‘আ.লীগ গুমের সংস্কৃতি চালু করেছে’

‘আ.লীগ গুমের সংস্কৃতি চালু করেছে’

অনলাইন ডেস্ক

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনকালে গুমের সংস্কৃতি চালু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম ৭১ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  

খন্দকার মোশতাকের ক্যাবিনেটের ২৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২২ জন হল বাকশালের মন্ত্রী উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ১৫ ই আগস্ট এর সময় জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় কর্মকর্তা ছিলেন। কিন্তু ১৫ ই আগস্ট রাত পর্যন্ত যারা মন্ত্রী ছিলেন তারা গিয়ে শপথ নিলেন খন্দকার মোশতাকের কেবিনেটে।

খন্দকার মোশতাকের ক্যাবিনেটের ২৩ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২২ জন হল বাকশালের মন্ত্রী ছিলেন। মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাকশালের মন্ত্রিসভা ছিল সেই মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা মোস্তাকের কেবিনেটে শপথ নিলেন। সেনাবাহিনী নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর তিনজন প্রধান খন্দকার মোশতাকের কাছে গিয়ে আনুগত্য করলেন জিয়াউর রহমান তো জাননি।

রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে বাকশাল দুর্ভিক্ষ শুধু এগুলোই আছে।

তাদের ইতিহাসে শুধু বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন, মানুষ হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যা। সেটির জন্য বিএনপির প্রতি তাদের এত বিদ্বেষ। ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান এদেশের রাজনীতি ও প্রশাসনের ক্ষমতায় আবির্ভূত হন। তারপর আওয়ামী লীগ যত অপকর্ম করেছে সেখান থেকে শুভদিক যেটা সেখানে তিনি দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছে। তারা গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে জিয়াউর রহমান তা খুলে দিয়েছে। এই যে পার্থক্যটা একটি ইতিবাচক, ন্যায়ের পক্ষে গণতন্ত্রের পক্ষে। আর তাদের কাজ হচ্ছে শুধু হত্যা। শুধু মানুষ হত্যা নয়, বিরোধী দল হত্যা, গণতন্ত্র হত্যা। স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হলো গণতন্ত্র সেটাকে তারা হত্যা করেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, জিয়া পরিবার বিএনপিকে তারা কিছুই মনে করে না তারা মনে করে যে বিএনপি নাই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা যারা আছেন সমালোচনা করার সময় কিন্তু জিয়া পরিবার ও বিএনপিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল সত্তরের নির্বাচনে। যে কারণে সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল জনগণ তার প্রত্যেকটা সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে দলটি। একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছে কিন্তু নেতৃত্ব দেয়নি তারা এই জন্য অনুশোচনা, তাদের মনের মধ্যে যে একটি প্রভাব কাজ করে সেটি ঢাকার জন্য তারা জিয়া পরিবারের সমালোচনা করে। যুদ্ধের পুরো দেশ প্রস্তুত জনগণ তাদেরকে ভোট দিয়েছে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা কিন্তু তারা নেতৃত্বে ছিলনা। স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন সেনাবাহিনীর একজন মেজর। এজন্যই জিয়া পরিবারের প্রতি, জিয়াউর রহমানের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ এত জ্বালা।

রিজভী বলেন, ৫ আসনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের নেত্রী ২ আসনে পরাজিত হয়েছেন আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাঁচটি আসনেই নির্বাচিত হয়েছেন। এই যে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, এই যে বিপুল জনপ্রিয়তা এটা কখনোই শেখ হাসিনা পছন্দ করতে পারেননি।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র বিজয়ের আন্দোলনের যে চ্যাম্পিয়নশিপ বেগম খালেদা জিয়া অর্জন করেছে সেখানে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং তার নেত্রী প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দেশের জনগণের কাছে গিয়ে যে সকল অঙ্গীকার করেছেন তা রক্ষা করেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর ভঙ্গ করেছেন আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বাসঘাতকতার তকমা তার।

রিজভী ব‌লেন, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন করে সরকারের হাতে নিতে চাচ্ছে। এবং এটার জন্য সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশন সহ অন্যান্যরা বলছেন যে এটার কোন দরকার নাই এটা আলাদা একটা আইন করেন। পার্লামেন্টে এটা আইন করে এটা সরকারের হাতে থাকবে। অর্থাৎ সরকার যদি মনে করে বিএনপিকে আর রাখার দরকার নাই নিবন্ধন বাতিল আর একটি রাজনৈতিক দল দরকার নাই ওর নিবন্ধন বাতিল সরকারের হাতে থাকবে অন্যান্য দলের রেজিস্ট্রেশন একটি অমানবিক চূড়ান্ত বাকশালের পথ অবলম্বন করছে সরকার আর সেটা সমর্থন করছে নির্বাচন কমিশনের সেসব অনুচর সে সমস্ত ক্রীতদাসরা এই সুযোগ করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, নাইনটি ওয়ান ই তে যে ক্ষমতা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২ ধারা ৯১-ই সেটাকে বাতিল করে এবং আইন করে সেটা সরকারের হাতে থাকবে তাহলে বুঝতে পারেন চারিদিকে একক কর্তৃত্ববাদী প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। আমরা যে এখন যে কথাটা বলতে পারছি তখন সে কথাটা বলতে পারব না।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে এ সময় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর