কেমন আছেন আমির খানের ভাগ্নে ইমরান?

কেমন আছেন আমির খানের ভাগ্নে ইমরান?

অনলাইন ডেস্ক

একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করতে না পেরে অবশেষে পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন সুপারস্টার মামা আমির খানের ভাগ্নে ইমরান খান। এজন্য তিনি দীক্ষা নিতে চান পরিচালক করোন জোহরের।

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের খবর অনুযায়ী, বলিউডে মজবুত নেটওয়ার্ক এবং অভিনয়ের ডিগ্রি। দুটোই ছিল তাঁর।

সুপারস্টার মামার হাত ধরে পা রেখেছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। তবুও তিনি ফ্লপ।

১৯৮৩-র ১৩ জানুয়ারি ইমরানের জন্ম আমেরিকার ম্যাডিসনে। তাঁর বাবা অনিল পাল ছিলেন বাঙালি।

অনিল ছিলেন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার। ইমরানের মা নুজহুত খান ছিলেন পেশায় মনোবিদ। পরিচালক প্রযোজক নাসির হুসেনের মেয়ে নুজহুত সম্পর্কে আমির খানের দুঃসম্পর্কের বোন। ইমরানের জন্মের কয়েক মাস পরেই বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর বাবা মায়ের। ছোট্ট ইমরানকে নিয়ে তাঁর মা মুম্বাই ফিরে আসেন। ইমরানকে ভর্তি করা হয় বম্বে স্কটিশ স্কুলে। কিন্তু মায়ের সঙ্গেও বেশি দিন থাকা হলো না ইমরানের।

news24bd.tv

ভারতে আসার কয়েক দিন পরেই বিয়ে করলেন নুজহুত। ইমরানকে তখন পাঠানো হলো বোর্ডিং স্কুলে। বার বার শহর এবং স্কুল পরিবর্তন হওয়ায় তাঁর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছিল, পরে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন ইমরান।

শৈশবে ইমরানের তোতলানোর সমস্যা ছিল। বোর্ডিং স্কুলে থাকার পরে তাঁর এই সমস্যাগুলো ধীরে ধীরে চলে যায়। কিন্তু লেখাপড়ায় আগ্রহ কোনওদিন ফিরে আসেনি। ভারতে পড়াশোনার পাট শেষ করে ইমরান আমেরিকায় চলে যান, তাঁর বাবার কাছে।

আমেরিকায় নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ফিল্ম মেকিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় অবন্তিকা মালিকের। অবন্তিকার মা ছিলেন বহুজাতিক টেলিভিশন চ্যানেলের সিইও।

news24bd.tv

ইমরান-অবন্তিকার আলাপ প্রেমে পরিবর্তিত হতে সময় নেয়নি। দু’জনে আমেরিকায় লিভ ইনও করতেন।

নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির কোর্স শেষ করার পরে আমেরিকা থেকে ভারতে ফিরে আসেন ইমরান। ছোটবেলায় তিনি তাঁর মামা আমির খানের ‘জো জিতা ও হি সিকন্দর’ এবং ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবি দু’টিতে অভিনয় করেছিলেন।

তবে পরবর্তী সময়ে ইমরানের ইচ্ছে ছিল পরিচালক হওয়ার। কিন্তু তাঁর সুদর্শন চেহারার জন্য প্রস্তাব আসে নায়ক হওয়ার। সে সময় রণবীর কপূর, শাহিদ কপূরের মতো স্টারকিডরা একে একে পা রাখছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে। সেই স্রোতে গা ভাসালেন ইমরানও।

news24bd.tv

মুম্বাই এসে তিনি অভিনয়ের কোর্সও করেন। এরপর ২০০৮ সালে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ইমরান। তাঁর প্রথম ছবি প্রযোজনা করেন মামা আমির খান। ছবির নাম ‘জানে তু ইয়া জানে না’।

ইমরান খান-জেনেলিয়া ডি’সুজার জুটিতে কলেজপ্রেমের এই ছবি বক্সঅফিসে সুপারহিট হয়েছিল। প্রথম ছবিতে আকাশছোঁয়া সাফল্য ও জনপ্রিয়তা তাঁকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছিল সমসাময়িক অভিনেতাদের তুলনায়।

