়ি খামার (ঘের)। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চেয়ে এবার জোয়ারের পানির উচ্চতা অনেক বেশি হওয়ায় ক্ষতিক্ষতির পরিমান শত কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাটে জেলার ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি চাষিরা। এই অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন জেলার অনেক চিংড়ি চাষি। প্রায় শতভাগ রপ্তানি পণ্য এই চিংড়ি পানিতে ভেঁসে যাওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ নিশ্চিত করে কাজ করছে জেলা মৎস্য বিভাগ।

তবে সংশ্লিটরা বলছেন, বাগেরহাট জেলার চিংড়ি চাষিদের ক্ষতি পোষাতে দ্রুত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া না হলে চিংড়ি রপ্তানি বাণিজ্যে ধ্বস নামার আশঙ্কা রয়েছে।

মৎস্য বিভাগ জানায়, রপ্তানি পণ্য চিংড়ি উৎপাদনে দেশের প্রথম সারির জেলা বাগেরহাট। উপকূলীয় এ জেলায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৭৮ হাজার খামারে বাগদা ও গলদা চিংড়ির ঘেরে চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে। গত অর্থ বছরে বাগেরহাট জেলার চিংড়ি চাষীরা উৎপাদন করে ১৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বাগদা ও ১৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি।

 

বাগেরহাটে উৎপাদিত চিংড়ির ৯৫ ভাগই বিদেশে রপ্তানি করে কয়েক শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে। প্রতি আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় ঘের থেকে চিংড়ি আহরণ মৌসুম। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের চিংড়ি খামারি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে যখন চাষিরা চিংড়ি আহরণ মৌসুম শুরু করেছে তখন জোয়ারের পানিতে ঘেরগুলো তলিয়ে মজুদ চিংড়ি ভেঁসে যাওয়ার পাশাপাশি পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেক চিংড়ি চাষি।

জেলার বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল, মোংলা, চিতলমারী এই ৬ উপজেলার সরকারী হিসেবেই শুধু ৫ হাজার ২৭৪টি চিংড়ি ঘের তলিয়ে গেছে। তবে এর মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে মোংলা ও মোরেলগঞ্জের চিংড়ি
চাষিদের। মোংলায় ১ হাজার ৭৬৫টি এবং মোরেলগঞ্জে ২ হাজার ২৬৫ ঘের ডুবেছে জোয়ারের পানিতে।

ক্ষতিগ্রস্থ চিংড়ি চাষি বাগেরহাট সদরের সরদার শুকুর আহমেদ, নকীব সিরাজুল হক, মোংলার শেখ আব্দুর সাত্তার ও 

মোরেলগঞ্জের মাসুম হাওলাদার জানান, গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জোয়ারের বাঁধ ভেঙ্গে ও রাস্তাঘাট উপচে তলিয়ে গেছে তাদেও চিংড়ি চিংড়ি ঘের। চিংড়ির পাশাপাশি পানিতে ভেঁসে গেছে অন্যান্য সাদা মাছও। এই অবস্থায় তাদেরও মতো পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন জেলার অনেক চিংড়ি চাষি।

বাগেরহাট চেম্বর অব কমার্সের সাবেক সভাপতি সরদার আনসার উদ্দিন জানান, অবিরাম বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর হাজার-হাজার চিংড়ি ঘের ভেঁসে যাওযায় এবার চিংড়ি রপ্তানিতে ধ্বস নামার অশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া চিংড়ি চাষিদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যাবস্থা না করা হলে চিংড়ি চাষ দারুনভাবে ব্যহত হবে। চিংড়ি উৎপাদন কমে যাবে। এতে করে বিশ্ব বাজারে চিংড়ি রপ্তানী বানিজ্যে প্রতিযোগিতায় থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। ক্ষতিগ্রস্থ চিংড়ি চাষিরা বাঁচলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য এগিয়ে যাবে বলে জানান এই ব্যবসায়ি নেতা।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পরে আমরা ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। যখনই চাষিরা মাছ বিক্রি শুরু করল তখন জোয়ারের পানিতে মাছের ঘেরগুলো তলিয়ে মজুদ চিংড়ি ভেঁসে গেল। জোয়ারের পানিতে বাগেরহাট জেলার চাষিদের কয়েক শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের ছয়টি উপজেলার ৫ হাজার ২৭৪টি মৎস্য খামার (ঘের) তলিয়ে গেছে। চিংড়ি চাষিদের কোটি কোটি টাকার ক্ষকি হয়েছে। পূর্নাঙ্গ পরিমাণ ক্ষতির নিরূপণ করতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর