মাত্র বিশ দিনে কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ

মাত্র বিশ দিনে কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের বাম্পার আহরণ হয়েছে। ছাড়িয়েছে রাজস্ব আয়ের রেকর্ড। বৃদ্ধি পেয়েছে সব ধরনের মাছের উৎপাদন। গত ১১ আগস্ট কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ শুরু হওয়ার পর বৃদ্ধি পায় উৎপাদন।

গত বছরের তুলনায় এ বছর মাছের রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মাত্র বিশ দিনে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ আহরণ করা হয় প্রায় ১৩৬৬.০৫ মেট্টিক টন। আর রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ২৭২.১৬ লাখ। যা গেল বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

কারণ বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এক পরিসংখ্যানে বলছেন, ২০১৮-১৯সালে বিশ দিনে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে মাছ আহরণ করা হয় প্রায় ১১৭৫.৯৫ মেট্টিক টন। যার রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ২২০.৭৯ লাখ টাকা। এভাবে মাছ উৎপাদন অব্যাহত থাকলে এ বছর রাজস্ব আয় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাঙামাটি বিএফডিসি সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলধারা ও বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। যা দেশের মিঠা পানির মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এ হ্রদ থেকে আহরিত মাছ রপ্তানি করা হয় চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। যার সুফল ভোগ করে এ অঞ্চলের ২২ হাজার মৎস্যজীবী। তাই এ বছর ১ মে থেকে আগস্টের ১০ তারিখ পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তিন মাস যাতে কাপ্তাই হ্রদে মাসের সুষ্ঠু প্রকৃতি প্রজনন হতে পারে। বন্ধকালীন সময় রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ হ্রদে ছাড়া হয় বিপুল
পরিমাণ পোনা মাছ। এসব পোনা বড় হওয়ার পর মাছ শিকার শুরু হয় চলতি বছরের গত ১১ আগস্ট। এতে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে আসে জেলে, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে। তিন মাস বেকার থাকার পর আবারও কর্মস্থান ফিরে পাওয়ায় খুশি শ্রমিকরা। শুধু তাই নয় বন্ধকালীন সময়ে কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রকৃতিক প্রজনন হয়েছে চাহিদার অধিক। তাই উৎপাদনও হচ্ছে বাম্পার। সরকারের রাজস্ব খাতে যেমন আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি দেশে মিঠা পানির মাছের চাহিদাও মিটছে, আর লাভবান হচ্ছে মৎস্যজীবীরা।

এরই মধ্যে জমে উঠেছে মৎস্য ব্যবসাও। এ ব্যাপারে কথা হয় রাঙামাটি ফিসারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. হারুনুর রশিদ ও উদায়ন বড়ুয়ার সাথে।

তারা বলেছেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলে মাছের উপর নিভর্রশীল লাখো মানুষের দরিদ্রতা দূর হতে খুব একটা সময় লাগবে না। তবে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কারণে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ কিছু বাধা গ্রস্থ হচ্ছে।

পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আবারও মাছ আহরণ স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে আসবে।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাঙামাটি জেলা ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার এম. তৌহিদুল ইসলাম (ট্যাজ) বলেছেন, রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বিস্তারের কারণে বাম্পার আহরণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে তার জন্য বিএফডিসির সকল কর্মকর্তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। বন্ধকালীন সময় অবৈধ মাছ নিধনসহ পোনা মাছের রক্ষণাবেক্ষণে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয় তাদের। এ সময়ে হ্রদের মৎস্য সম্পদ তদারকি করার জন্য ৬টি মোবাইল
মনিটরিং সেন্টার ও ৭টি চেকপোস্ট বসানো হয়। যার সুফল এখন মৎস্যজীবীরা ভোগ করছেন। রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে ৬৬টি দেশিও প্রজাতির ও ৬টি বহিরাগত প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। প্রতিবছর রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ থেকে প্রায় ১০ হাজার ৫০০ মেট্টিক টন মাছ আহরিত হয়। যা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এ হ্রদে মাছের প্রকৃতিক প্রজনন ধরে রাখতে বিএফডিসি বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ১ মে দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ কাপ্তাই হ্রদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিন মাসের জন্য হ্রদ হতে সব প্রকার মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ এবং পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ও রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।

এরপর গত ১১ আগস্ট মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

(নিউজ টোয়েন্টিফোর/তৌহিদ)

সম্পর্কিত খবর