এরপর ইমরানের দ্বিতীয় ছবি ‘লাক’ এবং তৃতীয় ছবি ‘কিডন্যাপ’ বক্স অফিসে ব্যর্থ বয়। ‘ওয়ান ফিল্ম ওয়ান্ডার’ পরিচয় থেকে বাঁচাতে ইমরানের পাশে এসে দাঁড়ালেন কর্ণ জোহর। তিনি ইমরান ও সোনম কপূরকে নিয়ে বানালেন ‘আই হেট লভ স্টোরিজ’। কিন্তু এই ছবিটিও বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।

স্টার কিড হওয়ার সুবাদেই হয়তো ইমরানের সামনে সুযোগের অভাব হয়নি। ২০১০ সালে তিনি দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে অভিনয় করেন ‘ব্রেক কে বাদ’ ছবিতে। কিন্তু এই ছবিও দর্শকদের মন জয় করতে পারেনি।

ইমরানের ডুবতে থাকা কেরিয়ারের হাল ধরতে আবার এগিয়ে এলেন আমির খান। ২০১১-এ আমিরের ছবি ‘ডেলহি বেলি’-তে অভিনয় করলেন ইমরান। তবে দর্শকদের একাংশের পছন্দ হলেও বেশির ভাগ দর্শক এর থেকে মুখ ফিরিয়েই ছিলেন।

এরপর যশরাজ ফিল্মসের ছবি ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহন’-এ অভিনয় করেন ইমরান। নায়িকা ছিলেন ক্যাটরিনা কাইফ। কিন্তু এই ছবিও তাঁর কেরিয়ারে সাফল্যের বাতাস বয়ে আনতে পারেনি।

একের পর এক বড় প্রযোজক, পরিচালক, নায়িকা পাওয়ার পরেও ইমরান বলিউডে ভালো অভিনেতা হিসেবে কোনও দাগ কাটতে পারেননি। এরপর তিনি নিজের ছক ভাঙবেন বলে ঠিক করেন।  

২০১১ সালে তিনি অভিনয় করেন বিশাল ভরদ্বাজের ছবি ‘মটরু কী বিজলী মণ্ডোলা’-তে। এই ছবিতে হরিয়ানভি কথ্যরীতিতে তিনি সংলাপ বলেন। কিন্তু তাঁর চেহারার সঙ্গে সেই সংলাপের কায়দা কোনওভাবেই মেলেনি। ফলে দর্শকদের কাছে এ বারও তিনি ব্রাত্য হয়েই থাকলেন।

এরপর ‘বম্বে টকিজ’, ‘ওয়ন্স আপন এ টাইম ইন মুম্বই দোবারা’, ‘গোরি তেরা প্যায়ার মেঁ’— ইমরানের সব ছবি পর পর ব্যর্থ হয়। ২০১৫ সালে মুক্তি পায় এখনও অবধি তাঁর শেষ ছবি ‘কাট্টি বাট্টি’। কিন্তু এটাও চরম ব্যর্থ।

সাত বছর টানা সুযোগ পেয়েও ইমরান নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি বলিউডে। এক সময় আমির খানের ছায়াও সরে যায় তাঁর মাথার উপর থেকে। ফলে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইমরানের ব্যর্থতা।

কেরিয়ারে ব্যর্থতা প্রথমে ছাপ ফেলেনি ইমরানের ব্যক্তিগত জীবনে। আট বছর প্রেম চলার পরে ২০১১-য় তিনি বিয়ে করেন অবন্তিকা মালিককে। তিন বছর পরে জন্ম হয় তাঁদের মেয়ে, ইমারা মালিক খানের।

সন্তান হওয়ার পরে সমস্যা দেখা দেয় ইমরানের দাম্পত্যে। গুঞ্জন, অর্থের প্রয়োজনে নাকি অবন্তিকাকে হাত পাততে হত তাঁর বাবা মায়ের কাছে। শেষ অবধি মেয়েকে নিয়ে একটা সময় তিনি ইমরানকে ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন বাবা মায়ের কাছে।

মেয়ের জন্মের পরে ইমরান বলেছিলেন, তিনি অভিনয় জীবন থেকে সাময়িক অবসর নিচ্ছেন। কারণ পরিবারকে সময় দিতে চান। কিন্তু সেই ‘সাময়িক পর্ব’ যে এত দীর্ঘায়ত হবে, ভাবতে পারেননি তিনি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর