বাংলাদেশের বন্ধুর বিদায়

বাংলাদেশের বন্ধুর বিদায়

লাকমিনা জেসমিন সোমা ও চণ্দ্রাণী চন্দ্রা

উনিশশো একাত্তর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাংলাদেশের মানুষ। তিন মাস পর প্রতিবেশী ভারতের রাজ্যসভায় ৩৬ বয়সী এক তরুণ সদস্য দাঁড়িয়ে বললেন- ‘বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারকে ভারতের সমর্থন দেয়া হোক। ’ সেই থেকে -সেই তরুণ- প্রণব মুখার্জি  বাংলাদেশের বন্ধু।

news24bd.tv

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধূকে হত্যার পর তার দুই কন্যা যখন দিল্লিতে ছিলেন, কার্যত তাঁদের অভিভাবকের ভুমিকায় ছিলেন প্রণব মুখার্জি। তার এ বাংলাদেশ প্রীতির কারণ হয়তো এটাই যে, তিনি নড়াইলের জামাই। নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামের  অমরেন্দ্র ঘোষের মেয়ে শুভ্রা মুখোপাধ্যায়কে জীবন সঙ্গী করেছিলেন। রাষ্ট্রীয় সফরে এসে ভোলেননি সেই শশুরালয়ে যেতে।

news24bd.tv

প্রনব মুখার্জীর শেষ পরিচয় তিনি ভারতের ১৩ তম এবং প্রথম বাঙ্গালি রাষ্ট্রপতি । কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন সাধারণ কলেজ শিক্ষক হিসেবে।   কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন। তবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতি করেই কেটেছে জীবনের ছয় দশক। ছিলেন ইন্দিরাগান্ধীর ঘনিষ্ঠজন। অর্থ ও প্রতিরক্ষার মত  গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বও পালন করেছেন। তবে বহুবার সম্ভাবনা দেখা দিলেও হতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। সেই আক্ষেপ তার ছিল। শেষ পর্যন্ত  ২০১২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

news24bd.tv

প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতির জন্ম ১৯৩৫ সালের ১১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার কীর্ণাহার শহরের কাছে মিরাটি গ্রামে। তার বাবার নাম কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় যিনি ১৯২০ সাল থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। মায়ের নাম রাজলক্ষী দেবী।

শত ব্যস্ততার মধ্যেও লিখতেন প্রণব। সাম্প্রতিক কালে লেখা ‘ দ্যা কোয়ালিশন ইয়ার’ বইটি ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেই ঝড় তোলে।

তার রাজকপালে জুটেছে বিচিত্র সম্মান। ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট অফ ল’ ডিগ্রিসহ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার-বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা পান প্রণব মুখার্জি। দেশের প্রতি অবদানের জন্য তাকে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ ও শ্রেষ্ঠ সাংসদ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৮৪ সালে বৃটেনের ইউরোমানি পত্রিকার একটি সমীক্ষায় তিনি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অর্থমন্ত্রীর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হন।

news24bd.tv

গত বছর স্ত্রী বিয়োগ ঘটে তার। এক বছর যেতে না যেতেই  ৮৪ বছর বয়সে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায়, তাঁকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়। অবশেষে আজ সোমবার (৩১ আগস্ট) বিকেলের দিকে না ফেরার দেশে পারি জমান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর